Alapon

আপনি-আমি ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছি না তো...?


তখন আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর শাসনকাল চলছিল। আমিরুল মুমিনীন আল্লাহর রাসূলের বিশিষ্ট সাহাবী আবু মুসা আল আশআরী রা.-কে সেনাপতি করে খুযুকিস্তানে সৈন্যবাহিনী পাঠালেন। খুব সম্ভবত খুযুকিস্তান ছিল তৎকালীণ পারস্যের কোনো একটি এলাকা।

খুযুকিস্তানের একটি শহরের নাম ছিল ‘জুনদিসাবুর’। অভিযানের এক পর্যায়ে আবু মুসা আল আশআরী রা. জুনদিসাবুর শহরটি অবরোধ করেন। কিন্তু জুনদিসাবুর শহরের প্রতিরক্ষা দেয়াল ছিল খুবই মজবুত, তাই বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পরও সেই দেয়াল টপকানো সম্ভব হয়নি। দেয়াল টপকানোতে ব্যর্থ হয়ে আবু মুসা আল আশআরী রা. গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করেন। কিন্তু তাতেও আশানরূপ কোনো ফল পাওয়া গেল না।

কিন্তু তারপরও সেনাপতি আবু মুসা আল আশআরী রা. অবরোধ বৃদ্ধি করলেন। এভাবে অবরোধ প্রায় মাসাধিকাল চলতে থাকল। এক সকালে সেনাপতি আবু মুসা আল আশআরী রা. দেখতে পেলেন জুনদিসাবুর শহরের প্রধান দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। এই দৃশ্য দেখে তিনি প্রথমে কিছুটা অবাক হয়ে গেলেন। তারপর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সৈন্য নিয়ে দ্রুত শহরে প্রবেশ করলেন। শহরে প্রবেশ করে তিনি আরও হতবাক হয়ে গেলেন। শহরের মানুষের মধ্যে কোনো বিকার নেই, যুদ্ধের কোনো টেনশন নেই, প্রত্যেকেই স্ব স্ব কাজ নিয়ে ব্যস্ত!

আবু মুসা আল আশআরী রা. তাঁর সৈন্যদের নিয়ে শহরের আরও ভিতরে প্রবেশ করলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি একজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কী ব্যাপার, আমরা তোমাদের শহর অবরোধ করেছি, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কোনো বিকার নেই, কারও মাঝে দুঃশ্চিন্তার লেশ মাত্রও নেই! ঘটনা কী?
তখন সেই লোক অবাক হয়ে বলল, ‘আমরা দুশ্চিন্তা করতে যাবো কেন, আমরা তো মুসলিম বাহিনীর সাথে জিজিয়া করের বিনিময়ে সন্ধি চুক্তি করেছি।’

এ কথা শোনার পর সেনাপতি আবু মুসা আল আশআরী রা. ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন। তাদের সাথে জিজিয়া করের বিনিময়ে সন্ধি চুক্তি করা হয়েছে, অথচ তিনি কিছুই জানেন না। এও আদৌ সম্ভব?
তখন খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মুসলিমদের মধ্য থেকে একজন দাস গোপনে জুনদিসাবুর শহরের প্রধানের সাথে জিজিয়া করের চুক্তি করে ফেলেছে। তখন আবু মুসা আল আশআরী রা. এই চুক্তি মানতে অস্বীকার করেন। কিন্তু জুনদিসাবুর শহরের লোকেরা বলতে থাকে, ‘কে দাস কে স্বাধীন আমরা তা জানি না। আমরা তো তোমাদের সাথে জিজিয়া করের বিনিময়ে চুক্তি করেছি! আর তোমাদের মুসলিমদের মধ্য থেকেই একজন এই চুক্তি করেছে।’

তখন বিষয়টি সমাধান করার জন্য সেনাপতি আবু মুসা আল আশআরী রা. মদীনায় আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর কাছে দূত পাঠালেন। আমিরুল মুমিনীন পুরো ঘটনা শুনে বললেন, ‘মুসলিমদের দাসও মুসলিম। সে যাদের নিরাপত্তা দিয়েছে সকল মুসলিমই যেন তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে।’

সুবহানআল্লাহ! আমিরুল মুমিনীন কত সুন্দরভাবেই না বলেছেন, ‘মুসলিমের দাসও মুসলিম।’ আর সেই মুসলিম যখন কথা দিয়েছে, চুক্তি করেছে এবং নিরাপত্তা প্রদান করেছে, তখন সকল মুসলিমই তাদের নিরাপত্তা প্রদান করেছে। তখন একজন মুসলিমের ওয়াদা যেন ভঙ্গ না হয়, সে জন্য আমিরুল মুমিনীনসহ গোটা উম্মাহ চিন্তিত ছিলেন। আর সেই উম্মাহর অংশ হয়ে আমরা এখন কথায় কথায় মিথ্যা বলি। ওয়াদা করলে অতি সহজেই ভঙ্গ করি। আমাদের এই ভুলগুলো যে বাস্তবিকঅর্থে ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে, তা আর আমরা অনুধাবন করতে পারি না! আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

পঠিত : ৩৭৩ বার

মন্তব্য: ০