Alapon

সৌদি-তুরস্ক-কাতার নতুন সমীকরণ :- মাসুম খলিলী



সৌদি আরব, তুরস্ক ও কাতারের মধ্যে নতুন সমঝোতা ও সমীকরণের কথা শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর জো বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার পর এই উদ্যোগে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদন অনুসারে, কাতার অবরোধের অবসান ঘটাতে শিগগিরই একটি চুক্তি হতে পারে। এই চুক্তির জন্য অবরোধ আরোপকালে আল জাজিরা বন্ধ করে দেয়া এবং ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্কচ্ছেদসহ যেসব দাবি করা হয়েছিল তা থেকে যে রিয়াদ অনেকখানি সরে আসছে তাতে সন্দেহ নেই।

কাতারের সাথে এই সমঝোতায় তুরস্কও একটি প্রধান পক্ষ। এমনকি এর সাথে ব্রাদারহুডের বিষয়ও জড়িত রয়েছে। এই সমঝোতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত কোনো পক্ষ হিসেবে থাকছে না। তুরস্ক বা কাতার দুই দেশের কোনোটিই আমিরাতের ইসরাইলের সম্প্রসারিত দেশের ভূমিকায় আবুধাবির সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে আগ্রহী বলে মনে হয় না। ইসরাইলের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রশ্রয়ে থেকে আমিরাতের নিজের সামর্থ্যরে বাইরে অন্য দেশে গিয়ে শক্তিমত্তা প্রদর্শনের বিষয়টি তুরস্ক-কাতারই শুধু নয় সৌদি আরব এবং কুয়েতের মতো দেশও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না।

আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ কার্যত রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ মেনে নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তেল আবিবের এই প্রশ্রয়ে বলীয়ান হয়ে সৌদি নেতৃত্বে চলার পরিবর্তে সৌদি নীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে আমিরাত। উচ্চাভিলাষী সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সম্পর্ক আর ট্রাম্প প্রশাসন ও নেতানিয়াহুর সাথে যোগসূত্র রেখে তিনি এ কাজে অনেক দূর এগিয়ে যান। তুরস্কে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে এরদোগানের একেপি সরকারের পতন ঘটানোর প্রতিটি প্রচেষ্টায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে আবুধাবি। ইয়েমেনে সামরিক হস্তক্ষেপে মোহাম্মদ বিন জায়েদ সমান্তরাল একটি ব্যবস্থা তৈরি করে এডেন প্রণালীর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রয়াস পান। এসব করতে গিয়ে শুধু ইসরাইল ও ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে বিন জায়েদ যোগসূত্র রক্ষা করেছেন, তাই নয়; একই সাথে রাশিয়া ও ফ্রান্সের সাথেও ‘বিশেষ সম্পর্ক’ তৈরি করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ কাজ ছিল সৌদি বাদশাহ সালমানকে অবহিত না করেই ফিলিস্তিন অ্যাজেন্ডাকে এক পাশে সরিয়ে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া। আর একই সাথে আবুধাবির পথ অনুসরণ করে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ট্রাম্প-কুশনারকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা।

সংযুক্ত আরব আমিরাত যে শুধু সৌদি আরবকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে তাই নয়; ইসরাইলের হয়ে পুরো মুসলিম বিশ্বকে আমিরাতকে অনুসরণ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। তেলআবিবের আশকারায় এভাবে অযাচিৎ শক্তিমত্তা প্রদর্শনে ভেতরে ভেতরে নেতৃস্থানীয় মুসলিম দেশগুলো আমিরাতের উপর ত্যক্তবিরক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাম্পের আলোচিত পরাজয় এবং ইসরাইলে নেতানিয়াহু সরকারের পতন ও নতুন নির্বাচনের ঘোষণায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চাপ আর আগের মতো থাকেনি।

অন্যদিকে ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসার ব্যাপারে বাইডেনের ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানি চাপ আবারো বৃদ্ধির বার্তা দেয়। ইয়েমেনে যুদ্ধের অবসান ও সৌদি নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসরাইলের প্রশ্রয়ের ব্যাপারে এখন সেভাবে সম্ভবত আস্থা রাখতে পারছে না রিয়াদ।
সৌদি আরবের সামনে এখন প্রধান যেসব অ্যাজেন্ডা রয়েছে, তার মধ্যে আছে সৌদি ও মিত্র রাজতন্ত্রসমূহের ক্ষমতার নিরাপত্তা, ইরান বা অন্য কোনো শক্তির আক্রমণ বা হুমকি থেকে রাষ্ট্রের অখণ্ডতার হেফাজত, মুসলিম বিশ্বে সৌদি নেতৃত্ব ও প্রভাব বজায় রাখা এবং সৌদি আরবের অর্থনৈতিক স্বার্থ নিশ্চিত করা।

