Alapon

আড়ালে তার সূর্য হাসে



মনের আকাশে পেরেশানির ঘুটঘুটে কালো সব মেঘমালা জমাট বেঁধেছে খুব। স্বজন হারানোর কঠিন কষাঘাত হৃদয়তন্ত্রীকে ক্ষত-বিক্ষত করে দিচ্ছে আমার। সেই আঘাতের যে ক্ষত তা আমাকে জীবন সম্পর্কে, আল্লাহর রহম সম্পর্কে হতাশ করে দিচ্ছে। আমি ডকডক করে গিলে ফেলতেছি কয়েক ঢোক হতাশা...
.
সেই হতাশা আমাকে হাঁকিয়ে নিচ্ছে অবিশ্বাসের চোরাগলিতে। আর সেই গলিতে নিরাশারা আমার ওপর চালাচ্ছে চোরাগোপ্তা হামলা।
.
বিশ্বাসের ভিত্তি বিস্তৃত ও মজবুত হওয়ার জন্য ( ঈমানের) যে প্রশস্ত পথের প্রয়োজন ছিলো তা যেনো আমি হতাশার ভয়াল থাবায় হারিয়ে ফেলতেছি। সেই থাবায় আমার ঈমানের মজবুত দূর্ঘটা মিসমার হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে! অথচ আমি তো নিজেকে মুসলিম মনে করি। পুরোদমে আল্লাহতেও আছে বিশ্বাস। মোটামুটি প্র্যাটিসও করতে চেষ্টা করি দ্বিনুল ইসলাম। আমি জানি আমার জন্য বিপুল বিপদেও ভেঙ্গে পড়া উচিত নয়। তবুও আমি বিগড়ে যাই। হতাশা-নিরাশার মরন ছোবলে আহত হয় আমার ঈমানি আত্মা! ক্ষত-বিক্ষত হয় বিশ্বাসের বলয়ে গড়ে ওঠা আমার এই ছোট্ট হৃদয় কানন!
.
আমি আমার এই হৃদয়ে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা যাতনার যতোসব বহ্নি শিখা নেভাতে চাই। আমি উপোয়-উপাদান খুঁজে-ফিরি। পেয়ে যাই আমি। জন্মের আগে পিতৃ বিয়োগ, নিষ্পাপ শৈশবের সেই ছোট্ট বয়সটাতে মা'কে হারানোর মতো কষ্টের কোলে গড়ে ওঠা আমার প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের দুঃসহ সব যাতনার কথা মনে পড়ে যায়। আমি দেখতে পাই আমার প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম কি এক অপরিসীম ধৈর্য্য আর ঈমান-ইস্তিক্কামাতের পরিচয় দিয়েছেন সকরুণ সেই বেদনা বুকে ধারণ করেও।
.
আমার মন ছুটে চলে এবার কুরআনুল কারিমের আয়াতে আয়াতে। আয়াতের আহ্বানগুলো চির বহমান হয়ে আমায় ডেকে ডেকে বলে যায় হতাশার বন্দরে না ভিড়তে। আমাকে বলে দেয় তুমি তো মু'মিন, বিশ্বাসের বলে বলিয়ান তুমি, তোমার উচিত ধৈর্য্য হারা না হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা করা [১]। স্বলাত-স্ববরের মাধ্যমে তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া [২]। আমাকে আরো বলা হয় আল্লাহর অপার অনুগ্রহ হতে নিরাশ না হতে [৩]। আলকুরআনের আয়াতগুলো আমাকে উদার কন্ঠে ডেকে ডেকে আরো বলে, তোমার রব্ব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ''তোমাকে জান-মাল, ভয়-ক্ষুধা ও ফল-ফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করবে, তুমি যদি ধৈর্যের অধিকারী হও তাহলে তোমার জন্য সুসংবাদ "[৪]! আমি চুপসে যাই। শোকর করি। আমার রব্ব যেহেতু আমার পরীক্ষা নিতে চায় তাহলে আর করণীয় কী! পরীক্ষা দিয়েই যাই। ধৈর্যের সাথে। ঈমানের ওপর অবিচলতার সাথে। যদিও আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, মাঝেমধ্যে। আমি শরীয়ত বিরোধী কথাবার্তাও বলে ফেলি অধৈর্য হয়ে কখনো কখনো। তবুও আমার পালনেওয়ালা যেহুতু ক্ষমাশীল তাই ক্ষমা চেয়ে যাই। আমি জানি আমার রব্ব ক্ষমাশীল। পরম দয়ালু। তিনি অবশ্যই ক্ষমা করবেন আমাকে।[৫] সত্যিই আমার মালিক আমাকে এটাই বলেছেন। আলকুরআনে। এভাবেই।
.
আলহাদিসের ইবারাতগুলো আমাকে বলে দেয়, শতো বিপদ-মুসিবতেও যেনো আমি ভড়কে না যাই! আমি ঈমানের নূরের রওশনীতে যেনো আরো অধিক পরিমাণে হই আলোকিত। হাদিসের কিতাবের কুচকুচে কালো কালো অক্ষরের ইবারাতগুলো আমাকে বলে --জানো, তোমার প্রাণাধিক প্রিয়নবী (সাsmile জানিয়েছেন যে, ‘‘আল্লাহ তোমার ভালো চান। তাই বলে তোমাকে দুঃখে ফেলেছেন, তোমার মঙ্গল চান বলেই তোমাকে কষ্টে ফেলেন [৬]।"
.
প্রিয়জন বিয়োগের বেদনায় যখন আমি মুষড়ে পড়ে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন আল-হাদিসের আরো একটা ইবরাত জ্বলজ্বল করে ফুটে উঠে সামনে আমার। আমি দেখতে পাই আমার আল্লাহ যেনো আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলেন, '‘যখন আমার বান্দাহ'র কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হয় এবং সে তাতে ধৈর্য ও সংযম অবলম্বন করে, তখন জান্নাত ছাড়া তাকে দেওয়ার মতো আর কোনো প্রতিদান আমার কাছে থাকে না [৭]।
.
.হতাশা-নিরাশার আঁধারে, বিপদ-বেদনার বালুচরে আমার দ্বীন আমাকে এভাবেই সাহস যোগায় শক্তি যোগায়! আর ক্ষমা করে আমাকে আমার কৃত ভুল-বিচ্যুতিগুলোর জন্যে .....
.

...….........
রেফারেন্স:
[১]আল-কুরআন: ১৪/১১
[২]আল-কুরআন: ০২/১৫৩
[৩] আল-কুরআন: ৩৯/৫৩
[৪] আল-কুরআন: ০২/১৫৫
[৫] আলকুরআন: ৩৯/৫৩
[৬] সহীহ্ বুখারি, হাদিস নং: ৫৬৪৫
[৭] সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৪২৪
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂


||আড়ালে তার সূর্য হাসে||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৫৮৬ বার

মন্তব্য: ২

২০২০-১২-০৩ ১৮:৩৩

User
অর্ণব হাসান রিফাত

মাশআল্লাহ। এটা কি কপি করা যাবে?

submit

২০২০-১২-০৫ ১১:৫৭

User
রেদওয়ান রাওয়াহা :

credit dien

submit