Alapon

মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করার উপায়...



আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কিছু নাম এবং গুণাবলী নিয়ে আমাদের আলোচনা আবারো শুরু করতে যাচ্ছি। আজ আমরা আল্লাহর নামের আরেকটি গ্রুপ নিয়ে আলোচনা শুরু করব যা একটি ক্রিয়া এবং একটি ধারণা প্রকাশ করে। আর সেই ধারণাটি হল 'মাগফিরাহ।' "গাফারা, ইয়াগফিরু, মাগফিরাতান।"

ইসলাম পূর্ব আরবে 'গাফারা' বলতে বোঝাতো কোন কিছু ঢেকে ফেলা। তাহলে 'গাফারা' মানে গোপন করা, 'গাফারা' মানে কোন কিছুর উপর পর্দা দিয়ে ঢেকে ফেলা। শেষমেশ এর দ্বারা বোঝায় - আপনার প্রতি কারো কৃত অন্যায়কে উপেক্ষা করা। আপনি তার ক্ষতিকে লুকিয়ে ফেলেন, তার অন্যায়কে উপেক্ষা করেন। এখান থেকে এর অর্থ করা হয়, ক্ষমা করা। যদিও মূল অর্থ হল, ঢেকে ফেলা, এমন ভান করা যে এর অস্তিত্ব নেই। আপনি এর উপর কিছু বালি দিয়ে ঢেকে ফেলেন, তাই আর এটি দেখতে পান না, এটি গোপন করে ফেলেন।
তাহলে, গাফারা মানে কোন ব্যক্তি আপনার প্রতি যে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল তা উপেক্ষা করা। আপনি তা আচ্ছাদিত করে ফেলেন। ক্লাসিক্যাল আরবিতে হেলমেটের জন্য 'মিগফার' শব্দটি ব্যবহার করা হত। কারণ, আপনি আপনার মাথা ঢেকে ফেলছেন, মাথাকে আচ্ছাদিত করে ফেলছেন। এটিও একই শব্দমূল থেকে এসেছে। গাফারা থেকে মিগফার।

তো, এখানে মূল পয়েন্ট হল, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা নিজেকে এই মাগফিরার গুণে ভূষিত করেছেন। আবারো বলছি, তিন শত এর অধিক আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এই গুণ নিজের প্রতি আরোপ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন - وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ - “আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন?”(৩:১৩৫) আর কে পাপ মুছে দিতে পারে? আজকে আমাদের ক্বারি তিলাওয়াত করেছেন - اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ وَأَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ - “জেনে নাও, নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তি দাতা ও নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল-দয়ালূ।” (5:98) আল্লাহ কুরআনে আরও বলেন - نَبِّئْ عِبَادِي أَنِّي أَنَا الْغَفُورُ الرَّحِيمُ - “আপনি আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল দয়ালু।” (15:49) অতএব, আল্লাহ বিশ্ব জাহানে ঘোষণা করে দিতে চান এবং তিনি চান আমরা যেন চিনতে পারি এবং তিনি চান আমরা যেন বিশ্বাস করি এবং তাঁর এই নামগুলো জেনে রাখি যে - 'নাববি ইবাদি' আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন আমি গাফুর এবং রহিম। তাহলে, আল্লাহ নিজেকে গাফুর নামে আখ্যায়িত করেন।

আর 'গাফারা' থেকে শুধু এই নামটি নির্গত হয়নি। বস্তুত, আল-কুরআনে সাতটি নাম এসেছে যার সবগুলো ক্ষমা করা ক্রিয়া থেকে নির্গত হয়েছে। সাতটি আলাদা বিশেষ্য আল্লাহ নিজের বর্ণনা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন। আর এর সবগুলো নামবাচক বিশেষ্য। আমরা যেমন আমাদের আগের বক্তব্যগুলোতে ব্যাখ্যা করেছি সবগুলো নাম ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহর অসংখ্য নাম রয়েছে। কিছু কিছু নাম ৯৯ নামের অন্তর্ভুক্ত। 'গাফারা' শব্দমূল থেকে যে সাতটি নাম নির্গত হয়েছে তার মাঝে সবচেয়ে কমন হল, আল-গাফুর।

আল কুরআনে আল্লাহর সর্বাধিক ব্যবহৃত নামগুলোর অন্যতম হলো আল-গাফুর। প্রায় ১০০ বার আল-গাফুর কুরআনে এসেছে, সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে, ৯১ বার। আল্লাহর আরেকটি নাম হলো, গা-ফির বা গাফিরুজ-যানব। আর তৃতীয় আরেকটি নাম হলো, আল-গাফ্ফার। তাহলে, আমরা আল্লাহর তিনটি নাম পেলাম, আল-গাফুর, আল-গা-ফির এবং আল-গাফ্ফার। আমি একটু পর এই তিনটি নামের পার্থক্য তুলে ধরবো।

