Alapon

আল্লামা নুর হোসাইন কাসেমি বাংলার মুসলিমদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন...



২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যে হেফাজত ইসলাম আজ অবধি বাংলার জমিনে স্বদর্বে টিকে আছে, তা কার অবদান জানেন? আল্লামা মরহুম নুর হোসেইন কাসেমী সাহেবের। আল্লামা নুর হোসেন কাসেমি সমস্ত আলেম-ওলামাকে এক কাতারে নিয়ে আসার মত অসম্ভব কাজকে সম্ভব করেছেন। হেফাজত প্রতিষ্ঠার সময় তিনি চাইলে আরও পদ বাগিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি যে কেবল ইসলামের স্বার্থেই এই কাজে নিজের শ্রম ব্যয় করেছেন, তা তাঁর সেক্রিফাইস দেখেই বোঝা যায়।

হেফাজত প্রতিষ্ঠার সময় এর কেন্দ্র নির্ধারণ হয় চট্টগ্রাম হাটহাজারি মাদ্রাসা। কারণ, সেখানেই অবস্থান করতেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। আর মহাসচিব করা হয় আল্লামা বাবু নগরী সাহেবকে। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীণ সময়ে ফরিদাবাদ মাদ্রাসার উস্তাদদের প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়। সে তুলনায় আল্লামা নূর হোসেন কাসেমি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা বারিধারা মাদ্রাসার উস্তাদদের তেমন প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায়নি। কিন্তু এটা নিয়ে আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি সাহেব কোনো ধরণের আপত্তি করেননি। বরঞ্জ ‘হেফাজত ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ফরিদাবাদ মাদ্রাসার প্রভাবও নীরবে মেনে নেন। ফরিদাবাদ মাদ্রাসার হুজুরেরা যেখানে এক একজন কেন্দ্রীয় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন, সেখানে আল্লামা নূর হোসেইন কাসেমি ঢাকা মহানগরের আমীর হয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন।

এরপর তো হেফাজত ইসলামের উপর দিয়ে এক নীরব ক্যু ঘটে যায়। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তার ছোট ছেলে আনাস মাদানী নীরবে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। একইসাথে হাটহাজারী মাদ্রাসারও নিয়ন্ত্রন নেন। নিয়ন্ত্রন নেওয়ার পর আনাস মাদানী আল্লামা বাবু নগরী সাহেবকে হাটহাজারি মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। এই সময়ও যেন কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাই শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে ভূমিকা রাখেন আল্লামা নূর হোসেইন কাসেমি সাহেব।

এরপর আনাস মাদানীর প্রতিনিয়ত অনিয়ম ও সাধারণ ছাত্রদের উপর চালানো নির্যাতন সহ্য করতে না পারে সাধারণ ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সেই বিদ্রোহে আনাস মাদানীর সাজানো সাম্রাজ্য চুরমার হয়ে যায়। আনাস মাদানীর অপসারণের পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় আবারও প্রবেশ করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। আর এই সময়টা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবের পাশে থেকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন।

এরপর আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব ইন্তেকাল করলে হেফাজত ইসলামের দায়িত্ব গ্রহণ করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব। আর মহাসচিবের দায়িত্ব পান আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি। তাঁদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই হেফাজত ইসলাম তার স্বরূপে আর্বিভূত হয়েছে। আর এতো কিছুর পরও যে হেফাজত ইসলাম বাংলার জমিনে শক্তভাবে টিকে আছে, তার জন্য সিংহভাগ ক্রেডিট আল্লামা নূর হোসেইন কাসেমিই প্রাপ্য।

আল্লামা নূর হোসেইন কাসেমি যেমন উম্মাহর জন্য ছিলেন এক অনন্য নজির, তেমনই ব্যক্তি জীবনেও ছিলেন অন্যন্য উদাহরণ সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। কওমি অঙ্গনে একটি রেওয়াজ দেখা যায়, মুহতামিমের সন্তানই পরবর্তিতে মুহতামিম হয়। বা যিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন তার সন্তানই বংশানুক্রমিকভাবে মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।

আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি সাহেবের দুই জন্য পুত্র সন্তান। তারা ভারতের দেওবন্দ থেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছেন। কিন্তু আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি সাহেব তার দুই ছেলের একজনকেও নিজ মাদ্রাসা বারিধারা মাদানিয়া মাদ্রাসায় চাকরি করার সুযোগ দেননি। এমনকি তিনি মৃত্যুর পূর্বেও অসিয়ত করে যান, আমার মৃত্যুর পরও যেন আমার সন্তানদের বারিধারা মাদ্রাসায় চাকরি করার সুযোগ দেওয়া না হয়। এমন উদাহরণ কওমি অঙ্গনে খুব একটা দেখা যায় না।

যারা অসাধারণ তারা ব্যক্তি জীবনেও অসাধারনত্বের ছাপ রেখে যান। আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি সাহেবের এই বিদায় বাংলাদেশের মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কিন্তু আল্লামা নুর হোসেইন কাসেমি সাহেব তো সফল। তিনি বাংলার মুসলমাদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার প্রমাণ, আজকে তাঁর জানাজায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিই সেই কথা প্রমাণ করে।

পঠিত : ৩৩৬ বার

মন্তব্য: ০