Alapon

দুঃখজনকভাবে এক চোরের দেশে আমাদের অবস্থান!



বাংলাদেশের বড় প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা, বাজেট, ডিজাইন, এক্সিকিউটিভ টাইমলাইন সবগুলো হয় কিছু খামখেয়ালি লোকদের দ্বারা। তারা আবেগে ভেসে ভেসে চলে। রাজনৈতিক নেতারা কোনো পরামর্শ বা তাদের ইচ্ছের কথা শেয়ার করলে এদেশের পরিকল্পনাবিদেরা সেটাকেই আসমানী নির্দেশ ভেবে নেয়।

প্রতিটি প্রকল্পের শুরুতে বাজেট যা থাকে শেষ করতে গিয়ে সেই বাজেট চার থেকে পাঁচ গুন বেড়ে যায়। যবে শেষ করার কথা সে সময়ে প্রকল্পের কাজ অর্ধেকও শেষ হয় না। সবচেয়ে দুঃখজক ব্যাপার হলো প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর জানা যায় নকশা ভুল। অথবা জানা যায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আরেকটি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন, মগবাজার ফ্লাইওভার, পদ্মা সেতুসহ প্রতিটি প্রকল্পে এই ধরনের সমস্যা হয়েছে। জনগণের ভোগান্তি হয়েছে, বাজেট বেড়েছে কয়েকগুণ। এখন শুনছি মেট্রোরেল প্রকল্পের জন্য ভেঙে ফেলা হবে বাংলাদেশের আইকনিক ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন।

এই স্থাপনার সাথে জড়িত আছে বুয়েট। সদ্য প্রতিষ্ঠিত বুয়েটের প্রথম মেগাপ্রজেক্ট ছিলো কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। আমেরিকান আর্কিটেকচার রবার্ট বাঘির তত্ত্বাবধানে বুয়েটের তৎকালীন বাঙালি শিক্ষকরা কমলাপুর স্টেশনের ডিজাইন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। একইসাথে এই টিম শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরও তৈরি করে।

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলমান। এর শেষ স্টেশনটি পড়েছে কমলাপুর স্টেশনের ঠিক সামনে।

প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। একদিন হুট করে হাসিনা বললো এটা উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত হবে। এটা কি সে ভেবেচিন্তে বলেছে নাকি মুখ ফসকে বলেছে সেটা জানা যায় নি।

তবে পরিকল্পনাবিদেরা মেট্রোরেলকে ১.১৬ কিলোমিটার বর্ধিত করে কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল এতদিন। এখন দেখা যাচ্ছে এটা একটা সমস্যা তৈরি করছে। মেট্রোরেল এবং এর সব স্টেশনই হবে উড়ালপথে, মাটি থেকে কমবেশি ১৩ মিটার ওপরে। এর ফলে শেষ স্টেশনটি বিদ্যমান কমলাপুর রেলস্টেশন ভবনের সামনের অংশ ঢেকে দেবে।

ফলে এখানে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। দুটি রেল স্টেশন মুখোমুখি অবস্থান করবে। যাত্রী ম্যানেজমেন্টে ঝামেলা হবে। রেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে বলেছিল মেট্রোরেলের রুট পরিবর্তন করা হোক।

কিন্তু মেট্রোরেলের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) রুট পরিবর্তন করতে চাইছিল না। তাদের বক্তব্য হলো, রুট পরিবর্তন করলে দু–তিন কিলোমিটার পথ বেড়ে যাবে। এতে খরচও বাড়বে।

এখন শোনা যাচ্ছে কমলাপুর স্টেশনটিই ১৩০ মিটার উত্তরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়েছে। বর্তমান স্টেশনটি ভেঙে উত্তরে শাহজাহানপুরে নতুন রেল স্টেশন স্থাপন করা হবে।

রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বলেন, মেট্রোরেলের কারণে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়ে গেলে এর সৌন্দর্য আর থাকবে না। তাই সরিয়ে নেওয়াই উত্তম বিকল্প। পাঁচ বছরের মধ্যেই কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ হতে ১০ বছর লাগতে পারে।

আর অন্যদিকে ডিএমটিসিএলের এমডি ও সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ এন সিদ্দিক খামখেয়ালি হয়ে এমনভাবে বললেন, যেন তার কোনো দায় নেই। তিনি বলেন, মেট্রোরেল পরিকল্পনামতোই হবে। এখন স্টেশন সরানোর বিষয়টি একান্তই রেলের বিষয়। যেভাবে করলে ভালো হয়, রেল সেভাবেই পরিকল্পনা করবে।

যেখানে রেল কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি প্রতিবাদ করার কথা সেখানে তারা আপোষে রাজি হয়ে যাচ্ছে কমলাপুরের মতো বিশাল স্টেশন ১৩০ মিটার সরিয়ে নিতে। এর কারণ এর ফলে বিশাল বাজেট হবে। তাদের পকেট ভারি হবে। তাদের কী! টাকা দেবে জনগণ! শেখ হাসিনারও কিছু আসে যায় না। আর আমলাদের তো পোয়াবারো।

দুঃখজনকভাবে এক চোরের দেশে আমাদের অবস্থান!

পঠিত : ৪৮৪ বার

মন্তব্য: ০