Alapon

||চাঁদের চেয়েও সুন্দর তিনি||




তোমার প্রেয়সীর প্রসংশায় পঞ্চমুখ তুমি। তার ডাগর ডাগর চোখ। মায়াবী হরিণীর মতোন টানা টানা সেই চোখের মনোহর দৃষ্টি তোমার হৃদয়ে তোলে তুমুল ঝড় । নরম ঠোঁটের মিষ্টি হাসির মাদকতায় তোমার প্রাণ উতলা হয়ে উঠে। তার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের ছোঁয়া তোমার রাতের নিদ্রাকে হারাম করে দ্যায়। তার এমন অপূর্ব সৌন্দর্যের বয়ান তুমি বলতে বলতে ব্যাকুল থাকো। বন্ধুদের। সহপাঠীদের...

সিনেমা নাটকের নায়িকাদের আকর্ষিত রূপ-যৌবন, স্লিম বডির বাহারি সব বর্ণনায় মুখর থাকে মুখ তোমার।

হলিউড-বলিউডের সুপার স্টারদের হেয়ারস্টাইল, বডি ফিগারে তুমি দারুণ বিমোহিত হও। তাদের কোন একজনের মতো বডি, মতো চুল, তার চলন-বলনের স্টাইল তুমি দারুণ ফলো করো। সে-সব রপ্ত করতে সাধনা করো নিরবচ্ছিন্ন। বিরামহীন।

তাদের মতো সুঠাম সুন্দর ফিগার তৈরির সে-কি আপ্রাণ সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা তোমার। তাদের মতো সিক্সপ্যাক একটা বডি হোক তোমার ---সেই কামনায় কঠিন কসরত তোমার নিত্যদিনই।

অমুকের স্টাইল তমুকের মডেল ফলো করতে তুমি উৎসাহ উদ্দীপনা যোগাও তোমার ফ্রেন্ড-সার্কেলে।

তাদের সামান্য এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাদের ছবি তোমার প্রোফাইল পিক। সর্বক্ষণ তাদের গুণকীর্তন। রূপ-গুণের বর্ণন। সে-সব বর্ণনাকে তুমি উদার আকাশের বয়ে বেড়ানো বাতাসে বারুদের মতো উড়িয়ে উড়িয়ে দিচ্ছো!

আচ্ছা তাদেরচে ঢেরবেশি সুঠাম, সৌন্দর্য-ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন যে ছিলো তা কি তুমি জানো? যিনি তোমার-আমার একমাত্র অনুকরণীয় অনুসরণীয় আদর্শ। যিনি তোমার-আমার জন্য কেঁদে কেঁদে রাত যাপন করেছেন সারাটা জীবন। যিনি আমাকে তোমাকে মুক্তির রাজ তোরণের সন্ধান দিতে জীবনের অনেক সুখস্বপ্ন চাওয়া পাওয়াকে জলাঞ্জলী দিয়েছেন। তাঁর একহাতে সূর্য অন্য হাতে তো চাঁদও এনে দিতে চেয়েছে মানুষ, কিন্তু তিনি আমাকে তোমাকে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করার যে রব্ব প্রদত্ত দায়িত্ব, সেই রিসালাতি দায়িত্ব পালন করতে সব দুনিয়াবী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। হাসি মুখে দুখের শ্রাবণকে বরণ করে নিয়েছেন। অথচ তুমি সেই মানুষটার বিষয় কিচ্ছু জানছো না। জানার চেষ্টা আকাঙ্খা উদ্যোগ কিছুই নিচ্ছো না! অথচ তুমি তাঁর উম্মত দাবি করছো নিজেকে! সত্যিই সেলুকাস!

যাদের আইডল বানিয়ে বসে আছো, যাদের প্রসংশায় তুমি পঞ্চমুখ, যে প্রেয়সীর রূপ-যৌবন-সৌন্দর্যে তুমি পাগলপারা --সেই তাদের চেয়েও কত্তো কত্তো বেশি সুন্দর ছিলো তিনি, তুমি কি তা জানো? চাঁদের হাসিকেও তাঁর সেই সৌন্দর্য হার মানাতো! জানবে কোত্থেকে, তুমি তো এই দুনিয়ার মিডিয়ার ডোরাকাটা বাহুর সেলিব্রিটিদের নিয়েই ব্যস্ত!

