Alapon

বিখ্যাত লেখকদের বিচিত্র অভ্যাস.....

'লেখক' শব্দটা আমার বুকে হৃৎস্পন্দন তৈরী করতো সবসময়। লেখালেখি নিয়ে লেখকদের কিছু বিচিত্র অভ্যাস জানতে চেষ্টা করতাম ঢের। কেউ আছেন বিছানাতে না বসলে লিখতে বা পড়তে পারতেন না। মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েন, ইংরেজ সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েল, অভিনেতা ও নির্মাতা উডি এলেন, ফরাসি লেখক মার্সেল প্রুস্ত— এনারা বিছানাতে শুয়ে শুয়ে অথবা সোফায় হেলান দিয়ে লেখালেখি ও পড়ার কাজ করতেন। মার্কিন লেখক ট্রুম্যান ক্যাপোট প্যারিস রিভিউয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘I am a completely horizontal author. I can’t think unless I’m lying down, either in bed or stretched on a couch and with a cigarette and coffee handy.’


অন্যদিকে মার্কিন কথাশিল্পী আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ব্রিটিশ কথাসাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স, ভার্জিনিয়া উলফ এবং ফিলিপ রথের মতো বড় বড় লেখকেরা টেবিলে দাঁড়িয়ে লিখতেন। ভ্লাদিমির নবোকভ আবার ইনডেক্স কার্ডে লিখে একটা লম্বা বাক্সের ভেতর রেখে দিতেন। তিনি ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে ব্রিস্টল কার্ড রেখে দিতেন, কোনো আইডিয়া মাথায় এলেই টুকে রাখতেন। ফরাসি লেখক আলেক্সান্দ্রে দুমো আরো একধাপ এগিয়ে ছিলেন। তিনি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের লেখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কালি ব্যবহার করতেন— উপন্যাসের জন্য নীল, প্রবন্ধের জন্য গোলাপি, হলুদ কবিতার জন্য।


‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ খ্যাত মার্কিন রোমাঞ্চকর উপন্যাস লেখক ড্যান ব্রাউন মনে করতেন Hanging upside down অর্থাৎ বাদুর-ঝুলা করে ঝুলে থাকলে বা নিচে মাথা দিয়ে উপরে পা তুলে ব্যায়াম করলে রাইটার্স ব্লক কেটে যাবে। তিনি নিজে এই থেরাপি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।


লেখার ক্ষেত্রে আরেকটা প্রশ্ন হলো, আপনি কোন দিকে মুখ করে লিখবেন? জানালা দিয়ে খোলা বাইরের দিকে মুখ করে অধিকাংশ লেখক লিখতে বসেন। তবে ব্লু অ্যাঞ্জেল-এর লেখক ফ্রানসিন প্রজ মনে করেন দেয়ালের দিকে মুখে করে লিখলে সুবিধা হয়।তিনি জানালা থেকে দূরে থাকেন যাতে তাকে কেউ দেখতে না পায়। এছাড়াও স্বামীর কালো রঙের টি শার্ট ও পাজামা প্যান্ট পরে তিনি লিখতে বসেন।


নগ্ন হয়ে কেউ কি লিখেছেন কখনো? ডেডলাইনের ভেতর লেখা সম্পন্ন করতে ভিক্টর হুগোকে এই কাজ করতে হয়েছে। পৃথিবীর সব লেখককে একটা কমন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়— ডেডলাইন মেনে লেখা। কিন্তু দেখা গেল লেখার টেবিল থেকে বাইরের কাজে হুটহাট বের হওয়ায়, বাসায় আগত অতিথিদের সময় দেওয়ার কারণে অনেক সময় ডেডলাইন মিস হয়ে যায়।


এক্ষেত্রে ভালো একটা থিওরি অ্যাপ্লাই করেছেন এই ফরাসি সাহিত্যিক। তিনি তাঁর সহকারীকে বলেন, শরীরের সব পোশাক খুলে নিতে, যাতে করে শরীরে কাপড় না থাকার কারণে হুটহাট তিনি ঘর থেকে বের হতে না পারেন। এরপর ভিক্টর হুগো দিনের পর দিন নগ্ন অবস্থায় লিখে যেতেন। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়লে কেবল একটা চাদর জড়িয়ে নিতেন শরীরে।


নগ্ন-থেরাপি কাজে লাগিয়েছেন বিখ্যাত লেখক ফ্রাৎন্স কাফকাও। তবে কারণটা ভিক্টর হুগোর থেকে আলাদা। মনটা ফ্রেস রাখার জন্য জানালার সামনে নগ্ন অবস্থায় কাফকা ব্যায়াম করতেন। কথাসাহিত্যিক জেন অস্টিন টেবিলে বসে লেখার মুড তৈরি করতেই কাটিয়ে দিতেন আধাঘণ্টা, এই সময়টা তিনি কাগজে হিজিবিজি করে যা মনে আসত লিখতে থাকতেন।


কফি বা চা-পানের অভ্যাস তাই লেখকদের ক্ষেত্রে মোটামুটিভাবে অনিবার্য হিসেবে ধরা যায়। তাই বলে দিনে ৫০ কাপ কফি? বিখ্যাত ফরাসি কথাসাহিত্যিক বালযাক দিনে ৫০ কাফ কফি পান করতেন! তাঁর আরেক স্বদেশি লেখক-দার্শনিক ভলতেয়ারও নাকি দিনে ৪০ কাপ কফি খেতেন।

পঠিত : ৬৪৭ বার

মন্তব্য: ০