Alapon

"আমাকে একজন আল্লাহভীরু মা দাও, আমি তোমাদের একটি আল্লাহভীরু জাতি উপহার দেবো।"

কয়েক মাস আগে এক মহিলা সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ হয়েছিলো আমার। ইতোপূর্বে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকগুলো সমাবেশে বক্তব্য দেয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও মহিলাদের সমাবেশে আলোচনা করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। ফলে বক্তব্য দিতে যাওয়ার পূর্বে আমি বেশ ইতস্তত অনুভব করছিলাম। আলোচনার প্রস্তুতিও নিতে হয়েছিলো একটু ভিন্ন আঙ্গিকে।


অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হয়ে মহিলাদের স্বতঃস্ফূর্ত বাঁধভাঙা উপস্থিতি দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে যেতে বাধ্য হলাম। ইসলামের আলোচনা শোনার জন্য এতো নারীর আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে মন আশান্বিত হয়ে উঠলো- আগামীর দিন সম্ভাবনার।


অধিকাংশ নারীই ছিলেন আমার মায়ের সমবয়সী। তাঁদের সামনে সন্তানসুলভ বিনীত ভঙ্গিতে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। সমাজ পরিবর্তনে তাঁরাই যে প্রকারান্তরে মূখ্য অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেন, তা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বললাম।


সেদিনের মহিলা সমাবেশ আমার অন্তঃকরণে এক নতুন ভাবনার উদয় ঘটিয়েছে। আমরা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। সেই পরিবর্তন আন্দোলনের পরিকল্পনায় নারীরা কতটা অংশজুড়ে থাকে? অথচ একটি সমাজ পরিবর্তনে নারীরা যে কতটা পরোক্ষ এবং নীরব অবদান রেখে চলেন; তা স্থির মানসে ভেবে দেখার অবকাশ খুব কমই পাই আমরা।


নেপোলিয়ন বলেছিলেন, "আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।" আমি নেপোলিয়নের কথাকে একটু ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছি, "আমাকে একজন পরহেজগার এবং আল্লাহভীরু মা দাও, আমি তোমাদের একটি আল্লাহভীরু জাতি উপহার দেবো।" সত্যিকারার্থেই, এমন মায়ের হাতে নির্মিত সন্তানরা কখনও ধর্ষক হয়ে বেড়ে উঠবে না।


ইতিহাসের অনেক বড় বড় দা'য়ী ইলাল্লাহ কিংবা বাতাসের গতিপথ বদলে দেয়া ইসলামী ব্যক্তিত্বদের জীবনী ঘাটতে গিয়ে দেখেছি, তাঁদের জীবনের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন মূলত তাদের মহীয়সী মায়েরা। গভীর মমতায় তাঁরা সন্তানদের ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষায় দীক্ষিত করেছেন। ইসলামের রঙ্গে রঞ্জিত হতে শিখিয়েছেন।


আব্দুল কাদির জিলানী (রহ.) এর ছোটবেলার সেই ঐতিহাসিক ঘটনাটির দিকে দৃষ্টিপাত করে দেখুন না! মায়ের শেখানো 'কোনো পরিস্থিতিতেই মিথ্যে না বলা'র শিক্ষা এতোটা প্রভাববিস্তারী হয়েছিলো যে, স্বয়ং ডাকাত দলের সর্দার বদলে গিয়ে আল্লাহর অলিতে পরিণত হয়েছিলেন! ইমাম মালিক (রহ.) এর মা একাকী নিঃসম্বল জীবনে একমাত্র সন্তানকে আগলে আগলে যুগের ইমামে পরিণত করেছিলেন।


সেই দৃশ্যটি কল্পনা করুন, যখন ইমামে আযম আবু হানিফা (রহ.) কে তাঁর মায়ের সামনে নির্যাতন করা হচ্ছিলো যেন মা তাঁকে মাথা নত করতে আদেশ দেন। কিন্তু ইমামে আযমের মা সন্তানের উপর এই বিভৎস নির্যাতন দেখে চোখের পানি ফেলতেন আর বলতেন, "খবরদার! জালিমের কাছে মাথা নত করবি না।" এমন মায়ের সন্তানই তো ইমামে আযম হবে!


আমরা যে সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, তাঁর যোগ্য জনগোষ্ঠী সরবরাহের জন্য এ রকম যুগস্রষ্টা কিছু মায়ের আজ বড্ড প্রয়োজন। যাদের গর্ভ থেকে জন্ম নিবে নতুন দিনের মুহাম্মদ বিন কাসিম, তারিক বিন যিয়াদ, সালাহউদ্দিন আইয়ূবী।


যাঁরা যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা.) এর মায়ের মতো কঠোর অভ্যাসে সন্তানকে অভ্যস্ত করে তুলবে। আসমা বিনতে আবু বকরের মতো রণসাজে সজ্জিত করে সন্তানকে পাঠাবে যুদ্ধের ময়দানে। আর সেই সন্তানরা নারীর বাহুর পরিবর্তে স্বপ্ন দেখবে শাহাদাতের।

পঠিত : ৫২১ বার

মন্তব্য: ০