আজ তোমাকে জানানোর জন্যই বলছি। একটু মন দিয়েই শুনো! ক্যামন?

- উম্মে মা'বাদ নামে একজন বৃদ্ধ মহিলার ঘরের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছালেন রাসূল (ﷺ) । সাহাবীদের মদিনা সফরের সময়।
-

তো সেই মহিলা ছিলেন খুবই দানশীল। রাসূল (ﷺ)
তাঁর কাছে এসে বললেন আপনার কাছে কি খাবার কিছু আছে?

তিনি বললেন: আমার কাছে যদি কিছু থাকতো তাহলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতে হতোনা।

রাসূল সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ও'সাল্লাম বললেন: আপনার ঘরের কোনায় একটা ভেড়া দেখতে পাচ্ছি।

বৃদ্ধা বললেন: সে অতিশয় দুর্বল , দুধ দিতে পারবে না।

রাসূল (সঃ) হেসে বললেন: আমাকে অনুমতি দ্যান। ছোট খাটো না বিশাল একটা বালতি নিয়ে রাসূল (ﷺ) ভেঁড়িটির দুধ দোহাতে লাগলেন আর আশ্চর্য ভাবে দুধ বালতির কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে গেলো।

রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাটিকে দুধ পান করালেন, তারপর সাহাবীদের এবং সব শেষে নিজে পান করলেন। বৃদ্ধার স্বামী ফিরে এলো বাড়িতে। এসে বললেন এতো দুধ কোত্থেকে এলো?


বৃদ্ধা বললেন: আজকে এক অলৌকিক মানব ঘরে এসেছেন। বৃদ্ধার স্বামী বললেন, উনার আকৃতি আমাকে বলো। উম্মে মা'বাদের যেই বর্ণনা -এই বর্ণনা সবচেয়ে সঠিক আর সমাদৃত; এতো সুন্দর করে কেউ কোনোদিন মহানবীর (সঃ) শারীরিক ঘটনার বর্ণনা দিতে পারেনি। যদিও তিনি মাত্র একবার আমার নবীকে দেখেছিলেন।


-" পোশাকে আষাকে দারুণ রকমের পরিছন্ন, তাঁর চেহারা ছিলো উজ্জ্বল, মুখটা ছিলো লম্বাটে, গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা,দাঁতগুলো ছিলো ঝকঝকে। হিরের মতো। কোনো ধরনের মেদ বা ভুঁড়ি ছিলোনা। আকারে মধ্যম, চোখ জোড়া ছিলো ডাগর ডাগর; চোখের মনি ছিলো কুচকুচে কালো আর বড়ো, চোখের সাদা অংশ ধবধবে সাদা, সুরমায় পরিপূর্ণ। কণ্ঠ ছিল সুতীক্ষ্ণ, পলক ছিল লম্বা লম্বা, ঘণ ব্রু, দুই ব্রু সুনির্দিষ্ট দূরুত্বে আর এর মাঝখানে কোন লোম ছিলো না, মাথার চুল ছিলো খুবই কালো এবং ঘাড় পর্যন্ত লম্বা, সামান্য কোঁকড়ানো -বাবরি।

- তাঁর গায়ের রঙ দুধে-আলতা মিশ্রিত গোলাপের মতোন, ঘন দাড়ি, মুখ গহ্বর প্রশস্ত, ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা, সুঠাম দেহো। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত।

-তিনি অনেক মানুষের ভিড়ে ছিলেন, কিন্তু সবার (সাহাবিদের) চাইতে তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি সুন্দর। কথাবার্তা খুবই বুদ্ধিসম্পন্ন। প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী।
-

এই কথাগুলো শুনে বৃদ্ধার স্বামী বললো, ইনি রাসূল (সঃ) ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না। যার পিছনে মক্কার পৌত্তলিকরা লেগেছেন, আমি যদি তাকে খুঁজে পাই তাহলে তাঁর হাতে বায়াত গ্রহণ করবো। পরে,এই দম্পতি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। হয়েছেন প্রিয়নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মানিত গৌরব দীপ্ত সাহাবী। ( রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)[১]

- প্রখ্যাত সাহাবী জাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু ) বলেন, একবার আমি চাঁদনি পশর রাতে নবী (সঃ) কে দেখলাম। মুরুভূমির বুকে চাঁদের চাইতে বেশি সুন্দর অার কিছু আছে কী?

