Alapon

ঈমানের হাকীকত



ঈমানের হাকীকত
সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আবদুর রহীম
আধুনিক প্রকাশনী

মাস্টারপিস একটা বই নিয়ে কোনো রিভিউ না দেখে কিঞ্চিত অবাক হলাম। থাকলে আমি লিখতাম না। এরচে চমৎকার পাঠপ্রতিক্রিয়া এটি ডিজার্ভ করে। যারা ভালো রিভিউ লিখতে পারেন গ্রুপে একটা রিভিউ দিবেন।
.
বেশ কয়েকটি দিক বইটিকে একইসাথে সুখপাঠ্য ও শিক্ষণীয় করে তুলেছে। অনুবাদ মাশাল্লাহ! সিরিয়াস্লি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনুবাদ বই মনেই হয়নি।
.
লেখক প্রচুর উদাহরণ টেনেছেন। প্রতিটি উদাহরণ বাস্তবিক লেগেছে, চমৎকার সব বর্ণনা। আর অবশ্যই আপনাকে ভাবাবে। ইমান-কুফরের বর্ডারলাইন সম্পর্কে উদাসীন কারো জন্যে বইটা অবশ্যপাঠ্য। একটা রিমাইন্ডার।
.
ঈমানের হাকীকত ৫ টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। যার প্রতিটি অধ্যায় শেষ করে চিন্তার খোরাক পাওয়া যায়, লেখক এভাবেই সবগুলোর ইন্ডিং টেনেছেন। এ রকম একটা প্যারা কোট করলে বুঝতে পারবেন।

