Alapon

আমি ‘মায়ায়’ পড়তে চাই।

তরুনী এক পাগলির কথা বলছি। পরনে ছেড়া কাপর। ওড়নাটা গলার এক পাশে কোন রকম আটকে আছে। আর বাকিটুকু রাস্তায় গড়ানি খেতে খেতে যতোটুকু সম্ভব ময়লাগুলো সঙ্গে বাজারের পানে চলেছে। হঠাৎই পাগলি মেয়েটা চিৎকার করতে শুরু করে। চিৎকার করার এক পর্যায়ে নিজেই নিজের জামা ছিড়তে শুরু করে। তারপর এক সময় পাগলি মেয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে যায়।


তরুনীর উন্মক্ত বক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে বাজারের কয়েকশত মানুষ। তাদের চোখের চাহুনী দিয়েই যেন মেয়েটিকে আস্ত খেয়ে ফেলবে। এমন সময় মোড়ের দোকান থেকে পান নিয়ে মুখের এক কোনায় ঠেলা দিতে দিতে বুড়ো বয়সের লোকটি বাকা হাসি দিয়ে বলল, ‘পাগলির শইল আজ গরম অইছে নাকি রে...’



ব্যাস! বইটি বন্ধ করে দিয়ে আমি আবারো হাটার জন্য রাস্তায় চলে আসলাম। উপরক্ত ঘটনাটি চারন সাংবাদিকখ্যাত মোনাজাত উদ্দিনের কোন এক বই এর ঘটনা। বইটির ভিতরে গ্রামীণ জনপদের নিরেট জীবনবোধে যখন প্রবেশ করলাম তখনই ধাম করে বইটি বন্ধ করে দিলাম। খুউব পড়তে ইচ্ছে করছে কিন্তু পড়ব না। আগ্রহটা জমা থাকুক। এই আগ্রহই বইটির প্রতি মায়া সৃষ্টি করবে। সেই মায়াই হয়তো শত ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে সপ্তাহে অন্তত দিনের এক ঘন্টা হলেও আমাকে পাবলিক লাইব্রেরীতে টেনে আনবে...


কিছুদিন আগে হঠাৎ মাঝরাতে দাদার বাসায় উপস্থিত হলাম। দাদার সঙ্গে দেখা প্রায় ৪ বছর পর। বাসায় গিয়েই বালিশটা টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। দাদা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। চিন্তা করলাম ভুলটুল কিছু করে ফেললাম না তো!


পাগল মানুষ! তাই হয়তো বিবেচনা খারাপ। বললাম, ‘দাদা আমি অসামাজিক জীব! তাই শ্রদ্ধা ভক্তির তোয়াক্কা না করে আপনার বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছু মনে কইরেন না। অবশ্য মনে করলেও কিছু করার নাই।’


তারপর ৪০ মিনিট ধরে দাদার দুই কানের তেরোটা বাজিয়ে লেকচার দিয়ে ফেললাম। দাদা চুপ করে শুধু শুনেই গেলেন। কিছু বলার আর সুযোগ হল না। আসলে আমিই সুযোগ দেই নি। কারণ, একদিনে সব শেষ হয়ে গেলে আগ্রহ হারিয়ে যাবে। মায়া হারিয়ে যাবে। মায়াটা আরো অনেকদিন থাকুক। এই মায়াই হয়তো আবারো কোন এক মধ্যরাতে দাদার বাসায় আমার উপস্থিতি জানান দিবে...


মায়া! এই মায়ার কথা কেন বলছি জানেন?
আবার আব্বা-আম্মার সংসার জীবনের প্রায় ৩৬ বছর হতে চলল। এই দির্ঘ ৩৬ টি বছরই কি তাঁরা ভালোবাসার কারণে থাকতে পারছেন? নাহ! ভালোবাসা একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়। সেই ভালোবাসা সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মায়ায় রূপ ধারণ করে। এই মায়াই তাদেরকে যুগের পর যুগ হাসি-কান্নার ভিতর দিয়ে সংসারে মনোযোগী রাখে। ভালোবাসার শেষ আছে কিন্তু মায়ার শেষ নেই। মানুষ মৃত্যু বরণ করার পর তার প্রতি ভালোবাসাটা কোন একদিন হয়তো ফুরিয়ে যায়। কিন্তু মায়া ফুরিয়ে যায় না। কিন্তু মায়ার কারণেই আমৃত্যু তাকে স্মরণ রাখে...


তাই আমিও সবখানে মায়া খুঁজি। আমি আমার ল্যাপটপটার মাঝে যেমন মায়া খুঁজি, তেমনি আমার মোবাইলটার মাঝেও মায়া খুঁজি। আমি সবচে বেশি মায়া খুুঁজি বই এর পাতার ভিতরে। বই এর প্রতিটা পাতার ভিতরে থাকে মায়া! অসংখ্য মায়া। সেই মায়াই আমাকে দিনদিন সভ্যতা শেখাচ্ছে। একটু একটু করে সভ্য মানুষ হবার শিক্ষা দিচ্ছে...
তাই তো বলি, আমি প্রেমে পড়তে চাই না। আমি মায়ায় পড়তে চাই। 


পঠিত : ৮১৫ বার

মন্তব্য: ০