হঠাৎ আমার মনে হলো যে, দেখি কে বেশি সুন্দর!! চাঁদ না তিনি।

রাসূল (সঃ) তখন আমার কিছু দূরুত্বে অবস্থান করছিলেন,তখন আমি

- একবার রসুলুল্লাহ (সঃ) এর দিকে তাকালাম আর সাথে একবার চাঁদের দিকে।
- একবার রসুলুল্লাহ (সঃ) এর দিকে তাকালাম আবার চাঁদের দিকে।
- একবার রসুলুল্লাহ (সঃ) এর দিকে তাকালাম আবার পূনরায় চাঁদের দিকে।

- আল্লাহর কসম! তাঁকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেএএএএক বেশিই সুন্দর মনে হলো [২]

কল্পনাতীত সুন্দর ছিলেন আমার নবী (সঃ)। তার চাইতেও বেশি ছিলো তার আব্রু, হায়া, ওয়াকার আর লজ্জা। তাঁর লজ্জার কাছে কুমারী মেয়েরা হার মানতো, তিনি এতোটা-ই বেশি পরিমাণ হায়ার অধিকারী ছিলেন। ওনার রূপ সৌন্দর্য্য উনি দেখিয়ে বেড়াতেন না, সৌন্দর্য তো বটেই, লজ্জার দিক থেকেও তিনি ছিলেন হজরত ইউসুফ (আঃ) এর চেয়েও উত্তম। যে কেউ তাকে প্রথম দেখাতেই হতভম্ব হয়ে পড়তো। এবং একথা বলতে বাধ্য হতো যে, জীবনে এমন সুন্দর সুদর্শন সু-পুরুষ মানুষ আর দ্বিতীয়জন দেখিনি।[৩]

শুধু কি দৈহিক সৌন্দর্যতেই তিনি সেরা ছিলেন? নাহ্! তার চরিত্রের মাঝেও ছিলো সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠতম নমুনা! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ওনাকে সুমহান চরিত্রের অধিকারী বলে ঘোষণা করেছেন [৪]। আচ্ছা সে বিষয় নিয়ে না হয় আল্লাহ চাহে তো আরেকদিন আলোচনা হবে। ইন শা অাল্লাহ! মানে চারিত্রিক নানাবিধ সৌন্দর্যের বিষয় নিয়ে আরকি।

আচ্ছা এই যে এতো বিমুগ্ধ মনোহর সীমাহীন যেই মানুষ, তিনিই তো আমাদের স্মার্ট আদর্শ। সেই সৌন্দর্য তো আমাদের সামনে সমুজ্জ্বল। তাহলে কাকে রেখে কাদের পেছনে ছুটছো তুমি! কাদের আইডল বানাচ্ছো? তুমি যাদের পেছনে ছুটছো, যাদের স্তুতি-প্রসংশায় মুখে ফেনা তুলে যাচ্ছো হরদম --তাদের একেকজনের অন্ধকারের একগাদা গল্প আছে! তাঁদের নীতি-চরিত্রের বারোটা বেজে তেরোটা তো হয়েই আছে বহুকাল আগে থেকেই। তাদের আইডল মেনে তাদের লাইফ স্টাইল অনুসরণ করে তুমি যেই গার্লফ্রেন্ডটার প্রেমের নেশায় আর সৌন্দর্যে বুদ হয়ে আছো ---তাকেও নিচ্ছো সেই পথে, যে পথ অনন্ত অনলের উত্তাল লেলিহান!

তাহলে আজ থেকে আর কারো স্টাইলে বুদ হয়ে থাকা নয়। ক্যামন? আজ থেকে চলো না নবীজি সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম এর সব সৌন্দর্যকে নিজেদের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ধীরে ধীরে নিয়ে এসে জীবনকে রাঙাই সেই সুনির্মল সৌন্দর্যে। যেই সৌন্দের্যের কাছে হার মানতো পূর্ণমার চাঁদের কিরণও.....


||চাঁদের চেয়েও সুন্দর তিনি||
-রেদওয়ান রওয়াহা
১২.০৭.২০

---------

পঠিত : ১০৬৪ বার

মন্তব্য: ০