Alapon

সৌদি-তুর্কি সম্পর্ক উন্নয়ন কি সম্ভব...?



শূন্য দশকেও তুরস্কের সঙ্গে সব ধরণের সম্পর্ক উচ্চ মাত্রায় ছিল সৌদি আরবের। কিন্তু যেই না ‘আরব বসন্ত’ জগদ্দল রাজসিংহাসনে আঘাত দিতে শুরু করল, দুই দেশের সম্পর্কেও তার প্রভাব এসে লাগে। আফ্রিকার তিউনিশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়াব্যাপি বিস্তৃত এই গণআন্দোলনে তুরস্ক আর সৌদির অবস্থান ছিল বিপরীত মেরুতে।

পরে মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে উৎখাত, জাতিসংঘের অস্থায়ী সদস্য পদে তুরস্কের প্রার্থিতার বিরোধিতা, কাতারে অবরোধ ও দখলের চেষ্টা এবং সর্বশেষ জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড যে পেরেক ঠুকে দিয়ে গেছিল তা দুই দেশকে দূর থেকে আরও দূরে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু সবক্ষেত্রেই কৌশলী এরদোয়ানের নিকট পরাজয় আর হোয়াইট হাউজ থেকে তার অকৃত্রিম বন্ধুর বিদায় একগুয়ে ও হঠকারী এমবিএসকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে।

সম্প্রতি কাতারের উপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান। তার আগে নভেম্বরে টেলিফোনে আলাপ করেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তার কয়েকদিন পরেই নাইজারে ও‌আইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে তুর্কি ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বৈঠকে মিলিত হন। তাদের মুখে ছিল সম্পর্ক উষ্ণ করার আশ্বাস।

এদিকে সৌদির মদদে তিনটি আরব দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল সৌদিও শীঘ্রই স্বীকৃতি দেবে অবৈধ রাষ্ট্রটিকে। কিন্তু সবকিছু বিবেচনায় এখনও সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্কের উন্নতি হবে না বলেই মনে হচ্ছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ এখনও দাবি করেছে- স্বাধীন ফিলিস্তিন না হলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না দেশটি। তাছাড়া রাজপরিবারের এক সদস্যও বাহরাইন সামিটে ইসরায়েলি কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটির প্রতি কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন।

সব সমীকরণ মিলিয়ে মনেই হচ্ছে সৌদি আরব এখন তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার কথা ভাবছে। যদিও তাদের মূল বিরোধ মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখা নিয়ে; কিন্তু অনেক আগেই সৌদির আধিপত্য খর্ব হয়ে গেছে। ফলে দেশটির অস্তিত্ব বজায় রাখতেই নতুন করে ভাবতে হচ্ছে এমবিএসকে। তবে এটা সত্য যে, তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের কোন ধরণের আগ্রহ থাকলেও সেটা আদর্শিক নয়, বরং কেবলই রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা।

ফলে এপথে তুরস্ক কিছুটা ধীরগতিতেই হাটছে। তবে সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার আগ্রহ এরদোয়ানেরও রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এমবিএসকে জামাল খাশোগি ইস্যুতে তুলোধুনো করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করছেন না। সম্ভবত তার ইশারাতেই ইস্তাম্বুলের আদালতে চলমান খাশোগি হত্যা মামলা আগামী মার্চ পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।

কিন্তু এই সম্পর্ক উন্নয়নের পেছনে বড় বাধা হবে এ দুইদেশের আদর্শিক অবস্থান। সৌদির দৃষ্টিতে মুসলিম ব্রাদারহুড একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কিন্তু সংগঠনটির বড় পৃষ্ঠপোষক অবশ্য এরদোয়ান। এছাড়াও কাতার অবরোধ প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিলেও অন্যান্য ময়দানের বিরোধ মিটবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়।

এদিকে এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের আরেক প্রতিবন্ধক সংযুক্ত আরব আমিরাত। সবাই মনে করে আরব আমিরাত সৌদির অনুগত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সৌদির চেয়েও আমিরাত অনেক বেশি আগ্রাসী, অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্খী। সাম্প্রতিক সময়ের তুর্কি বিরোধী ময়দানগুলোতে সৌদি আরব থাক বা না থাক, আমিরাতের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। আর আমিরাতের ক্রাউন্স প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আসলে এমবিএসের একজন বড় পরামর্শক। কিছু দিন আগে আমিরাতের এক প্রভাবশালী কূটনীতিক এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেন যে- খুব শীঘ্রই সৌদি-তুর্কি সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে না।

ফলে দুই দেশের আগ্রহ সত্ত্বেও তাদের সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়টি খুবই জটিল হবে। হয়তো সম্ভব, অথবা সম্ভবই হবে না। কিন্তু কী হচ্ছে তা দেখতে হলে থাকতে হবে অপেক্ষায়।

সংগৃহিত

পঠিত : ৩১৩ বার

মন্তব্য: ০