Alapon

ডিভোর্সের ক্ষেত্রে নারীদেরকেই অগ্রগামী দেখা যাচ্ছে কেন...?



২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রথম আলো পত্রিকা ডিভোর্স নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় প্রতি ঘন্টায় ১টি করে ডিভোর্স হয়। সেই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার ঠিক দুই বছর পর প্রথম আলো আবারও ডিভোর্স নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় দৈনিক ৩৯ টি করে ডিভোর্স হচ্ছে। আর এই ডিভোর্সের মধ্যে ৭০%-ই নারীদের পক্ষ থেকে হচ্ছে।

অর্থাৎ নারীদেরকেই ডিভোর্সের ব্যাপারে অগ্রগামী দেখা যাচ্ছে।

ডিভোর্সের হার বৃদ্ধি পাওয়া ও নারীদের পক্ষ থেকেই ডিভোর্স চাওয়ার হার বেশি হওয়ার কারণ নিয়ে বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা বিজ্ঞ বিজ্ঞ কথা বলবেন নিশ্চয়ই। আমি বিজ্ঞ বিজ্ঞ কথা বলব না, দুটো ঘটনা বলব।

ঘটনা নং- ১
লোকটার নাম লোকমান। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন, বাড়ি নওগাঁ। চাকরি পাওয়ার কিছুদিন পর বাবা-মা তাকে বিয়ে দেয়। তার বউ তখন সদ্য এইচএসসি পরীক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর দেখা গেল, তার বউ বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে। তখন তার বউ আবদার করল, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য কোচিং করবে। যদিও তখন লোকমানের বাবা-মা নিষেধ করেছিল। এমনকি তার বন্ধুরা বলেছিল, ‘আর পড়াশোনার করানোর দরকার নেই। বেশি পড়াশোনা করলে পরে তোকেই পাত্তা দিবে না।’
কিন্তু বাবা-মায়ের নিষেধ আর বন্ধুদের পরামর্শ উপেক্ষা করে লোকমান সাহেব তার বউকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করান। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ান। ভর্তি পরীক্ষা শেষে যখন রেজাল্ট প্রকাশিত হল, তখন দেখা গেল তার বউ জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। চান্স পাওয়ার পর এবার ভর্তি হওয়ার পালা। লোকমান সাহেব যখন তার বউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে যাবেন, তখন লোকমান সাহেবের স্ত্রীর আপন বড়ো ভাই লোকমান সাহেবের সাথে আলাদা করে দেখা করেন। দেখা করে বলেন, তিনি যেন তার বউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না করান।

কিন্তু লোকমান সাহেব বউয়ের আবদার ফেলতে পারেননি। লোকমান সাহেব সকলের মতের বিপক্ষে গিয়ে বউকে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করালেন। ভর্তি করানোর পর বউকে হোস্টেলে রাখলেন। কারণ, তার চাকরিস্থল ছিল ঢাকার বাহিরে। এভাবে কেটে যায় চার বছর।

এই চার বছরে লোকমান সাহেব তার বউয়ের মাঝে আমূল পরিবর্তন দেখতে পায়। প্রথমদিকে লোকমান সাহেব যখন তাকে হোস্টেলে দেখতে আসতো, তখন সে ভীষণ খুশি হতো। কিন্তু এখন সে বিরক্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা করতে চায় না, বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। এরপর একদিন লোকমান সাহেবের বউ তাকে না জানিয়ে হোস্টেল থেকে বাবার বাড়ি চলে যায়। তারপর লোকমান সাহেব তার সাথে দেখা করতে গেলে সে জানায়, তার পক্ষে এই সংসার করা সম্ভব নয়। কারণ, সে একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট হয়ে ডিগ্রী পাশ স্বামীর সাথে সংসার করতে পারবে না!

ঘটনা নং-২

মেয়েটার নাম সুমি। ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বড়ো হয়ে ডাক্তার হবে। সে ইন্টারমিডিয়েটে পড়া অবস্থায় হঠাৎ করে তার বাবা মারা যায়। মেয়েটা তখন প্রায় অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সুমির মা তাকে তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়। সুমির বর একটা ছোটখাটো চাকরি করতো।

এরপর সুমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ‘রেটিনা’-তে মেডিকেল কোচিং-এ ভর্তি হয়। এরই মাঝে তার এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট হয় এবং সে কাঙিক্ষত রেজাল্ট করে। এরপর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দেয় এবং সে সে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্সও পেয়ে যায়। তারপর তার মেডিকেলে পড়াশোনা শুরু হয়। মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর সুমি বেশিরভাগ সময় হোস্টেলেই থাকতো।

দেখতে দেখতে সুমির ইন্টার্নিশীপ চলে আসল। সুমি যখন ইন্টার্নি করা শুরু করল, তখন সে তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিল। তারপর জল বহুদূর গড়ালো। দুই পক্ষের পরিবার সমাধানের লক্ষ্যে একসাথে বসল। সেই মিটিংয়ে সুমি বলল, ‘আমার একজন অভিভাবকের দরকার ছিল, তখন তিনি আমার অভিভাবক হয়েছিলেন। এজন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু একজন এমবিবিএস ডাক্তার হয়ে আমি তার ঘর করতে পারবো না। আমি একজন ডাক্তার, সংসারও করবো নিশ্চয়ই কোনো ডাক্তারের সাথে।’ এরপর সুমি তার স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়।

উপরের দুটি ঘটনাই সত্য ঘটনা। আশা করছি, উল্লেখিত ঘটনা দুটো থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারবেন, নারীদের পক্ষ থেকেই ডিভোর্স চাওয়ার হার বেশি কেন!

পঠিত : ৫০৮ বার

মন্তব্য: ০