Alapon

শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা (রহঃ) : প্রেরণার পিরামিড!




টেলিভিশন খুলতেই দেখি একটা নিরিহ মানুষ নিয়ে শাহবাগে বাম পাড়ায় চলে তুমুল হিংসাত্মক আন্দোলন। আন্দোলনের শ্লোগানগুলো আরো ভয়াবহ, আরো ঘৃণ্য। জালিম সরকারের গোলাম বিচারক রায় দিয়েছে একটা, বাম পড়ার জঘন্য আর নিকৃষ্ট ইসলামদ্রোহী নরকীটরা সেই রায়কে ফাঁসিতে রুপান্তর করার এক হিংস্রতম আবদার ও নোংরা আন্দোলনে মেতে ওঠে।
সারা জাতি তখন দেখেছে যে, কীভাবে বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে একটা জুলুমপূর্ণ রায়কে আরো বেশি জুলুমাতে পরিণত করে একজন নিরপরাধ-নির্দোষ সজ্জন ব্যক্তিকে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সারা বাংলাদেশ নির্বাক। মানুষ নির্বাক। বিবেক নিস্তব্ধ।

কীভাবে সম্ভব! কীভাবে পারলো তারা! একজন নিরীহ জলজ্যান্ত মানুষকে কথিত রাজাকার-আলবদর আর মানবতা বিরোধী অপরাধী বানিয়ে হত্যা করে তাঁর সন্তানদের এতিম, তাঁর স্ত্রীকে বিধবা করতে?

মানুষটার চাহনিতে নিষ্পাপতার সর্বোচ্চ আভাটুকুন ফুটে আছে । দেখতে এক অদ্ভুত কিসিমে’র মায়া লাগে। বুদ্ধিমত্তার আর তাকওয়ার তন্ময়তা ফুটে ওঠে একসময়কার কমিউনিস্ট আজকের ইসলামে প্রত্যাবর্তনকারী শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহ'র চেহারার মাঝে। জীবনের সবটুকু উজ্জ্বলতা প্রতিভাত হয়ে আছে তাঁর বর্ণ্যাঢ্য জীবন জুড়ে।

বলা হয়েছে তিনি মিরপুরে গণহত্যা পরিচালনা করেছেন। গণহত্যা, লুন্ঠন আর ধর্ষণের মহাসমারোহে মেতে ওঠেছেন। কিন্তু তিনি তো তখন ইন্টার লেভেলের একজন ছাত্র মাত্র। একাত্তরে তিনি ইসলামের পথে ফিরেও নি ঠিক মতোন। ছিলেন একাত্তরে নিজ জেলা ফরিদপুরে।
তো ফরিদপুর থেকে কীভাবে তিনি মিরপুরে গণহত্যা পরিচালনা করতে পারেন আল্লাহ মা'লুম!

সরকার তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়ার জন্যে অসংখ্য লোক ভাড়া করেছে। সেই ভাড়াটে প্রশিক্ষিত সাক্ষীদের সাক্ষীও এলোমেলো। খেয়াল করে শুনলে, বিবেচনা করলে বুঝা যায় যে একেকটা সাক্ষী কতো বড়ো হার্ডকোর মিথ্যুক। ব্যক্তিগত জীবনেও একেকটা ছিলো টাউট আর বদমাশ!

যে ব্যক্তি একাত্তর পরবর্তী সরকারের কাছ থেকে মানে শেখ মুজিবের হাত থেকে পদক পায়, যে ব্যক্তি ঢাবির উদয়ন কলেজের শিক্ষকতা করে, বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজেও যেই ব্যক্তি শিক্ষকতা করেন সেই একাত্তর পরবর্তী সময়েই! সে ব্যক্তি কীভাবে হুট করেই এতো দুধর্ষ অপরাধী হয়ে পড়ে, এতো বড়ো দুধর্ষ মানবতা বিরোধী অপরাধীকে শেখ মুজিব কীভাবে পদক দেয় তা জাতির বোধগম্য নয় আজো!

মূলত সেই কাদের মোল্লার ফাঁসি থেকে শুরু করে শাহবাগে ইসলামদ্রোহীরা যেভাবে রামরাজত্ব শুরু করে, প্রকাশ্যে ইসলাম, আল্লাহ, তাঁর রাসুল সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং শাহবাগ মোড়ে বসে বসে যেভাবে লাম্পট্য আর নষ্টামি করার অবাধ সুখ লাভ করে - তার ধারাবাহিকতায় তারা আজও সুযোগ পেলে তা করে।
তাদের ইতরামি আর বদমাশি সারা বাংলাদেশে যেভাবে কৌশলে ছড়িয়ে দিচ্ছে, বা দেয়া শুরু করছে তা প্রতিহত করতে ইসলামপন্থিদের আরেকটা গোষ্ঠীর হঠাৎ ময়দানে আর্বিভাব ও দৃঢ় অবস্থান যেনো তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

