Alapon

স্বাধীনতা যুদ্ধের তিনটি মৌলিক উদ্দেশ্য আজও বাস্তবায়ন হয়নি...



আজ বিজয় দিবস। জাতির অংশ হিসেবে দিনটা আমার কাছে খুব বেশি স্পেশাল হওয়ার কথা ছিল। স্পেশাল বটে; তবে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নয়, এই দিবসকে উপলক্ষ্য করে অফিস থেকে একটা দিন ছুটি পাওয়া গেছে সেকারণে স্পেশাল। সারাদিন বাসায় শুয়ে, বসে, বই পড়ে, বাসার কিছু টুকটাক কাজ করে আর ‍দূর মাইক থেকে ভেসে আসা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান আর খানিকক্ষণ পর পর ব্ঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনে পার করলাম। সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকার পর এই লেখা শেষ করে হয়তো একটু বাহিরে বের হবো। ধুলো-বালি আর মনুষ্য ইউরিনের গন্ধে ভরা এই ঢাকা শহর নাকি বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সাজানো হয়েছে, মানে লাইটিং করা হয়েছে, বিনোদন হিসেবে সেগুলো দেখতে বেরুবো।

বিজয় দিবস নিয়ে আমার ভিতরে কোনো উচ্ছাস নেই। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে তরুণ প্রজন্মের একটা বড়ো অংশই বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবস নিয়ে খুব একটা আগ্রহ পায় না। দিনগুলোকে আলাদা করে স্পেশাল মনে করতে পারে না। সেই তরুণদের মাঝে আমিও একজন। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। চলুন আপনাদের সেই উত্তরটা জানাই।

১৯৭১ সালে আমরা কেন যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং কোন ধরনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেমেছিলাম, তার একটা ব্যাখ্যা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে ‍ উল্লেখ আছে। ব্যাখ্যাটা হল, "বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি।"।

মোদ্দাকথা জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই ১৯৭১ সালে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক, দেশ স্বাধীন হবার পর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা কতদূর অগ্রসর হতে পেরেছি।

প্রথম কথা হল, জনগণের জন্য সাম্য। জনগণের জন্য সাম্য তখনই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় তখন তাদের মাঝে ন্যায় বিচার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পরও জনগণের জন্য সাম্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তার মানে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম লক্ষ্য এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল, মানবিক মর্যাদা। মানবিক মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে গেলে বিস্তর আলাপ করা যাবে। তবে বিস্তর আলাপে না গিয়ে মানবিক মর্যাদার সবচেয়ে স্পর্শকাতর পয়েন্ট হল, বেঁচে থাকবার অধিকার ও স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা- এতোটুকু কি আমরা অর্জন করতে পেরেছি? সেই উত্তর শুধু আমি কেন, সারা বাংলার মানুষ জানে। এখন আমাদের জীবন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জিম্মি। তারা মন চাইলেই আমাদের গুলি করে প্রাণপাখি কেড়ে নিতে পারে। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এই রাষ্ট্র আমাদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা প্রদান করতে পারেনি। অর্থাৎ আমাদের মানবিক মর্যাদা ভুলণ্ডিত হয়েছে। তার মানে দেখা গেল, মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটাও স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

এবার আসি তৃতীয় উদ্দেশ্য নিয়ে। তৃতীয় উদ্দেশ্য হল, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে কিনা তা জানতে খেয়াল করুন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে কী পরিমাণ হত্যাকান্ড ও বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সেই সাথে কতগুলো নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই সংখ্যাগুলোই বলে দেয়, বাংলাদেশে আজ অবধি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। তার মানে মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় উদ্দেশ্য বাস্তবায়নেও আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।

তাহলে আমরা কতটা স্বাধীন?

আমরা কতটা স্বাধীন হয়েছি, তা বলতে পারছি না। তবে এতোটুকু বলতে পারি, আগে আমাদের শোষণ করতো ইংরেজ আর পাকিস্তানিরা। এখন শোষন করে স্বদেশি শাসকেরা। আগে নির্যাতন করতো পাক হানাদার বাহিনী। এখন নির্যাতন করে বাংলাদেশ পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব)। কিন্তু শোষণের তোষণ ছিল আজও তা রয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর সে কারণেই বিজয় দিবসটাকে ঠিক বিজয় মনে হয় না। যেদিন এই তিনটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে সেই দিনই বিজয় দিবসকে প্রকৃত অর্থে বিজয় বলে মনে হবে না।

পঠিত : ৪৮৯ বার

মন্তব্য: ০