Alapon

মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি এবং কিছু কথা...



রুমী! এক অনন্য শূন্যতার নাম, বিস্তর গভীরতার নাম, বিশাল উচ্চতার নাম। বিদগ্ধ এক দৃষ্টির নাম রুমী! যে দৃষ্টি তাকিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে। সভ্যতা তাঁর পাঠের বিষয়। অদৃশ্য তাঁর আবিষ্কারের প্লট। রুমী তাকালেন প্রখর চোখে, দেখলেন যা কিছু দেখা যায় না।
তিনি দেখলেন, সকল পতন-উত্থান, সব ধ্বংস-সৃষ্টি, এই শীত-বসন্তের বীজ ছড়িয়ে আছে জীবনের খেতে। প্রশান্ত সব আত্মা এই সবের চাষি এবং বিনাশীও। সকল সুন্দর এবং অসুন্দর বয়ে চলছে নিজ সত্তায়।

মানুষ যখন শুদ্ধতার চেতনায় জাগর, তখন সে আসমানি দূত। যখন সে ঐশী সত্যের পিপাসায় ব্যাকুল, তখন সে নবী পথের মোসাফির। যখন সে জ্ঞান, পুণ্য ও কল্যানে ব্রত, তখন সে খোদার রহমত। যখন হৃদয় স্বচ্ছ প্রেমের জোয়ারে উত্তাল, তখন সে প্রভুর প্রেমাষ্পদ।

এই মনুষ্য জীবনারণ্যে আবার শোনা যায় নেকড়েদের হুংকার, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, রাগান্বিত সাপের হিস হিস। এখানে ঘুরেবেড়ায় চতুর শেয়াল, কৃপণ বিড়াল, স্বার্থপর ইঁদুর। এর আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়ায় সর্বভক্ষ্য কাক, সগর্বিত প্যাঁচা। এমন কিছু যার কাছে অসহায় সুস্থের বাহক! অসহায়ত্বের বুকফাটা আর্তনাদে কাঁদছে জমিন, আকাশ। মানুষ নামী দেহ কপাটে রাজ করছে পশুর আত্মা। এখানে পরিবেশিত হচ্ছে সভ্যতার অপমানের চলচিত্র। যা প্রশান্ত আত্মায় ব্যথা দেয়। জাগরণী জোয়ার তোলে।

রুমী এগুলো দেখছিলেন, ব্যথিত হচ্ছিলেন আর জাগ্রত হচ্ছিলেন সকর্মে। মহিমান্বিত একক সত্তায় বিশ্বাসী কবি নিজেকে এমন এক অস্পৃশ্য উচ্চতায় তোলে ধরেছেন যেখানে পৌঁছাতে পারেননি পরবর্তী কোনো কবি সাধক। রুমির অতুলনীয় এক কর্ম 'মসনবি' তাঁর জীবদ্দশায়ই হয়ে ওঠে বিশ্বাসীদের পাথেও। যুগের আবর্তে আজও তা নিজ স্থানে অধিষ্ঠিত সগৌরবে।
জালালুদ্দিন রুমিকে কোনো ব্যক্তি সাধারনের বক্তব্যে আত্মস্থ করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত শব্দে বিস্তর ভাবান্বিত তথ্য। রুমির সানে একদম সাবলিল একটি পরিচয় দিয়েছেন তাঁর নিকট পরবর্তী মহাকবি সুফি সাধক আল্লামা আবদুর রহমান জামী। জামী বলেন 'মসনবি শরীফ' হচ্ছে পারস্যের কোরআন'। একবার রুমী সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জামী বলেন, 'এই মহা মনিষীর ব্যাপারে আমি কি বলবো? তিনি নবী ছিলেন না কিন্তু নবীসুলভ কিতাব নিয়ে জগতে এসেছিলেন।'

একজন সুফি বা একজন কবির জন্য এরচেয়ে বড় স্বীকৃতি আর কী হতে পারে? রুমিকে বিশ্বাসীদের সারি থেকে টেনে বের করতে চাওয়া তথাকথিত সুফিজমিরা এমন একটি উপমা উপস্থাপন করুন যার দ্বারা রুমিকে অবিশ্বাসী হয়ে এমনতরো উচ্চতায় সমাসীন করতে পারে।

আরব, পারস্য, ইউরোপ, আমেরিকা এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষ নিজেকে খোঁজার, নিজেকে বুঝার দর্শন নিয়ে রুমিকে এতোধিক পাঠ করেছে, যা তার পরবর্তী বিখ্যাত কোনো কবি-মহাকবির ব্যাপারে হয়নি! রুমিজমের এই উত্তাল জোয়ার দিনদিন সুস্থ সত্তার পৃথিবীর সীমাপরিসীমায় বিস্তৃত হচ্ছে। এই জোয়ার জীবনকে প্লাবিত করবে এমন প্রত্যাশা।

- আসাদ

পঠিত : ৩৬৩ বার

মন্তব্য: ০