Alapon

আদর্শ সংগঠকের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য

আদর্শ সংগঠকের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য

লেখক: এ. কে. এম. নাজির আহমদ

১. সংগঠকের কর্তব্য কর্মীদের মাঝে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা।

যেইসব বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা প্রয়োজন:
ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, আন্দোলনের অপরিহার্যতা, সংঘবদ্ধ জীবনের অপরিহার্যতা, নির্বাচন পদ্ধতি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি, সংশোধন পদ্ধতি, মাক্কী যুগ ও মাদানী যুগের কর্মপদ্ধতির পার্থক্য এবং ব্যর্থতা ও সফলতার ধারণা।

২. সংগঠকের কর্তব্য কর্মীদেরকে কর্ম-চঞ্চল রাখা।

(ক) সঠিক ব্যক্তিদেরকে নিয়ে নির্বাহী টীম গঠন করা।
(খ) টীমের প্রত্যেক সদস্যকে তাঁর করণীয় ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়া।
(গ) কর্মীদেরকে তাদের কাজ বুঝিয়ে দেয়া।
(ঘ) দাওয়াত সম্প্রসারণ ও নতুন কর্মী গঠনই যে তাদের স্থায়ী কাজ তা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়া।

৩. সংগঠকের কর্তব্য উন্নত মানে মিটিং পরিচালনা করা।

(ক) মিটিংয়ের তারিখ, সময় ও স্থান সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া।
(খ) রিমাইন্ডার দেয়া।
(গ) সংগঠক নিজে সঠিক সময়ে মিটিং স্থলে হাজির থাকা।
(ঘ) সুনির্দিষ্ট কার্যসূচী থাকা।
(ঙ) ভালো প্রস্তুতি নিয়ে মিটিংয়ে আসা।
(চ) সঠিক সময়ে মিটিং শুরু করা।
(ছ) ঘোষণা দিয়ে মিটিং শুরু করা।
(জ) ঘোষণা দিয়ে মিটিং শেষ করা।

৪. সংগঠকের কর্তব্য ফোরামের দিকে লক্ষ্য রেখে বক্তৃতা করা।

(ক) পরামর্শ সভা, কর্মী সভা,শিক্ষা শিবির, সুধী সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, দাওয়াতী জনসভা এবং রাজনৈতিক জনসভার সম্বোধন ও অ্যাপ্রোচের পার্থক্য সম্পর্কে সজাগ থাকা।

(খ) বক্তৃতা - ভাষণ শ্রোতাদের মাঝে আবেগ সৃষ্টিকারী হওয়ার চেয়ে চিন্তা ও বুদ্ধি বৃত্তিকে আলোড়িত করার মতো হওয়া।

৫. সংগঠকের কর্তব্য পরিশীলিতভাবে কথাবার্তা বলা।

(ক) কথা হওয়া উচিত ইতিবাচক, নেতিবাচক নয়।
(খ) অশোভন কথা, বাহুল্য কথা ও উসকানীমূলক কথা বলা উচিত নয়।
(গ) রাগত স্বরে কথা বলা, রূক্ষ ভাষায় কথা বলা, বাঁকা তেড়া কথা বলা এবং আত্ম-সম্মানবোধে আঘাত হেনে কথা বলা উচিত নয়।

৬. সংগঠকের কর্তব্য কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে কাজ করিয়ে নেয়া।

(ক) ধমক দিয়ে নয়, রাগ দেখিয়ে নয়, Persuasion (যুক্তি ও উপদেশসহকারে বুঝানো) এবং Motivation (উদ্বুদ্ধকরণ) এর মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়া।

(খ) কাজের গুরুত্ব ও কর্মীর দায়িত্ব সম্পর্কে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকা।

৭. সংগঠকের কর্তব্য সর্বাবস্থায় সহনশীল থাকা।

(ক) বিরোধী শক্তির সমালোচনা ও অপপ্রচারে বিচলিত না হওয়া।
(খ) কর্মীদের প্রশ্ন ও সমালোচনায় বিব্রত বোধ না করা কিংবা বিরক্ত না হওয়া।

৮. সংগঠকের কর্তব্য কর্মীদের সান্ত্বনার স্থলে পরিণত হওয়া।

(ক) সংগঠকের সান্নিধ্যে এসে সান্ত্বনা লাভ কর্মীদের অন্যতম মনস্তাত্বিক চাহিদা।
(খ) মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনা প্রয়োজন।
(গ) ফোরামে সংগঠক কর্মীর সমালোচনা না করা।

৯. সংগঠকের কর্তব্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(ক) টি. এস. টি. সি., সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সুধী-সমাবেশ, জনসভা ইত্যাদির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে।
(খ) দারসুল কুরআন, দারসুল হাদীস ও বক্তৃতা হতে হবে বিশেষ বিশেষ কনসেপ্ট পরিস্কার করার জন্য।

১০. সংগঠকের কর্তব্য খিয়ানাত থেকে বেঁচে থাকা।

(ক) টাকা-পয়সা।
(খ) আসবাব।
(গ) ফাইলপত্র।
(ঘ) টেলিফোন।
(ঙ) গাড়ি।
(চ) জনশক্তি সবাই আমানত।
তাঁকে হতে হবে খাঁটি আমানতদার।

১১. সংগঠকের কর্তব্য সতর্ক থাকা যাতে তাঁর প্রতিটি কথা, সিদ্ধান্ত, নির্দেশ ও আচরণ হয় ন্যায়ানুগ।

১২. সংগঠকের কর্তব্য কিছু কাল পরপর কাজের পর্যালোচনা করা।

অগ্রগতির মাপকাঠি -
(ক) সমাজের চালিকাশক্তি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব বলয় বৃদ্ধি পেতে থাকা।
(খ) কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকা।
(গ) কর্মীদের মান বৃদ্ধি পেতে থাকা।
(ঘ) আয় বৃদ্ধি পেতে থাকা।
(ঙ) ইউনিট সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকা।

* পৃথিবী। সেপ্টেম্বর ২০০৪ থেকে।

পঠিত : ২১৫৪ বার

মন্তব্য: ০