Alapon

নবীজি ﷺ



নবীজি ﷺ
-------------------

নবীজি ﷺ এর উপর দরুদ পড়ে শুরু করি

اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ، إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ


পারস্যের সম্রাট নওশেরওয়াঁ রাজসভার আহবান করেছেন। সভাসদ গন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অপেক্ষা করছেন। নতুন আবার কি অনিয়ম আর অনাচার জনগনের উপর চাপানোর পাঁয়তারা করছেন সম্রাট?

.

সম্রাট সভায় আসলেন। সকলে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বেধে মাথা নুয়ে সম্রাটকে অভিবাদন জানালো। সম্রাট প্রীত হলেন। একটু বিরক্ত বিরক্ত ভাব নিয়ে আছেন তিনি। সম্রাট নওশেরওয়াঁ সবাইকে হাত দিয়ে ইশারা করলেন।

.

ষষ্ঠ শতাব্দীতে পারস্য ছিলো সুপার পাওয়ারের একটি। জুলুম নিপিড়ন নির্যাতনে কুখ্যাত ছিলো এ অঞ্চল গুলোর সম্রাটগণ। সম্রাট নওশেরওয়াঁ বা খশরু ১ম (৫৩১-৫৭৯ খ্রীঃ) তিনি ছিলেন এক ভয়ংকর শাসক।

.

পারস্য সম্রাট রাজস্ব সচিবকে আদেশ করলেন জমির খাজনার নতুন ধার্যকৃত হার সজোরে পাঠ করে শোনাতে। তিনি পাঠ করে শোনানোর পর সম্রাট নওশেরওয়াঁ (খশরু) উপস্থিত সকলকে দুবার জিজ্ঞেস

.

করলেন, "কারো কোন আপত্তি আছে কিনা?" উপস্থিত লোকেরা ভয়ে চুপ ছিলো। দুদিন পর পর নতুন নতুন করের বোঝায় জর্জরিত ছিলো তারা। সম্রাট তৃতীয় বার জিজ্ঞেস করতে গেলে একজন সভাসদ দাঁড়ালেন।

.

তিনি সসম্মানে সম্রাটের সামনে বললেন, "সম্রাটের ইচ্ছা কী এই যে, অস্থাবর সম্পত্তির উপর স্থায়ী ট্যাক্স বসাবেন যা কাল পরিক্রমায় অবিচার ও বেইনসাফীতে পর্যবসিত হবে? এই কথা শুনে সম্রাট তো গেলেন ক্ষেপে।

.

নীতি কথা হওয়া সত্ত্বেও এবং সম্রাট জিজ্ঞেস করায় উত্তর দেয়ার পরেও সম্রাট ক্রোধে চিৎকার করে বললেন, "অভিশপ্ত বেয়াদপ কে তুই? কোথা থেকে এসেছিস?" এবং সবাইকে হুকুম করেন তাকে কলমদানি দিয়ে মারতে।

.

উপস্থিত সচিব ও পরিচালক গন সকলে তাকে ভয়ে কলমদানি দিয়ে পেটাতে শুরু করে এবং সেখানেই তিনি মারা যান। এরপর সকলে সম্রাটকে খুশি করতে বলে, "সম্রাট আপনি যে কর ধার্য করেছেন তা খুবি যুক্তিযুক্ত হয়েছে।"

.

এই ছিলো তখনকার সময়ে সুপার পাওয়ার পারসিক সাম্রাজ্যের অবস্থা। লোকেরা দুঃখ কষ্ট আর নির্যাতনে এভাবেই ছিলো জর্জরিত। গনগনে অত্যাচারের সূর্য ছিলো তাদের মাথার উপর, ছিলোনা কোন মানবতার গাছের ছায়া।

.

তৎকালীন সুপার পাওয়ার রোম সাম্রাজ্যেও ছিলো একি অবস্থা। সম্রাট কাইজারকে উপাস্য মনে করত তারা। তরবারির তীক্ষ্ম ধার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতো রাজার সব মতবাদ। ট্যাক্সের বোঝা এতই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল যে

.

কদিন পর পর বিপ্লব আর আন্দোলন চলতো। ৫৩৩ খ্রীস্টাব্দে এমনই এক দাংগায় রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী কন্সটানটিনোপলে প্রায় ৩০ হাজার লোক নিহত হয়। সিরিয়া ছিলো বায়যেন্টাইন বা রোম সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় প্রদেশ।

.

সবচেয়ে সম্প্রাসারনশীল ও সাম্রাজ্যলিপ্সু মানসিকতার শিকার। সিরিয়াবাসীরা ছিলো ঋণে জর্জরিত। ঋণ পরিশোধের জন্য শিশু সন্তানদের বিক্রয় করে দিতো। জুলুম, নির্যাতন, অধিকার হরণ ও কৃতদাসে পরিনত করা হত তাদের।

.

এরকম অনাচারে ভরে উঠেছিলো তখনকার সময়ের সারা দুনিয়া। রাজা ছিলো নিষ্ঠুর খোদার রূপে আর জনগন দুহাত পেতে ছিলো একটু মুক্তির আনন্দে অবগাহনের জন্য। কিন্তু মুক্তির দূত যে দেখা দেয় না।

.

ভারতবর্ষে ছিলো জাত পাতের ব্যবধান আর সমাজে ছিলো নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতম আচরণ। গোটা ইউরোপ জুড়ে ছিলো অন্ধকার অমাবশ্যা। Robert Brifault বলেন, পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে

.

বিরাজ করছিলো অরাজকতা আর অন্ধকার অমাবশ্যা। আর এই অন্ধকার গভীর থেকে গভীরতম হচ্ছিলো। বিখ্যাত লেখক H G Wells তার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, "পশ্চিম ইউরোপে ছিলনা কোন শৃঙ্খলা আর না

.

ছিল কোন একতা। বায়যেন্টাইন সাম্রাজ্য আর পারস্য সাম্রাজ্য একে অপরের সীমানা অন্যায় ভাবে দখল ও একে অপরকে ধ্বংশ করার জন্য পণ করে বসেছিলো। ভারতবর্ষ ছিলো বিচ্ছিন্নতা ও বিপর্যয়ের শিকার। "

.

অত্যাচারী শাসকের জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাধারণ জনগণ বুকে পাথর বেধে অপেক্ষা করছিলো একজন মুক্তির দূতের জন্য। কিন্তু সে সময় সবজায়গায় ধর্মীয় বিপর্যয় ঘটেছিলো মারাত্মক ভাবে।

.

শিরকের মতো গুনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলো দুনিয়ার প্রায় সকলে। ধর্মীয় শিক্ষায় চলে এসেছিলো বিকৃতি। ধর্মীয় পুরোহিত আর শাসকেরা নিজেদের সুবিধামতো ধর্মীয় আচার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতো।

.

( চলবে ইন শা আল্লাহ)

.

|| সীরাহ সিরিজ || পর্বঃ(১) ||
লেখাঃ সিফাত সাদেকীন চৌধুরী (রৌদ্র)
--------------------------------------▪️

পঠিত : ৬৯৭ বার

মন্তব্য: ০