সৌদি আরবের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরাইল, তুরস্ক ও ইরান। ইরানের সাথে বোঝাপড়ায় সৌদি প্রচেষ্টায় কার্যত কোনো ফল আসেনি। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মানে হলো, এই ইহুদি রাষ্ট্রের অধীনতা মেনে নেয়া যাতে সৌদি জনগণ, ধর্মীয় এস্টাবলিশমেন্ট ও শাসন কাঠামোকে সম্মত করা যায়নি এখনো। এর বাইরে রয়েছে তুরস্ক। দেশটি ‘আরব বসন্ত’ ইস্যুতে গণতন্ত্রকামীদের সমর্থন দেয়ার পর থেকে দু’দেশের সম্পর্কে এক প্রকার দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর তুরস্ক আঞ্চলিকভাবে নির্ধারক শক্তি হওয়া মানে, মুসলিম ব্রাদারহুড শক্তিশালী হওয়া। সৌদি আরবের জন্য যেকোনো আঞ্চলিক সমীকরণে এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গত পাঁচ বছরে তুরস্কের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) সরকার এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে সময় পার করেছে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তুরস্ককে ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং একটি বিকাশমান গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য এই অঞ্চলের ‘জ্বল জ্বলে নক্ষত্র’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এ সময় ধারাবাহিক সঙ্কট মোকাবেলায়, সে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব একটি স্বতন্ত্র বিদেশ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে নিজস্ব জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনুসৃত তুরস্কের বহুপাক্ষিক বৈদেশিক নীতি কিছু ক্ষেত্রে পশ্চিমা মিত্রদের জন্য সমস্যাও সৃষ্টি করে।

পশ্চিমা শক্তিগুলো স্নায়ুযুদ্ধ- পরবর্তী সময়ে শক্তির নতুন ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে অসুবিধা হয়; যদিও এসব শক্তি রাজনৈতিক, বিচারিক ও সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একে পার্টি সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টার সাথেও যুক্ত হয়েছে। এসব চেষ্টার পরও প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এখনো ব্যাপক নির্বাচনী সমর্থন নিয়ে তুরস্কের রাজনৈতিক ক্ষমতায় রয়েছেন।

তুরস্ক সাম্প্রতিক অস্থির সময়ে তিনটি বৈরী সংগঠনকে মোকাবেলায় সফল হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের ব্যর্থতার পরে রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে ‘গুলেনিস্ট গ্রুপ’ সংশ্লিষ্টদের বিদায় করা হয়েছে। তার দক্ষিণ-পূর্ব সীমানাজুড়ে প্রাকৃতিক সামরিক উপস্থিতি তৈরি করে সিরিয়া ও ইরাক, কুর্দিদের দু’দেশে পিকেকে পার্টিকে পরাজিত করেছে। তুরস্ক প্রথম দেশ যে সরাসরি আইএসকে লড়াই করে পরাজিত করে। আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে তুরস্কের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি সিরিয়া, লিবিয়া ও আজারবাইজানের সামরিক এবং রাজনৈতিক সাফল্য দিয়ে সুসংহত হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ওবামা প্রশাসন ইরানকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল। তেহরান এর সুযোগে এই অঞ্চলে একটি প্রভাববলয় গঠনের চেষ্টা করে। এই সময়ে, তুরস্ক ইরানি সম্প্রসারণ হুমকির বিরুদ্ধে সৌদি আরবকে সমর্থন করেছিল। এদিকে, আমিরাতের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ (এমবিজেড) ‘পাওয়ার ব্রোকার’ হিসেবে আগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের সাথে মিলে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতির ওপর আধিপত্য বিস্তার শুরু করে দেন। এটি উপসাগরীয় দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি রাজনীতির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। কারণ সৌদি জনগণ ফিলিস্তিনের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জোরালো সমর্থন জানিয়ে আসছিল।

শক্ত ক্ষমতার মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রভাব অর্জনের পরে, তুরস্ক এখন কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপায়ে তার আঞ্চলিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এই অর্থে, তুরস্ক এবং সৌদি আরবের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কোন্নয়নের শক্তিশালী সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এটি স্পষ্ট, দু’দেশের মধ্যকার সাম্প্রতিক উত্তেজনা অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উভয় দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তুরস্কের পণ্য রফতানি করার জন্য শক্তিশালী বাজারের প্রয়োজন থাকলেও সৌদি নাগরিকরা তুরস্কে বিনিয়োগ করতে বা থাকতে চান।

সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর তুরস্ক ও সৌদি আরবের সম্পর্কে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। উভয় প্রশাসন তুর্কি-সৌদি সম্পর্কের অবনতি থেকে উপকৃত অন্য আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়টি নতুনভাবে বিবেচনা করতে পারে। এর আগে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার জোট ইরানের বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। ফলে বিরোধপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে তুরস্কের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হতে পারে।

তুর্কি-সৌদি সম্পর্কের অবনতির পেছনের কারণগুলো খুঁজে পাওয়া কঠিন। তবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য দুই দেশের মধ্যে যে সাম্প্রতিক সম্পর্ক প্রয়োজন, তার গুরুত্ব সহজেই অনুভব করা যায়। তুরস্ক ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্ভাব্য অনুকূল সম্পর্ক তুরস্ক ও মিসরের সম্পর্ককেও ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটি হলে তা সুন্নি আফ্রিকায় একটি নতুন জোট তৈরি করতে পারে।

