Alapon

কিয়ামতের আলামত এবং কিছু কথা...



বর্তমানে আমরা এমন একটি সময় অতিক্রম করছি, যখন প্রতিটি মুহূর্ত ভয় ও আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। মরার ভয়, গুম হওয়ার ভয়, ধর্ষণের ভয়, জুলুমের ভয়, সম্পদ লুটপাটের ভয়, মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার ভয়⸺চারিদিকে আজ কেবল ভয়েরই প্রতিধ্বনি।

এই যে একবিংশ শতাব্দীতে হঠাৎ করেই হুহু করে ফিতনার দ্বারগুলো খুলে যাচ্ছে, একে একে তাসবিহের দানার ন্যায় ফিতনাগুলো ধেয়ে আসছে, মানুষের জীবন জুলুম-অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে; আপনি ভাবছেন চলমান এসব ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই ঘটছে!

জি না, এসব স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এ হলো মহাপ্রলয়ের অগ্রীম সংকেত। অধিকাংশ মানুষ কিয়ামতকে দূরে ভাবে; অথচ কিয়ামত তাদের চৌকাঠে কড়া নাড়ছে।

কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে এভাবেই ফিতনার স্রোত সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। ক্রমেই পৃথিবী অশান্ত হয়ে উঠবে। জুলুম-অনাচারে পৃথিবী কানায় কানায় ভরে যাবে। অকল্পনীয় সব পরিস্থিতির শিকার হবে মানুষ। কন্যার সাথে বাবার, মায়ের সাথে ছেলের অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হবে। ধর্ষণ বেড়ে যাবে। দুধের বাচ্চা থেকে শুরু করে আশি বছরের বুড়ি⸺কেউই এ নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কারণে-অকারণে মানুষ নিহত হতে থাকবে। প্রকোপ এতটাই বেশি হবে যে, হত্যাকারীও জানবে না, কেন সে হত্যা করছে, আর নিহত ব্যক্তিও জানবে না, কেন তাকে হত্যা করা হচ্ছে। মানুষের অর্থনৈতিকব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। অশ্লীলতার সয়লাব ও চারদিকে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়ে যাবে।

বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীতে যে পরিমাণ বিপর্যয় ও ফিতনা এসেছে, একবিংশ শতাব্দীর মাত্র এ বিশ বছরেই তার কয়েকগুণ বেশি ফিতনা প্রকাশ পেয়েছে। এ মাত্রা আরও দ্রুতই বাড়বে এবং জুলুম তার শেষ স্তরে পৌঁছবে। এরপর প্রতীক্ষিত সে ইমাম আসবেন এবং মহাপ্রলয়ের আগ দিয়ে নতুন করে পৃথিবীতে শান্তির কেতন উড়াবেন।

কিয়ামতের বড় আলামতগুলো প্রকাশ হওয়ার আগে যতগুলো ছোট আলামতের কথা হাদিসে এসেছে, আমাদের অনুসন্ধান মতে তার প্রায় ৯০% আলামতই চলে এসেছে। বর্তমানে ফিতনার যে গতি, তাতে বাকি ১০% পূরণ হতে কতদিন লাগবে, আল্লাহই ভালো জানেন। তবে খুব বেশি যে দেরি নেই, সে কথা হলফ করেই বলা যায়।

সার্বিক বিবেচনায়ই সময়টি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে নাজুক ও ভয়ংকর। যতটা না ভয়ংকর জান ও মালের ক্ষেত্রে, তার চেয়ে শতগুণে বেশি ভয়ংকর ইমান ও আমলের ক্ষেত্রে। এ সময়ে মুমিনরা সকাল-বিকাল কাফির হতে থাকবে। আকিদা-মানহাজ সব গড়বড় হয়ে যাবে। আলিমরা দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত বিক্রি করে দেবে। নামসর্বস্ব আলিম নামের জাহিলরা ধর্মীয় নেতায় পরিণত হয়ে নিজেরাও ধ্বংস হবে এবং অনুসারীদেরও ধ্বংস করবে।

‘কিতাবুল ফিতান’ ও ‘আশরাতুস সাআহ’ অধ্যায়গুলোতে যা পড়েছি, প্রায় সবই আজ বাস্তবে ঘটতে দেখছি। খুব ভয়ে দিন কাটছে। প্রতিদিন ইমানকে যাচাই করে দেখতে হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।

কিয়ামতের আলামত নিয়ে যদি আপনি ভালোভাবে স্ট্যাডি করেন, তাহলে ভয়ে চমকে উঠবেন। আর সাথে যদি শেষ সময়ের যুদ্ধ ও ফিতানের অধ্যায়গুলোও পড়েন, তাহলে দুনিয়া আপনার কাছে একেবারে তুচ্ছ মনে হবে। পার্থিব ক্যারিয়ার, দুনিয়ার মোহ আর সম্পদের আকর্ষণ আপনার অন্তর থেকে উঠে যাবে।

কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হলো, সাধারণরা তো দূরে থাক, অনেক আলিমও এসব অধ্যায় ভালো করে পড়েন না। মাদরাসাগুলোতেও এসব ব্যাপারে আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তাই এসব নিয়ে আলাপ করলেই কিছু মানুষ বিরোধিতা করে বলে যে, কিয়ামত এখনো বহু দেরি আছে! বস্তুত এরা না নিজে সতর্ক হয় আর না মানুষকে সতর্ক হওয়ার সুযোগ দেয়। ফা-খাসিরাতিদ দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।

আল্লাহ আমাদের কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে প্রকাশিত সকল প্রকারের ফিতনা থেকে নিরাপদে রাখুন এবং ইমানের সহিত শ্রেষ্ঠ মৃত্যু দান করুন।

- CLtD

পঠিত : ৬৫৬ বার

মন্তব্য: ০