Alapon

মৃত্যু একটি রিমাইন্ডা!


ভাবতে পারেন! যে প্রিয় মানুষটি দশ-মিনিট আগেও আপনার সাথে হেসেখেলে সময় পার করছিল,সে মানুষটি আর দশ-মিনিট পরেই যে পৃথিবীর আলো-বাতাস গায়ে মাখানোর সুযোগ পাবে না তা কিন্তু আপনি জানেন না। না আপনি নিজে জানতেন মানুষটি আর দশ-মিনিট পরেই হারাবে তাঁর শেষ নিশ্বাস, না সে মানুষটি নিজে জানতো তাকে আর দশ-মিনিট পরেই পাড়ি জমাতে হবে অসীম মহাকাশের অন্তে। প্রতিটি মৃত্যুই আমাদের জন্য একেকটা রিমাইন্ডার। অথচ! বরাবরই আমরা সে ব্যাপারে বেপরোয়া বেখেয়াল।
.
ক্ষনিকের এই বিষাদে ভরা পৃথিবীটা আসলেই যে ক্ষনস্থায়ী সে ব্যাপারে আমরা এত জানার পরেও কেন যেন সে বিষয়ে তৎপর নই। আমরা মৃত্যুকে স্মরণ করি ঠিকই কিন্তু মৃত্যুর মত চরম বাস্তবতাকে এত সহজে গ্রহন করতে রাজি না। আমরা জানি আমাদের মৃত্যু সুনিশ্চিত,শুধু আমাদের মৃত্যু বলে কথা না ,সমস্ত সৃষ্টির মৃত্যুই যে সুনিশ্চিত সে ব্যাপারে আমাদের কারোরই দ্বিমত নেই। কঠিন ব্যাপার হচ্ছে আমাদের এই জানা শুধুমাত্র জানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কখনো তা নিয়ে ভাবিনা।
.
আসলে, আমরা দুনিয়ার এই ক্ষনস্থায়ী চাকচিক্যের মায়াজালে এমন ভাবে আবদ্ধ আমাদের মস্তিষ্ক ভাবতেই চাইনা যে মৃত্যু বলে আমাদের জন্য একটা বাস্তবতা আছে। যে বাস্তবতা ক্ষনস্থায়ী নয়, যে বাস্তবতা চিরস্থায়ী। মানুষ যদি চোখ বন্ধ করে একবার নিজেকে সেই চিরস্থায়ী আবাসস্থলের বাসিন্দাদের একজনের কাতারে দাড় করাতো।তাহলে, দুনিয়াটা তাঁর কাছে নিতান্তই অর্থহীন মনে হতো।
.
আমরা যখন মৃত্যুকে একপাশে রেখে দুনিয়া নিয়ে ভাবতে যায় জীবনকে গোছাতে যায় তখনই আসলে দুনিয়া এবং আখেরাত দুটোই আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। মৃত্যুকে সাথে রেখে যদি আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনা গুলো একটু পরিবর্তন করি তাহলে আমাদের জীবন কখনোই এত বিষাদে ভরা বিরক্তিতে রূপ নিতো না। আমাদের জীবন তখনই সুন্দর হতো যখন মৃত্যুকে স্মরণ রেখে আমরা আমাদের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতাম।
.
পাপের সমুদ্রে নির্বিঘ্নে সাঁতার-কাটার উত্তেজক মূহুর্তেও ভাবতে পারিনা হয়তো এখনই আমাকে সমুদ্রের অতল গহ্বরে মরে ডুবে তলিয়ে যেতে হতে পারে। আমাদের ভাবনারা বারংবার পালিয়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে মৃত্যু থেকে অথচ,মৃত্যু আমাদের দু-চোখের দূরত্বের চেয়েও অধিক নিকটে অবস্থানরত।
.