তুরস্ক ও সৌদি আরবের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত তাদের সম্পর্কের উন্নতির উদ্যোগ নেবেন বলে মনে হয় দুই দেশের নেতৃবৃন্দের সাম্প্রতিক আলোচনায়। এর মধ্যে নভেম্বরের প্রথম দিকে ফোনে কথা বলার পরে তুর্কি প্রেসিডেন্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং বাদশাহ সালমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করতে এবং বিবাদের ইস্যুগুলোতে সমঝোতায় পৌঁছতে সংলাপের চ্যানেলগুলো উন্মুক্ত রাখতে সম্মত হয়েছেন।
দুই নেতার কথোপকথনের পরে তুরস্ক ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীরও একই রকম উষ্ণ বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। তারা নাইজারে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনের সময় সাইডলাইনে বৈঠক করেছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু টুইট করে বলেছেন, ‘তুরস্ক-সৌদি আরবের একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব কেবল আমাদের দেশগুলোর জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য উপকারী হবে।’ একই ধরনের আশাবাদ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেও উচ্চারিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বিবেচনা করেই তুরস্ক ও কাতারের সাথে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার পথেই এগুতে চাইছেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। এক্ষেত্রে শর্ত থাকতে পারে- সৌদি আরবে সৌদ রাজপরিবারের শাসনবিরোধী কোনো তৎপরতায় যুক্ত থাকতে পারবে না মুসলিম ব্রাদারহুড। আর ব্রাদারহুডের ব্যাপারে যে দমন-পীড়ন চলছে, সেটি থাকবে না। কাতারের আল জাজিরা টেলিভিশন রাজতন্ত্রবিরোধী কোনো প্রচারণার অংশ হবে না। সিরিয়ার শান্তি ও সমঝোতার ব্যাপারে সৌদি আরব, কাতার ও তুরস্ক অভিন্ন ভূমিকা রাখবে। আঙ্কারায় ক্ষমতা পরিবর্তনের ব্যাপারে কোনো প্রচেষ্টায় সৌদি আরব অংশ হবে না। ইয়েমেনের যুদ্ধের অবসানের ব্যাপারে তুরস্ক প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করবে। এ ধরনের একটি সমঝোতার পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে, নেতৃস্থানীয় মুসলিম দেশগুলো সক্রিয় রয়েছে সেটি বোঝা যায় নাইজারে সাম্প্রতিক ওআইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে।

ওই সম্মেলনের ঘোষিত অ্যাজেন্ডায় যেখানে কাশ্মির ইস্যুর কোনো উল্লেখই ছিল না, সেখানে কাশ্মিরের ব্যাপারে অত্যন্ত জোরালো প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে, এই সংস্থাটিকে কার্যকর করার ব্যাপারেও কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নেতৃস্থানীয় মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাতকে সমঝোতায় রূপান্তরের প্রচেষ্টা এবং ইসরাইলের দানবীয় দাপটে হঠাৎ করে কিছুটা নমনীয়তা আসা মুসলিম বিশ্বের জন্য সুসংবাদই বয়ে আনবে বলে মনে হচ্ছে।
আশির দশকের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের যে অবসান ঘটেছিল, তাতে মুসলিম দেশগুলোর অনেক বিশ্লেষককে উল্লøসিত হতে দেখা গিয়েছিল। এর পথ ধরে মধ্য এশিয়ার বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতা লাভের ইতিবাচক ঘটনাও ঘটেছিল। কিন্তু মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য শক্তির সামনে কমিউনিস্ট প্রতিপক্ষ হারিয়ে যাওয়ার কারণেই আদর্শিক প্রতিপক্ষ হিসেবে ইসলামকে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে। এর ফলে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন ও লিবিয়া এক প্রকার ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মুসলিম দেশগুলোতে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদে আধিপত্যবাদী শক্তির কর্তৃত্ব নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এখন নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই স্নায়ুযুদ্ধের পরস্পর প্রধান প্রতিপক্ষ সম্ভবত হতে যাচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। করোনাভাইরাস সংক্রমণকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হওয়া এই স্নায়ুযুদ্ধে জীবাণুঅস্ত্রের ব্যাপক প্রয়োগের শঙ্কা মানবজাতির জন্য বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেতও নিয়ে এসেছে। তবে এর মধ্যে দিয়ে নতুন শক্তির অভ্যুত্থানের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের দুই পক্ষের সামনে মুসলিম দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। আর এ সময়ে মুসলিম ঐক্য ও প্রাতিষ্ঠানিক সমঝোতা বজায় রাখতে পারলে মুসলিম দেশগুলোর মধ্য থেকেই মহাশক্তির অভ্যুদয় ঘটতে পারে। তুরস্ক-সৌদি সমঝোতা এ ক্ষেত্রে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

পঠিত : ৬৮৫ বার

মন্তব্য: ০