Alapon

ওয়েইসির বাংলা অভিযান কি মুসলিমদের জন্য সুখকর হবে?



হায়দরাবাদে ওয়েইসি এক জনপ্রিয় নাম। ভারতের মুসলিমরা বহুদিন পর তাদের নিজেদের জন্য একজন শক্তিশালী নেতা পেতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ওয়েইসি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু তার এই উত্থান কি আসলে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপকারী হবে? নাকি তা বিজেপির জন্য শাপে বর হবে?

ভারতের হায়দরাবাদ পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপির মেরুকরণের কৌশলে ঘি ঢালল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম)। গত নির্বাচনে ৪২টি ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে ৪২টিতেই জিতেছিল তারা। এ বার বেশি সংখ্যক (৫১টি)ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছে তারা। ফলাফলও আগের তুলনায় কিঞ্চিৎ ভালো। ৪৪টি ওয়ার্ড জিতেছে ওয়েইসির দল। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বেশি সংখ্যক আসনে দাঁড়িয়ে তার দল প্রকৃতপক্ষে বিজেপি-বিরোধী ভোট কেটেছে। ফলে কমে গিয়েছে কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) আসন। কপাল পুড়েছে কংগ্রেস-সহ অন্য দলগুলোরও।

নির্বাচনে তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) পেয়েছে ৫৫টি আসন। তারাই এখন একক বৃহত্তম দল। তবে তাদের আসন ২০১৬ সালের তুলনায় ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০১৬ সালে তাদের আসন ছিল ৮৮টি। এবার বিজেপি জিতেছে ৪৮টি ওয়ার্ডে। তারা মূলত টিআরএসের আসনগুলোই জয় করেছে।

শুক্রবার পুরসভা ভোটের ফলাফলের পরে ওয়েইসি জানিয়েছেন, পরের লক্ষ্য বাংলা। তামিলনাড়ু, কর্নাটক এবং আসামেও লড়াইয়ের কথা বলেছেন তিনি। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, ওয়েইসির দাঁড়ানোয় বিজেপি-র লাভ হচ্ছে এটা ঠিকই। বিজেপি-বিরোধী মুসলমান ভোটে তার দল থাবা বসাচ্ছে। ফলে বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ায় আখেরে সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে বিজেপি। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলা হচ্ছে, মোদি জমানায় হিন্দুদের সংখ্যাগুরুর রাজনীতি যত বাড়ছে, অন্য দিকে ততটাই সংহত হচ্ছে মুসলমান ভোট। সে ক্ষেত্রে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর উপর আস্থা কমছে মুসলমানদের। তারা চাইছে মুসলমানদের জন্য পুরোদস্তুর একটি দল। সম্প্রতি বিহারে ও শুক্রবার হায়দরাবাদে সেই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়েছে এমআইএম। তাদের প্রচারের সারবস্তুই থাকছে শুধু মাত্র মুসলমানদের উন্নতি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এক দিকে যতটাই বাড়বে হিন্দুত্বের দাপট, মেরুকরণের ফলে ততটাই বাড়বে ওয়েইসির মতো নেতার প্রভাব।

বিহারের নির্বাচন প্রমাণ করে দিয়েছে কংগ্রেসের হাত থেকে মুসলমান ভোট ব্যাংক খসে যাচ্ছে। কংগ্রেস বা এসপি-র মতো দলের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজের অভিযোগ, তারা ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ তৈরি করছে বটে, কিন্তু হাতে-কলমে মুসলিমদের অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করার জন্য কোনো পদক্ষেপ করছে না। ওয়েইসির মতো নেতারা এই জায়গাটিতে ঘা দিয়ে বলছেন, কংগ্রেসের মতো দলগুলো ধর্মনিরপেক্ষতার নামে নিজেদের ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করেছে। ইউপিএ জমানায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সাচার কমিটি গঠন এবং তার রিপোর্ট প্রকাশ করলেও তার পরবর্তী সময়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটেনি সংখ্যালঘুদের।

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঠিক একই প্রচারকে যে হাতিয়ার করতে চলেছেন ওয়েইসি, তা জানা গিয়েছে দলীয় সূত্রে। তা কতটা কাজে আসবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। কিন্তু এর ফলে বিজেপি কিছুটা হলেও উপকৃত হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। এখনই নিজের হাতের তাস দেখাতে চাইছেন না এই মুসলিম নেতা। তার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে আমরা কী ভাবে লড়ব, তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তবেই জানানো যাবে।”

এখানে আমার মতে মুসলিমদের জন্য ভালো হবে যদি ওয়েইসি ও মমতা সমঝোতা করে নেয়। আর যদি তা না হয় তবে আশংকা থাকবে ওয়েইসি মমতার ভোট কাটবে। সেক্ষেত্রে বিজেপির জন্য সেটা লাভজনক হবে। মমতা আর ওয়েইসির ভোট ভাগাভাগি যদি বিজেপিকে বাংলায় জিতিয়ে দেয় তবে সেটা হবে মুসলিমদের জন্য চরম বিপর্যয়ের ব্যাপার!

পঠিত : ৫১৪ বার

মন্তব্য: ০