Alapon

ডিভোর্সের উচ্চ হার এবং কিছু কথা...



সবথেকে নিকৃষ্ট হালাল বস্তু, "তালাক!" গতবছরের তুলনায় এবছরে কয়েকগুন বেশি ডিভোর্সের আবেদন এসেছে। শুধু এটাই নয় গত ৮বছরে ৭৪হাজার সংসার ভেঙেছে। এবার সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গেছে।

সমাজে ডিভোর্সী মেয়েদেরকে অন্যরকম নজরে দেখা হয়৷ এরপরও ৭০% ডিভোর্সের আবেদন এসেছে স্ত্রীদের থেকে, আরো তো কত শত মা বোন শুধুমাত্র সমাজের ভয়ে সংসার করছে তার তো ইয়ত্তাই নেই। আর যারা ডিভোর্স দিয়েছে তারা যে কারণ গুলো দেখিয়েছি তার মধ্যে অন্যতম চারটি ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এখনো যৌতুকের জন্য সমাজ থেমে আছে। দ্বায় এড়ানোর জন্য, শিক্ষিত সমাজের মুখ বন্ধ করার জন্য মেয়ের বাবা এখন হাদিয়া দিতে শিখেছে। আলাদা করে চাইতে হয়না৷

দিনের পর দিন অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক আমি আপনি কেউ মেনে নিব না৷ অথচ আমি শুনেছি, দেখেছি, চেনা জানা পরিচিত বোনেরা কিভাবে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে তা অনুভব করেছি। এই স্বামীগুলো স্বামী হিসেবে এতটাই জাহেল।

আবার এমনও আছে যেসকল বোনেরা সংসারের চেয়ে বাইরের জগতকে প্রাধান্য দেয় বেশি৷ এর সাথে নারীবাদিদের আরো একটি কথা যোগ করে দিই তা হলো স্বাধীনতার অভাব।

খালু মারা যাবার ৪বছর পর খালামনি খুব আবেগ নিয়ে আমাকে বলেছিলো "একবার যদি জানাতে পারতাম আমি আপনারই আছি সেই আগের মতোই"-এটুকু বলে হুঁ হুঁ করে কেঁদে দিলেন। যখন মারা যায় তখন আমার ছোট ভাইটার বয়স ৬,বোনটার বয়স ৩.৫। কখনো আলাদা করে সংসারের কথা ভাবেননি।

তার সম্মান ইসলামে কতটুকু শুনবেন?

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, আমিই ঐ ব্যক্তি যার জন্য সর্ব প্রথম জান্নাতের দরজা খোলা হবে। কিন্তু এক মহিলা এসে আমার আগে জান্নাতে যেতে চাইবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করবো যে, তোমার কি হল? তুমি কে? তখন সে বলবে, আমি ঐ মহিলা যে স্বীয় এতিম বাচ্চার লালন পালনের জন্য নিজেকে আটকে রেখেছে [বিবাহ করা থেকে]। (মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৬৬৫১)

এবার আসি দুনিয়ায় স্বামী স্ত্রীর প্রতি আমাদের মহব্বত কতটুকু? ইসলামে নারীদের যতটুকু সম্মান দেয়া হয়েছে তা আজ পুরুষ সমাজ দিতে অক্ষম।অন্যদিকে পুরুষের সমান অধিকার পেতে উঠেপড়ে লেগেছে তথাকথিত ফেমিনিস্ট নারীসমাজ। এই দুইয়ের ফলাফল আজ ডিভোর্স, তালাকের মতো জঘন্য হালাল প্রথা৷ স্বামী-স্ত্রী নিজেদের অর্ধেক দ্বীন আর নেই, যে যার নিজের পরিচয়ে বাঁচতে শিখছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের অধিকার বেশি — এটা নারীবাদীদের হজম হয় না। তারা কেরআনের কিছু আয়াত দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, ইসলাম কোনোভাবেই নারীদের সমান অধিকার দেয় না, নারীদেরকে পুরুষদের অধীন করে রাখে, ব্যাক্তি স্বাধীনতা দেয় না ইত্যাদি।

