Alapon

সুলতানী আমলে বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ।


হজরত শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রহ. । উপমহাদেশে ইসলাম ও ইলমে দ্বীন বিকাশে অবদান রাখা এক উজ্জ্বল নাম। জন্মভূমি ছেড়ে হাজার মাইল দূরের এই বাংলাকে যিনি হিজরি সপ্তম শতাব্দীতে আলোকিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন ইয়েমেনের অধিবাসী।
হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্রে ছিলেন গভীর জ্ঞানী। সেই সঙ্গে ভূগোল, গণিত ও রসায়নশাস্ত্রের সুপন্ডিত।এই মাদ্রাসায় ইসলামি শিক্ষার সকল শাখায় এবং লৌকিক বিজ্ঞানের ওপর শিক্ষাদান ও অধ্যয়নের ব্যবস্থা ছিল। সমগ্র উপমহাদেশে এই মাদ্রাসার বহুল সুখ্যাতি ছিল এবং দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে শিক্ষালাভের জন্য সমবেত হতো।

বিহারের বিখ্যাত সুফি ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরী এই মাদ্রাসায়ই শিক্ষালাভ করেন। সম্ভবত মোগরাপাড়ার বর্তমান দরগাহ-বাড়িতে অবস্থিত ছিল এই জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র।শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা আনুমানিক ৬৬৮ হিজরি (১২৭৭ খ্রিষ্টাব্দ) সনে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে দিল্লিতে আগমন করেন।
তখন সুলতান গিয়াসুদ্দীন বলবনের শাসনকাল। সুলতানের অনুরোধে ১২৭৮ সালে দ্বীন প্রচারের জন্য তিনি আগমন করেন সবুজ শ্যামল এই বাংলায়। তৎকালীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ে এসে দ্বীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। এখানে গড়ে তোলেন একটি বৃহৎ মাদরাসা ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি।

পরবর্তীকালে শেখ আলাউদ্দিন আলাউল হক (মৃ ১৩৯৮), তাঁর পৌত্র শেখ বদর-ই-ইসলাম ও প্রপৌত্র শেখ জাহিদ সোনারগাঁয়ে ধর্মতত্ত্ব ও সুফিতত্ত্ব বিষয়ে শিক্ষা দিতেন।
আবু তাওয়ামা প্রতিষ্ঠিত খানকা ও মাদ্রাসা সম্ভবত তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর আধ্যাত্মিক অনুসারীদের দ্বারা এবং পরবর্তীকালে প্রখ্যাত সুফিসাধক সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ ও তাঁর বংশধর সৈয়দ আরিফ বিল্লাহ মুহাম্মদ কামেল, সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফ ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।

সোনারগাঁও এক সময়ে ছিল বিখ্যাত সুফি দরবেশ ও ফকিরদের মিলনক্ষেত্র। সোনারগাঁয়ে সংকলিত কতিপয় মূল্যবান গ্রন্থের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এগুলি হচ্ছে শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামা রচিত ইসলামি সুফিবাদ (তাছাওয়াফ) বিষয়ক দুর্লভ গ্রন্থ মাকামাত, আবু তাওয়ামা কর্তৃক রচিত অথবা তাঁর প্রদত্ত শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে তাঁর কোনো অনুসারী কর্তৃক সংকলিত (১৩০৪) ফার্সি ভাষার ফিকাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থ নাম-ই-হক, চৌদ্দ শতকের প্রথমদিকে জনৈক কামাল-ই-করিম বিরচিত ফিকাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থ মাজমু-ই-খানী ফি আইন আল-মাআনী,

সোনারগাঁয়ের তুগলক শাসনকর্তা বাহরাম খান ওরফে তাতার খানএর নির্দেশে সংকলিত তফসির-ই-তাতারখানী ও ফতওয়ায়ে তাতারখানী এবং মুসা খানের সভাকবি নাথুরেশ কর্তৃক সংকলিত সংস্কৃত-বাংলা অভিধান শব্দ-রত্নকরী।

পূর্ব বাংলার মুসলিম শাসনের শেষ পর্যায় পর্যন্তই উহার এই গৌরব অব্যাহত ও অক্ষুণ্ন ছিল। কিন্তু পরবর্তী বৃটিশ শাসন আমলে সোনার গাঁ স্বর্ণকিরণ নিঃশেষে বিলীন হইয়া যায়।

পঠিত : ৯০৩ বার

মন্তব্য: ০