' আল্লাহদ্রোহী শক্তি যা কিছু কিনতে চায়, আপনারা তাই তাদের কাছে বিক্রি করেন, তা অপেক্ষা বড় দুর্নীতি আর কি হতে পারে? একবার বিক্রি করা জিনিসকে পুনরায় অন্যের কাছে বিক্রি করা আইনত এবং নীতিগতভাবে অপরাধ। দুনিয়ায় এজন্য আপনার বিরুদ্ধে প্রবঞ্চনার মামলা হতে পারে। আপনারা কি মনে করেন আল্লাহর আদালত এ বিষয়ে মামলা চলবে না? '
.
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের ইমান-আকিদা নিয়ে সচেতন থাকা। প্রতিদিন পেপার-পত্রিকা কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার কবলে এইসব জায়গায় ধরা খাচ্ছে লোকজন। অধিকাংশের কথা, আমিতো সম্ভবত মানি কিন্তু.... কিন্তু ঠিক কিইইইইনা হুজুররা ভালো বলতে পারবেন। তেমন জ্ঞান নেই। আর এই জায়গাটায় লেখকের আপত্তি -
'ঈমান যদি বাস্তবিকই কারো প্রিয় বস্তু হয়, তবে এ কাজে (প্রতিদিন) একটা ঘন্টা ব্যয় করা তার পক্ষে এতটুকুও কঠিন কাজ নয়।'
.
ইমান-কুফরের স্পষ্ট সীমানা থাকা সত্ত্বেও আমরা কুফরের সাথে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়ি। কখনো জীবিকার তাগিদে, কখনোবা ক্ষমতার মোহে কিংবা নফসের অনুসরণ করে। মানুষগুলো নিজেকে ইমানদার দাবি করে অথচ শেকড় সম্পর্কে বেশিরভাগ উদাসীন। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের পার্থক্যইবা তাহলে কী থাকলো? ১৩ নম্বর পৃষ্ঠার শেষ প্যারায় এভাবে জবাব দেয়া হয়েছে, ' আমি প্রথমেই বলেছি যে, মুসলমান ও কাফেরের মধ্যে ইমান ও আমল- জ্ঞান ও কাজ ছাড়া আর কোনোই প্রভেদ নেই '। এইটা স্পেশালি তাদের জন্যে বলা যারা মনে করেন ইমানদারের ঘরে জন্ম নিলেই চিরকাল ইমানদার থাকার 'গ্যারান্টি' পেয়ে গেছেন যেমনটা ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে জন্মিলে ব্রাক্ষ্মণ কিংবা নীচু সমাজে হলে সে হবে নীচ!
.
কালেমা তাইয়্যেবার ভিতরে কী এমন আছে যার দ্বারা জগতের বিশাল দুটি দলের গতিপথ চেঞ্জ হয়ে যায়? শুধু পড়লেই হবে না-কি সেই অনুযায়ি আমল করতে হবে, কি বলছি সেইটা যদি না বুঝি তবে পড়ার তাৎপর্য কী রইল? এসবের সংক্ষিপ্ত অথচ সাববীল উত্তর পেয়ে যাবেন।
.
' একটি আম গাছের শিকড় মাটির কত নীচে গেঁথে রয়েছে, ওপরের দিকে কতখানি উচ্চ হয়ে উঠেছে, তার কত ডাল-পালা চারদিকে বিস্তৃত হয়েছে, আর তাতে কত ভালো ফল ফলছে।....এর বীজ খুব শক্তিশালী ছিলো বলেই এত বড় একটা গাছ হবার তার পূর্ণ হক ছিল।
.
আর সেই 'হক' এত সত্য ছিল যে, যখন এটা নিজের 'হক'-এর দাবী করলো, তখন মাটি, পানি, বায়ু, দিনের গরম, রাতের ঠান্ডা সব জিনিসই তার দাবী মেনে নিয়েছে। ' ধাক্কা দেয় না?
.
অনেকেই বলেন আমরাও 'কালেমায়ে তাইয়্যেবা'কে মানি; কিন্তু তবু কোন্ কারণে আমাদের উন্নতি হয় না? আর যে কারণে কাফেরগণ কালেমায়ে খাবীসাকে (কালেমা তাইয়্যেবার বিপরীত) বিশ্বাস করে তারাই বা কোন্ কারণে এত শক্তিমান ও উন্নত হচ্ছে?
.
ইন্টারেস্টিং টপিক। শীতের তীব্রতায় পা দুটো বিছানায় তুলে মনযোগ দিলাম। পড়তে পড়তে মনে হলো নাহ্.. সত্যিই আমি মানি? মানার সংজ্ঞাটা কী? আর আর অবিশ্বাসী যেমন পশ্চিমারা খুউউব সুখে আছে সেইটা সোশ্যাল মিডিয়া আর বলিউডেই দেখা মিলে, বাস্তবে? প্রতিনিয়ত সেলিব্রিটিদের আত্মহত্যার খবর কিংবা প্রাচুর্যের শহরে বেড়ে উড়া মানুষগুলো সুখ খুঁজতে মরিয়া হতো না।
.
একটা অপরাধবোধ, সুখ না পাওয়া চাকচিক্যে বেশ পীড়া দেয়। কে যেন বলছিলো, ` সবাই বিক্রি হয়ে যায়, কেউ দুনিয়ার কাছে আর কেউ তার রবের কাছে ` কাধে হাত রেখে কেউ মনে করিয়ে দেয়...
আল্লাহদ্রোহী শক্তি যা কিছু কিনতে চায়, আপনারা তাই তাদের কাছে বিক্রি করেন, তা অপেক্ষা বড় দুর্নীতি আর কি হতে পারে? একবার বিক্রি করা জিনিসকে পুনরায় অন্যের কাছে বিক্রি করা আইনত এবং নীতিগতভাবে অপরাধ। দুনিয়ায় এজন্য আপনার বিরুদ্ধে প্রবঞ্চনার মামলা হতে পারে। আপনারা কি মনে করেন আল্লাহর আদালত এ বিষয়ে মামলা চলবে না?


-কালেক্টটেড

পঠিত : ১২০১ বার

মন্তব্য: ০