সে কারণে তারা শুধু জামায়াত বা কাদের মোল্লার বিরোধিতা নয়, শুরু করে হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতাও। মুহতারাম জুনায়েদ বাবু নগরী থেকে শুরু করে মামুনুল হক --সকলের বিরুদ্ধে অবাধ অপবাদ আর ঘৃণার বিষবাষ্প পরিচালনা মূলত সেটারই ধারাবাহিক অংশ মাত্র। তাদের তো টার্গেট কোনো নির্ধিষ্ট দল বা ব্যক্তি নয়। তাদের টার্গেট পুরোটা ইসলাম। সে কারণে যখন যিনি বা যে দল প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী -তখন সে কারণে সে গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লেগে যাও। তাদেরকে নিঃশেষ করে দাও। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বাকিদের...

সে যাই হোক, জামায়াতে ইসলামী বা শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা ( রহঃ) থেকে শুরু করে হেফাজত বা সালাফিয়াত ও কথিত সুন্নিয়াত, কেউই তাদের কালো তালিকার বাহিরে নয়। কাদের মোল্লার মতো একজন চরম সজ্জন, বিনয়ী, দুর্দান্ত মেধাবী নেতাকে যেভাবে মিথ্যের মিসাইল মেরে রাষ্ট্রের আয়োজনে, বামপন্থীদের সহায়তায় হত্যা করা হয়েছে তাঁর জবাব একদিন এদের প্রত্যেককেই দিতে হবে।

মৃত্যুর আগে, ফাঁসির দড়ি গলায় বরণ করার পূর্বে তিনি যেভাবে দৃঢ় মনোবল আর দুঃসাহসিক ঈমানের পরিচয় দিয়েছেন তাতে তাঁর বিরত্ব আর শ্রেষ্ঠত্বই ফুটে ওঠে।আদর্শিক ও জ্ঞানগতভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে তারা কাপুরুষের মতো পেছনের দরোজায় গিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে, এটা তাদের কাপুরুষোচিত চিন্তা-দর্শন এবং আদর্শিক দেউলিয়াত্বকেই প্রকাশিত করে। মানুষ ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে তাদের তত্ত্ব আর মতোবাদের ফাঁকা বুলিকে।

ফাঁসির রজ্জুকে গলায় ধারণ করার পূর্বে শহিদ আব্দুল কাদের মোল্লা বলেছেন - "আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার মাথা চিরকাল উঁচু ছিলো উঁচুই থাকবে। তোমরা আমার চোখে কখনোই পানি দেখবে না।"

হ্যাঁ, আমরা তাঁর চোখে পানি দেখিনি। কীভাবে সত্যকে ভালোবেসে, দ্বীনকে ভালোবেসে কন্ঠে ফাঁসির রজ্জু ধারণ করেছেন আমরা তা দেখেছি। দেখেছে সারা পৃথিবী । আজ তাই ইসলামি বিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর লাখো-কোটি মানুষের প্রেরণার পিরামিড তিনি।

তিনি আরো বলেছেন যে, নবুওয়তের দরোজা বন্ধ হলেও শাহাদাতের দরোজা বন্ধ হয় নি। আমি যদি যুদ্ধের ময়দানে না গিয়েও শাহাদাত লাভ করতে পারি এটা তো হবে আমার জীবনের সবচে বড়ো সৌভাগ্যই।

সত্যি তিনি সেই সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন। এমনটাই বিশ্বাস তাওহিদী জনতার। কারণ তিনি তাঁর আদর্শের সাথে কম্প্রোমাইজ করেন নি। বাতিলের কাছে মাথা বিকিয়ে দেয় নি। শিরদাঁড়া উঁচিয়ে ছিলেন, যতোদিন বেঁচেছেন ততোদিন। হন হন করে ছুটে গিয়ে কন্ঠনালীতে বরণ করে নিয়েছেন জালিমের জুলুমের রজ্জুকে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাঁকে শহীদ হিশেবে কবুল করুন। সকল ইসলামপন্থীদের সত্যিটা আর ঐক্যের প্রয়োজনীয়তাটা দ্রুত উপলব্ধি করে এক কাতারে দাঁড়িয়ে ত্বাগুতের মোকাবিলা করার তাওফিক ও হিম্মত দান করুন। আর বাংলাদেশের জমিনে লিকলিকিয়ে বেড়ে ওঠা ইসলামের চারাগাছটিকে ডালপালা মেলে, বিস্তৃত করে রাশেদার সেই সোনালি সমাজ দান করুন। আমীন।

~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৫১৮ বার

মন্তব্য: ০