Alapon

||চুপ থাকলো যে, নাজাত পেলো সে||

কোন কথায় কে কষ্ট পেয়ে যায়! কোন কথায় কে আঘাত পেয়ে যায়। কোন বাক্য কার বুকে কখন শূলের মতো বিদ্ধ হয়ে যায়। কোন শব্দ কার বুককে বিদীর্ণ করে দেয়,ক্ষত-বিক্ষত করে দেয় বলা মুশকিল! এ-ই জন্যে কথা বলতে হয় হিশেব কষে। মেপে মেপে। আচরণ করতে হয় সচেতন হয়ে। কানখাড়া রেখে...

.

আমি বা আমরা না চাইতে বা না চাইলেও আমাদের আচরণে, আমাদের শব্দচয়নে মানুষ কষ্ট পেয়ে যায়। আঘাত পেয়ে যায়। বুকটা এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে যায়। বুকের বিস্তীর্ণ জমিনে শান্তির চারাগাছগুলো ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। কথার তেজে। বাক্যের প্রখরতায়।

.

মানুষ ভালোটা মনে রাখেনা। ভুলটা রাখে। হাজারো ভালো আচরণ মনে রাখেনা, হৃদয়ে ধারণ করেনা। কিন্তু একটা অনভিপ্রেত কথাকে, সেই কথার দ্বারা প্রাপ্ত কষ্টটাকে ঠিকই মনে রাখে। দীর্ঘদিন।



আবার কিছু কিছু মানুষ তো তা চাইলেও ভুলে যেতে পারে না। সেই যে আঘাত, তা মাঝেমধ্যেই মনে পড়ে। মনে পড়লে সে-সব আঘাতের অনল দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। পুড়িয়ে ঝলসে দেয় বুকের জমিন। হাওয়া করে দেয় মনের প্রশান্তি। তিলে তিলে গড়ে ওঠা সুন্দর সম্পর্ককে কথার তীর নিমিষেই নাশ করে দেয়। হৃদয়ের অন্দর মহলে সৃজন করে এক অবিচ্ছেদ্য বিচ্ছেদ ও ভাঙ্গনের জোয়ার। সেই ভাঙ্গনকে পরে চাইলেই সহজে জোড়া লাগানো যায় না। একী-ভূত করা যায় না।


কাউকে হাত তুলে দুআ করা লাগে না। কাউকে হাত তুলে অভিশাপও করা লাগে না। মনের প্রশান্তিটাই দুআ। মনের যে কষ্ট, সে কষ্টটা-ই অভিশাপ। বদ-দুআ।

.

একটা কথায়-ই কারো হৃদয়ের অলিন্দে ঠাঁই পাবার জন্যে যথেষ্ট। আবার একটা আচরণ কিংবা কথায়ই কারো হৃদয়ের নিভৃত গহীন অরণ্যে ঘৃণার উদ্ভব করার জন্যে যথেষ্ট!
.
আমরা যে-ধরণের খুঁতখুঁতে মানুষ, আমরা সহজেই মানুষের ভুলকে ভুলে যেতে পারিনা। আমরা নিজেরা যদিও হাজারো ভুলের চোরাবালিতে হাবুডুবু খাই, তবুও!

অথচ কথা তো ছিলো আমরা মানুষের ভালোটা মনে রাখবো। ভুলটা ভুলে যাবো। কিন্তু আমরা ভুলটা ভুল করেও ভুলে যাই না। আসোলে ভুলটা তো ভুলে যাবার জন্যেই এসেছে। ভুলটা তো ফেলে দেবার জন্যেই এসেছে। তাই না?

কিন্তু মানুষ তা করে না। তারা আমার ভুলটাকেই বড়ো করে দেখে কষ্ট পায়। অভিশাপ দেয়। আমি সেই অভিশাপে অভিশপ্ত হই। প্রতিনিয়তই..

.

অথচ আমি তো কাউকে কষ্ট দিতে চাই না। কাউকে আঘাত দিতে চাই না। কাউকে কষ্ট দিলে, কাউকে আঘাত করলে পরবর্তীতে নিজেই কষ্ট পাই। ব্যথা পাই। নিজের কাছেই খারাপ লাগে। নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী লাগে। অপরাধবোধে নিজের ভেতরটা জ্বলে ওঠে। পুড়ে যায়। হঠাৎ হঠাৎ আচ্ছামত ধোলাই করতে ইচ্ছে হয়। নিজেকে। নিজের বিবেককে। আত্মাকে....

আমি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই। নিজে কষ্ট পেতে চাই না। কাউকেও কষ্ট দিতে চাই না, কথা দিয়ে। বক্তৃতা দিয়ে। শব্দ দিয়ে। আচরণ দিয়ে।

কী করবো! কী করা যায়! কীভাবে এহেন পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়! আমি মুক্তি চাই। স্বস্তি চাই। ভালোবাসা চাই। সকলের হৃদয়ের অলিন্দে ঠাঁই পেতে চাই। দুআ পেতে চাই। মানুষের। পশুদেরও!

এমন অদ্ভুত অস্থিরতার দোলাচালে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। মগজের ভাঁজে ভাঁজে তখনও চলে এক অবিচ্ছেদ্য কোলাহল। আশ্চর্য রকমের এক অস্থিরতার দৌঁড়ঝাপ। এমন সময় হুট করেই মনে পড়ে গেলো ছোট্টো বেলায় মুখস্থ করা একটা হাদিস
مَنْ صَمَتَ نَجَا.

যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়। সে বেঁচে যায়। (-জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫০১)

এই যেনো আমাকেই উদ্দেশ্য করে হাদিসটা বলেছেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লাম। আমি যেনো হুটহাট কথা না বলে মানুষের কষ্টের কারণ না হই। দুঃখের কারণ না হই। নিজেও যেনো স্বস্তিতে থাকি। মুক্তির পথে থাকি। অন্যকেও রাখি। আজ আমি বুঝতে আর উপলব্ধি করতে শিখেছি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু অা'লাইহি ওয়াসাল্লামোর হাদিসের মর্মটা! কিন্তু বুঝলেও আমি আমল যে করতে পারছি না...


||চুপ থাকলো যে, নাজাত পেলো সে||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

[নিজেকে নাসীহা]

পঠিত : ৮২৪২ বার

মন্তব্য: ০