Alapon

মওদুদী তো নিজেকে পীর বলে দাবি করেননি তাহলে কেন তার বিরুদ্ধে বিষোদগার ------সাহাদত হোসেন খান

মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী সম্পর্কে আলোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই। আমি আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করি। এ বিষয়ে আমার জ্ঞান আছে। ইসলাম সম্পর্কে আমি খুব কম জানি। মাওলানা মওদুদী সম্পর্কে তো নয়ই। আমি শুধু তার প্রশংসা করতে পারি। তার সৃষ্টি সম্ভারের সামনে বিনয়াবনত হতে পারি। তার সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা অনুভব করতে পারি। সাধ জাগে যদি মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী হতে পারতাম! ২০/২৫ বছর আগে তার কলম বিক্রি হয়েছে ২৬ লাখ টাকায়। আর আমার? আমার কলম কেউ কিনবে না। কেন কিনবে? আমি আর মাওলানা মওদুদী কি সমান?

১৯৯০ সালের কথা। তখন আমি বেকার। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর তাফসির মাহফিলে যাওয়ায় দৈনিক খবর থেকে আমার চাকরি চলে যায়। শিবপুরে আমাদের পাশের গ্রাম বাড়ৈগাঁওয়ের জহির ভাই আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি আমাকে ‘খেলাফত ও মুলকিয়াত’ শিরোনামে মাওলানা মওদুদীর লেখা একটি বই পড়তে দেন। আমি বইটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলি। বইটি ফেরত দেয়ার সময় জহির ভাই মুচকি হাসছিলেন। তিনি ভাবছিলেন, আমি হয়তো বইটির সমালোচনা করবো। আমাকে নীরব থাকতে দেখে তিনিই শুরু করলেন। বললেন, এ বইটির জন্য মাওলানা মওদুদীর সমালোচনা করা হয়।

আমি পাঠক হিসেবে আমার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে বললাম, তিনি তো কোনো মিথ্যা কথা লিখেননি। নতুন কথা লিখেননি। যা সত্যি তাই লিখেছেন। দুঃখজনক হলেও এটাই আমাদের ইতিহাস। মাওলানা মওদুদীর দোষ কি? ডিগ্রিতে ইসলামের ইতিহাসে আমি একই কথা পড়েছি। ঐতিহাসিক আহমদ বালাজুরি, পিকে হিট্টি, উইলিয়াম মুর, স্যার সৈয়দ আমির আলী, কে. আলী অবিকল একই কথা লিখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে কেউ আঙ্গুল না তুললে মাওলানা মওদুদীকে দোষারোপ করা হবে কেন? তিনি তো অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু লিখেননি। প্রতিটি বাক্যে তার শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম বোধ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি যদি ইসলামের ক্ষতি করে থাকেন তাহলে ভালো করার লোক কে?

আজো আমি একথা বলতে চাই। যারা তার সমালোচনা করেন তারা কোন যোগ্যতার বলে করেন আমি বুঝতে অক্ষম। দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি মাওলানা মওদুদী সাহাবীদের সমালোচনা করেছেন। তিনি তাদের সত্যের মাপকাঠি বলে মনে করেন না। কিন্তু কোথায় তিনি সাহাবীদের খাটো করেছেন অথবা তাদের সমালোচনা করেছেন তার কোনো উল্লেখ কোথাও দেখিনি। লিখতে গেলে ভুল হতে পারে। ভুল ব্যাখ্যা করা হতে পারে। পৃথিবীর প্রতিটি লেখকের ক্ষেত্রে একথা সত্যি।