এছাড়াও, চতুর্থ আরেকটি নাম হল, ওয়া-ছিআল মাগফিরাহ, যার ক্ষমা ব্যাপকভাবে বিস্তৃত, যার ক্ষমা অসীম। আল্লাহ যে কোনো পাপ এবং যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। পাঁচ নাম্বারে - আহ্লাল মাগফিরাহ, যিনি ক্ষমা করার অধিকার রাখেন, যিনি ক্ষমা করার গুণে গুণান্বিত। আল্লাহ হলেন আহ্লাল মাগফিরাহ - ক্ষমা করার গুণে ভূষিত হওয়ার অধিকার সবচেয়ে বেশি তাঁর। ছয় নাম্বারে - জুল মাগফিরাহ। আরবিতে জু, জা, জি সবগুলোর অর্থ একই। যেমন, জুল জালালী ওয়াল ইকরাম। ‘জু’ অর্থ কোনো কিছুর মালিক।

জুল-মাগফিরাহ অর্থ ক্ষমার মালিক। এমন সত্ত্বা যার প্রতি মাগফিরাহ আরোপ করা হয়। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা হলেন - সহিবুল মাগফিরাহ, ক্ষমার মালিক। যিনি ক্ষমার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন, প্রকাশ করেন, নিখুঁত করেন। আর একই শব্দ মূল থেকে নির্গত সপ্তম নামটি হলো, খাইরুল গাফিরিন, ক্ষমাকারী মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ।

এখন, গা-ফির, গাফুর এবং গাফফারের মাঝে পার্থক্য কী? কী তারতম্য রয়েছে গা-ফির, গাফুর এবং গাফফারের মধ্যে? এই তিনটি নামের সবগুলোই কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গা-ফির দ্বারা সাধারণ অর্থ প্রকাশ করা হয়। গা-ফির হল সেই সত্ত্বা যিনি ক্ষমা করেন। তো, যিনি ক্ষমা করেন। 'সামেয়া' মানে শোনা। আর 'সা-মে' অর্থ যিনি শোনেন। ক্বামা মানে দাঁড়ানো। আর ক্বা-য়িম অর্থ যিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তাহলে, আল্লাহ হলেন গা-ফিরুজ-যানব যার অর্থঃ আল্লাহ পাপ ক্ষমা করেন।

আল-গাফুর হল এমন একটি বিশেষ্য ফর্ম যা ক্রিয়ার উপর জোর প্রদান করে। ক্বা-য়িম মানে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন। আর ক্বাইউম ক্বা-য়িম এর চেয়ে বেশি বোঝায়। গা-ফির মানে ক্ষমা করা। অন্যদিকে, গাফুর হল সেই সত্ত্বা যার ক্ষমা করার ক্ষমতা আছে - পাপটি যত বড়ই হউক না কেন। অন্য কথায়, গাফুর হল কোয়ালিটির জন্য। পাপটি যত ভয়ঙ্করই হউক না কেন আল-গাফুর এটা ঢেকে দিতে পারেন। পাপটি যত জঘন্যই হউক না কেন, কাজটি যত মন্দই হউক না কেন, আল-গাফুরের সেই ক্ষমতা আছে পাপটি আচ্ছাদিত করার।

আর আল-গাফফার ব্যাকরণগত দিক থেকে এমন নিয়মে গঠিত হয়েছে যার দ্বারা কোন কাজের পুনরাবৃত্তি বোঝায়। 'ফাআআল' ওজনে। আল্লাহ কাজটি করেন, তারপর আবার করেন, তারপর আবার করেন, তারপর আবার করেন। আল্লাহ অনবরত ক্ষমা করতে থাকেন।

তাহলে গাফুর হল কোয়ালিটির জন্য। আর গাফফার হল, কোয়ান্টিটির জন্য। পাপটি যত বিশালই হউক না কেন আল-গাফুর তা ক্ষমা করে দিতে পারেন। পাপটি যত বেশি সংখ্যক বারই করা হউক না কেন আল-গাফফার তা ক্ষমা করে দিতে পারেন।

তাই, ইয়া গাফুর, ইয়া গাফফার নাম ডেকে ডেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

-- শায়েখ ইয়াসির কাদির আলোচনা থেকে।

পঠিত : ৫৩৪ বার

মন্তব্য: ০