প্রথমত ইসলামে পুরুষ এবং নারীর অধিকার এক নয়। আল্লাহ পুরুষ এবং নারীর প্রতি ন্যায় করেছেন, কিন্তু ন্যায় করা মানেই সমান অধিকার দেওয়া নয়। যদি সব ব্যাপারে পুরুষ এবং নারীদের সমান অধিকার দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত হতো, তাহলে পুরুষ এবং নারীদের সবদিক থেকে দায়িত্ব, জীবন যাপনের পদ্ধতি, কাজ সবকিছু একই হতো তবে।

অন্যদিকে গতকাল খবরের শীর্ষে যে লিখাটি ছিলো,তা হচ্ছে "ইফতারে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি না পেয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে"।।

অথচ আল্লাহ তাআ'লা বলেন,"‘নারীগণ তোমাদের পোশাক এবং তোমরাও নারীদের পোশাক.." (সূরা বাকারা,আয়াত ১৮৭)

প্রতিদিন শত শত বোনের হৃদয়ভাঙা আহাজারি শুনতে শুনতে অন্তর কঠোর হয়ে যাচ্ছে৷কেন? স্বামী হক্ব আদায় করেন না, কোনোভাবেই আর আগের মতো আকর্ষন আসেনা স্ত্রীর প্রতি,মনোযোগ অন্য দিকে। হয়ত অনেক ভাইদের ক্ষেত্রেও এমন অভিযোগ আছে।

একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংসার থাকে দৈহিক চাহিদা এবং সৌন্দর্যের উপর নির্ভর করে। এরপর আসে সমঝোতা,দায়িত্ব, নির্ভরশীলতা।পরিবারের সদস্য, সন্তান লালনপালন করে দিনগুলো টেনে লম্বা করে নেয়া যায়৷ শুধু দুজন মানুষের উপর নির্ভর করে একটি সংসার চলে না, পাশাপাশি আছে ইসলামিক জীবনব্যবস্থা। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন,যখন এই হালাল নিয়ামত(স্বামী/স্ত্রী) আর ভালো লাগেনা।মন চলে যায় হারামের দিকে।

ফলাফল, তালাক! তালাক!তালাক! স্বামীর অবাধ্যতা,স্ত্রীর প্রতি জুলুম। অন্যায়ভাবে কারো হক্ব নষ্ট করে কিয়ামতের দিন কি পার পাওয়া সম্ভব?

"তবে যদি তারা তালাকে অটল থাকে, তাহলে মনে রেখো, আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন।"[আল-বাক্বারাহ ২২৭]

আজ যে সুখের জন্য নিজের জীবনসঙ্গী থেকে আলাদা হতে হচ্ছে, সেই সুখ কি জান্নাতের চেয়েও বিশাল? এইতো কিছুদিনের দুনিয়া, কয়েক মুহূর্ত। যদি ত্রুটিমুক্ত কিছু আশা করি তবে তা জান্নাতে ইনশাআল্লাহ্।

যদি নিজের কাছের মানুষটা হারিয়ে যায়? তাদেরকে আল্লাহ তাআ'লা নিয়ে যান? হতেই পারে, আল্লাহ তাআ'লাই উত্তম পরিকল্পনাকারী। নিজের অবসর সময়টুকু তো স্বামী অথবা স্ত্রীকে দেয়া যায়!

একটি উত্তম ইবাদাত!!

তা না হলে দিন দিন বাড়তেই থাকবে এই নিকৃষ্ট হালালপ্রথা "তালাক"..

আল্লাহ তাআ'লা হেফাজত করুক, কিয়ামতের দিনের হিসাব নিকাশ সহজ করুক৷

- নওশিন

পঠিত : ৮১৪ বার

মন্তব্য: ০