মাওলানা মওদুদী ভুলের উর্ধ্বে নন। মানুষ হিসেবে তার ভুল হওয়া স্বাভাবিক। কারো মানবীয় ভুল নিয়ে মাতামাতি করা কখনো সঠিক হতে পারে না। যারা তার সমালোচনা করেন খুঁজতে গেলে দেখা যাবে তাদেরও ভুল আছে। ভুল ধরা এবং অন্যকে ভুল প্রমাণ করার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। কাজ করা হলো মূল কথা। মাওলানা মওদুদী কাজ করেছেন। ইসলামের খেদমত করছেন। যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য মাওলানা মওদুদীর সমালোচনা করা হয় তার সমালোচকরা সেসব বিষয় নিয়ে লিখুন।

দেখি তারা কি লিখেন। তাদের প্রতি আমি উষ্ট্রের যুদ্ধ, সিফফিনের যুদ্ধ, নাহরাওয়ানের যুদ্ধ এবং হযরত উসমান (রা.) ও হযরত আলী (রা.)এর হত্যাকান্ড নিয়ে লেখার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানাচ্ছি। তাদেরকেও একই কথা লিখতে হবে। হয়তো দেখা যাবে তারা মাওলানা মওদুদীর লেখা কপি পেস্ট করেছেন। ইসলামের ইতিহাস লিখতে গিয়ে যদি সাহাবীদের সংশ্লিষ্টতা আসে তাহলে তিনি করবেন? তিনি কি পাশ কাটিয়ে যাবেন নাকি গোপন করবেন? একজন ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক হিসেবে তিনি সতর্কতার সঙ্গে ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। লিখতে গিয়ে যদি সত্যি কথা লিখতে হয় তাহলে দোষ হবে কেন? মাওলানা মওদুদী কোথাও অপবাদ দেননি। তিনি ইসলামের শত্রু নন। তিনি ইসলামের শত্রু হলে বন্ধু কে? তিনি প্রমাণ করেছেন যে, ইসলাম হলো একটি বিপ্লবী আদর্শ। ইসলাম হলো একটি আন্দোলনের নাম। তিনি এ সত্যই প্রচার করেছেন। তিনি তো নিজেকে পীর বলে দাবি করেননি। তিনি তার নামে মাজার করতে বলেননি। শিরনি দিতে বলেননি। তিনি কারো কাছ থেকে টাকা পয়সা গ্রহণ করেননি। সারা জীবন জ্ঞান সাধনা করেছেন। কলম চালিয়েছেন। তিনি নিজেকে একজন কলম সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। উপমহাদেশের ৬ জন ইসলামী চিন্তাবিদের একজন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। ১৯৯৭ সালের জুনে আমি ইরানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩৫টি দেশের অতিথিরা যোগদান করেন। আলোচনায় উপমহাদেশের মাত্র দুটি নাম উচ্চারিত হয়। একটি দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল এবং আরেকটি মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী। আমি মাওলানা মওদুদীর নাম শুনে কান খাড়া করি। মনে মনে বলতে থাকি, দেশে যার এত সমালোচনা শুনি আর আজ এখানে তো তারই নাম শুনছি। তার সমালোচকদের নাম তো কেউ মুখে আনছে না।

আমি কখনো মাওলানা মওদুদীর সমালোচকদের সঠিক বলবো না। তাদের সমর্থন করবো না। করতে পারি না। বিশেষজ্ঞ না হলেও এতটুকু বোধ আছে যে, মাওলানা মওদুদীর সঙ্গে তাদের তুলনা চলে না। তিনি ইসলামকে সমৃদ্ধ করেছেন। ইসলামকে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি তো নিজের কোনো মতবাদ প্রচার করেননি। ইসলামকে তার যথাযথ অবয়ব ও প্রেক্ষিতে মানুষের কাছে উপস্থাপন করার জন্য কলম ধরেছেন। তবে এ কাজ করতে গিয়ে তিনি শত্রুতা অর্জন করেছেন। ‘ইহুদি’ হিসেবে গালি খাচ্ছেন। গালি খেলেও কেউ ইতিহাসে ছোট হয়ে যায় না। ইতিহাস থেকে মুছে যায় না। আমাদের নবী (সা.) তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

পঠিত : ৫৪০ বার

মন্তব্য: ০