Alapon

থানায় জিডি করার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব...


সপ্তাহখানেক পূর্বের ঘটনা। আমার পরিচিত এক ভাই ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলেন। গুলিস্তানে বাসে ওঠার পর তিনি মোবাইলে পরিবারের সাথে কথা বলছিলেন। এমন সময় জানালা দিয়ে তার মোবাইলটা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। মুহুর্তের মধ্যে মোবাইলটি ছোঁ মেরে নিয়ে ছিনতাইকারী কোথায় যে উধাও হয়ে যায়, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সেই ভাই ভাবলেন, এমন করে তো মোবাইল প্রায়ই চুরি হয়। তিনি মোবাইল ছিনতাই বিষয়ে থানায় কোনো ডায়েরি করেননি। কারণ, ভেবেছিলেন ডায়েরি করে আর কী হবে। মোবাইল তো আর পাওয়া যাবে না। এমনকি তিনি ছিনতাই হয়ে যাওয়া ফোনের সাথে সিমও বন্ধ করেননি।

এর তিনদিন পর সেই ছিনতাইকারী সম্ভবত অপর একটি মোবাইল ছিনতাই করে। আর সেই মোবাইলে আমার পরিচিত ভাইয়ের সিম একটিভ করে। সেই মোবাইলের মালিক আবার থানায় জিডি করে। পুলিশ মোবাইলের আএমআই নাম্বার ধরে ট্রাকিং করে দেখে, এই সিম একটিভ। আর এই সিমের মালিক আমার পরিচিত ভাইটি। তারপর পুলিশ তার সাথে যেকোনো ভাবে যোগাযোগ করে এবং বলে, আপনি মোবাইল ছিনতাই করেছেন। অতি স্বত্বর থানায় যোগাযোগ করবেন।

এখন সেই ভাই বিরাট চিন্তায় পড়ে গেছেন! কিন্তু তৎক্ষনাত যদি তিনি একটা জিডি করতেন তাহলে আজকে তাকে এই বিড়ম্বনা পোহাতে হতো না। কারণ, তিনি সেই জিডির কাগজ দেখিয়েই প্রমাণ করতে পারতেন তিনি ছিনতাইকারী নয়, বরং তিনিও ছিনতাইয়ের স্বীকার।

বছরখানেক পূর্বে পত্রিকায় একটা সংবাদ পড়েছিলাম। এক ভদ্রলোক বাইক নিয়ে হাসপাতালে নিকটআত্মিয়কে দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে দেখেন তার বাইকটি নেই, চুরি হয়ে গেছে। তাৎক্ষনিকভাবে তিনি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান। কী করবেন, তার কী করণীয় বুঝে উঠতে পারছিলেন না। এরই মাঝে তার এক বন্ধু বলল, তার পরিচিত কয়েকজন বাইক চোর আছে। পুলিশের সাথে যোগাযোগ না করে চল সেই চোরদের সাথে যোগাযোগ করি এবং চোরাই বাইক যে বাজারে বিক্রি হয় সেখানে খোঁজ করি।

এভাবে দুদিন পেরিয়ে যায়। কিন্তু বাইক আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তৃতীয় দিন সেই ব্যক্তির বাড়িতে পুলিশ উপস্থিত হল। পুলিশ জানায়, গতকাল নারায়নগঞ্জে একটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকারীরা বাইকে করে এসে সেই হত্যাকান্ড ঘটায়। হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাইকটা ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়। আর বাইকের কাগজ ঘেটে এই ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। তখন সেই ব্যক্তি বলে, তিনদিন আগে আমার বাইকটি হারিয়ে যায়। তারপর কে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা তো আমি জানি না। তখন পুলিশ বলে, আপনার যে বাইক হারিয়ে গিয়েছিল তার প্রমাণ কই? জিডির কপি কই?
কিন্তু সেই লোকতো বন্ধুর কথা শুনে জিডি করেননি। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়। এবং এ কারণে তাকে বেশ কিছুদিন জেল খাটতে হয়।

আসুন এবার জিডির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেই।

জিডি কি?

জিডি হলো সাধারণ ডায়েরি (জেনারেল ডায়েরি) বা কোনো বিষয়ে সাধারণ বিবরণ। এই আইনি সহায়তা পেতে একটি বিবরণ লিখিতভাবে থানায় জমা দিতে হয়।

জিডি কেন করবেন?

বিভিন্ন কারণে জিডি করা হয়। যেমন কেউ ভয় বা হুমকি দিলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে থানায় জিডি করা হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, কোনো ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলে জিডি করা যায়। এসবের বাইরেও কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত সনদ, দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলেও জিডি করা যায়। এ ছাড়া কেউ কারও সম্পদের ক্ষতি করলে, প্রাণনাশের হুমকি দিলে, বাসার কেউ হারিয়ে বা পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে জিডি করা জরুরি। কেননা, সন্দেহভাজন কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় বা হারানো কিছুর জন্য জিডি করা হলে ওই ঘটনা ঘটার পর দোষী ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে বা হারানো জিনিস খুঁজে পেতে এবং আইনি সহায়তা নিতে জিডির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করি, জিডি করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন।

পঠিত : ৩৬৭ বার

মন্তব্য: ০