"পাপ করছি তওবা করবো ভালো হয়ে যাবো"। কি এক অদ্ভুত সমীকরণে আবদ্ধ করে ফেলেছি নিজেদের।যেন মৃত্যু আমাদের কথা দিয়ে রেখেছে, তুমি পাপ করো তওবা করে ভালো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকবো। পাপ করা থেকে তওবা করা পর্যন্ত এগোনোর সময়টার মাঝামাঝি যদি ভাবতাম আমাদের মৃত্যু সেখানটায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তাহলে,তওবা করার আগে অন্তত দশবার চিন্তা করতাম পাপ কাজটা করবো কিনা। একমাত্র মৃত্যুকে দূরে ঠেলে দিতে গিয়েই পাপের বোঝা মাথায় নিতে হয়। অহরহ অবাধ্যতার দোলনায় দোল খেতে হয়। দিন শেষে দুনিয়া আখেরাত দুটোই হাতছাড়া হয়ে যায়।
.
নেইতো রবের অবাধ্যতায় কোনো শান্তি নেই। এমন নয় যে,আমরা কেউ-ই পাপ মুক্ত। মোটামুটি সবার-ই টুকটাক খেয়ালে-বেখেয়ালে কারণে অকারণে পাপে লিপ্ত হওয়ার নোংরা অবিজ্ঞতা গুলো রয়েছে। কেউ যদি বলে আমি কোনদিন পাপে লিপ্ত হইনি,তাহলে সেই সবচেয়ে বড় মিথ্যাবাদী। একটি পাপকাজ হয়ে যাওয়ার পরে অনুভূতিরা ক্যামন করে হৃদয়কে অনুশোচনার আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে একাকার করে দেয়, সেই অবিজ্ঞতা সবার-ই জানা। এমন ক্যানো হয় জানেন! আপনি মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দেয়া অসংখ্য অগণিত নেয়ামত ভোগ করার পরে আবার তাঁর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়ে ,তাঁর দেয়া মনেই প্রশান্তি খুঁজে পাবেন কীভাবে? আপনি হয়তো সবার সামনে ভালো থাকার মিথ্যা চেষ্টা করবেন ঠিকই, কিন্তু অনুশোচনারা আপনার হৃদয়কে কখনোই প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে দিবে না।দিন শেষে আপনি অসুখীদের দলেই নিজেকে সমর্পণ করবেন।
.
মৃত্যুভয় মানুষকে পাপ মুক্ত রেখে প্রশান্তি আর সুখসাচ্ছন্দ্যে শুধুমাত্র দুনিয়ার জীবনকেই সুন্দর করে না, মৃত্যুভয় আখেরাতটাকেও পরিপাটি ও সুন্দর করে গুছিয়ে দেয়। আর,যদি মৃত্যুই না থাকতো তাহলে,জীবন কখনোই এত সুন্দর হতো না। মৃত্যু আছে বলেই জীবনের এত মূল্য জীবন এত সুন্দর। মৃত্যু না থাকলে জীবন হতো বিরক্তিকর বিষাদে ভরা। জীবনের আরেক নাম হতো বিরক্তি। তাই মৃত্যুও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম বড় একটি নেয়ামত।
.
তাই মৃত্যুকে একটি রিমাইন্ডার হিসেবে নিন।মৃত্যুকে শুধুমাত্র জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে ভাবনার মধ্যেও একটু জায়গা করে দিয়েই দেখুন না একটাবার, জীবনটা কত সুন্দর হয় দেখবেন বুঝবেন তখন,আর বলবেন সাগর ভাইয়ের কথাটা আসলে খারাপ ছিল না । মৃত্যুকে মস্তিষ্ক থেকে দূরে ঠেলে নয় বরং, মৃত্যুকে পথের সঙ্গী করে পথ চলুন দেখবেন, সে পথ আপনাকে জান্নাত পর্যন্তই নিয়ে গেছে। আমরা সবায়'তো একটুকরো জান্নাতের-ই প্রত্যাশি তাই'না। মুমিনদের জান্নাতে যাওয়ার একটা মাত্র বাধা আর,তা হলো মৃত্যু। এখন বলেন তো মৃত্যুকে আর দূরে ঠেলে দিতে মন চাইবে?

পঠিত : ৭৬৮ বার

মন্তব্য: ০