Alapon

আল্লাহর কাছে কে VIP?

একটা হাদিস শুনিয়ে কথাটা শুরু করি।

রাসূলে কারীম সা. বলেন-

“যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন আল্লাহর কাছে বলে না, আল্লাহ তার প্রতি ক্ষেপে যান।”-তিরমিযি ৩৩৭৩

আমাদের সবথেকে প্রিয়জনেরাও আমাদের কাছে কয়েকবার চাইলে আমরা ত্যাক্ত হয়ে যাই। দুনিয়ার কারো কাছে চাইতে থাকলে সবথেকে উদার দাতাও একসময় বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের রব এমন এক সত্ত্বা যিনি চান মানুষ তার কাছে চাক। বেশী বেশী বলুক, “আমার এটা দরকার, ঐটা দরকার, সুখ দরকার, শিফা দরকার, টাকা দরকার এই দরকার সেই দরকার।”

তিনি দিতে ভালোবাসেন। মজার বিষয় হলো, না চাইলে তিনি রাগ করেন। কেমন রাগ করেন জানেন? ভয়ঙ্কর রাগ। তার কাছে না চাওয়াটাকে তিনি তাকাব্বুরি মনে করেন।

আল্লাহ এব্যাপারে বলেন:

“তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব। যারা অহংকারবশে আমার ইবাদত থেকে বিরত থাকে; লাঞ্ছিত হয়ে এরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (সূরাঃ গাফির ৬০)

আয়াতখানার ব্যাখ্যায় তাফসীরকারকগণ বলেন, ‘ইবাদত’ এখানে ‘দুআ’র সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর দু’আ মানে হলো চাওয়া। সাধারণ চাওয়া আর দু’আ শব্দের ‘চাওয়া’র মাঝে পার্থক্য আছে। দু’আ মানে নিজেকে কারো সম্পূর্ণ মুখাপেক্ষী মনে করে সওয়ালের হাত প্রসারিত করা। বলা বাহুল্য এটা কেবল আল্লাহর সামনেই করা যায়। আল্লাহর কাছে না চাইলে আল্লাহ এমনভাবেই রাগ করেন। যে রাগের বহিপ্রকাশ হলো একেবারে জাহান্নাম তাও আবার লাঞ্ছিত অপদস্থ হয়ে।

রাসূল সা. বলেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন বলে না, আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হন”-তিরমিযি৩৩৭৩

আরেকটা মজার বিষয় হলো, চাওয়াটা দুনিয়ার দৃষ্টিতে “লজ্জা’র বিষয় হলেও আল্লাহর কাছে চাওয়াটা সম্মানজক।

রাসূলে করীম সাঃ বলেন:

“দু’আ বা চাওয়া অপেক্ষা আল্লাহর কাছে সম্মানজনক কোন বিষয় নেই”-তিরমিযি ৩৩৭০

বুঝেন তাহলে, চাওয়াটাও সম্মান। এর থেকে বড় অফার আর কী হতে পারে বলেন? আল্লাহ আসলে আমাদেরকে দেয়ার জন্য মুখীয়ে আছেন। একটু চাইতে হবে আরকি। যদিও তিনি না চাইলেও দেন। তার বিরোধীতা করলেও দেন। যেমন ধরেন, আপনি গান শুনেন কিন্তু বধির হয়ে যান না। অশ্লীল দৃশ্য দেখলেও অন্ধ হয়ে যান না, এভাবে আরো কতভাবে তিনি আমাদের দিয়েই যাচ্ছেন।

দু’আ করলেই লাভ। মানে চাইলেই লাভ। উদ্দিষ্ট বস্তু পান কিবা না-ই পান। কিভাবে জানেন? তাহলে নবীজী সা. এর মুখেই শুনুন এই সে কথ।

রাসূলে করীম সা. বলেন:

“আল্লাহর কাছে কেউ কিছু যখন চায়, আল্লাহ তাকে তাই দেন, অথবা অনুরূপ খারাপ কিছু তার থেকে দূরে রাখেন।” –তিরমিযি

আর দুনিয়াতে এর ফল যদি না-ই পান তাহলে 'মুসনাদে আহমদের' এই হাদিস “দু’আ হলো ইবাদত” এর প্রেক্ষিতে আপনার আমলনামায় এবাদতের সাওয়াব পাহাড় তো জমতে থাকবেই। সুতরাং লস নেই ভাই। চাইলেই লাভ। এমনই লাভ হবে যে, যার হিসাব পরিমাণ করতে পারবেন না; সুপার কম্পিউটার দিয়েও না।

আর সব ইবাদাতের জন্য একটা প্রি শর্ত লাগে। যেমন, সালাতের জন্য অজু, যাকাতের জন্য মাল, হজ্বের জন্য সামর্থ ইত্যাদি। কিন্তু দু’আ এমন একটা সিম্পল ইবাদত যে এর জন্য প্রি-কন্ডিশান বলতে কিছু নাই। বনে, রণে যেখানেই যে অবস্থাতেই থাকেন না কেন। শুধু মুখে বা অন্তরে বিড়বিড় করে আপনার প্রয়োজন আওড়াতে থাকবেন ব্যাস। ইবাদত শুরু হয়ে গেল। যতক্ষণ বলবেন ততক্ষণ ইবাদতের সাওয়াব লিখা হতে থাকবে।

এবার আসল কথা আসি। আল্লাহর কাছে 'ভিআইপি' (VIP) হতে চান? তাহলে একটামাত্র মাধ্যম আছে। আল্লাহ নিজে তার কাছে ভিআইপি হবার থিওরি প্রকাশ করে দিয়েছেন। সেটার মহামূল্যবান থিওরি সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

আল্লাহ বলেন:

“বলুন, তোমরা যদি দু’আ না করো (চাও) আমার রব তোমাদের গুরুত্ব দিয়ে কি করবেন?”-সূরা ফুরকান ৭৭

আয়াতের তাফসীরে এ ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা আছে। তো আল্লাহর চোখে অনন্য মানে ভিআইপি হতে চাইলে আজকে মানে এখন থেকেই চাওয়া শুরু করতে হবে। মানে যত বেশী চাইবো তত আল্লাহর চোখে আমি আলাদা। 'ভিভিআইপি' (VVIP) আরকি।

কথা হলো কী চাইবো? কী বেশী চাইবো? আসলে সবই চাইতে হবে। একটা দুর্বল হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল সা. বলেন,

“তোমাদের সকলেই যেন তার রবের নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করে, এমনকি তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলেও তার জন্যও তাঁর নিকটে প্রার্থনা করে।”-তিরমিযি ৩৬০৪

ইন্টারেস্টিং একটা কথা দিয়ে আজকের পর্বটা শেষ করি। আপনি কি চান আপনার ভাগ্য পরিবর্তন করতে? আসন্ন ঝামেলা থেকে নিজেকে কি দূরে সরাতে চান? আপনি কি চান আপনার জীবন হয়ে উঠুক নিরাপদ? তবে হাদিসটি আপনার জন্য।

রাসূলে আকরাম সা. বলেন:

“একমাত্র দু’আ-ই পারে ভাগ্যকে রদ (পরিবর্তন) করতে।” –ইবনে মাজাহ ৪০২২

খুশি তো? তো দেরী কিসের চলুন তাকাব্বুরি বাদ দিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করি। নিজের হীনতা দীনতা প্রদর্শন করে তার সম্মানের পাত্র হয়ে তার চোখে হয়ে উঠি ভিআইপি। লেটস স্টার্ট!! রাব্বানা তাকাব্বাল মিন্নী!

ফেসবুক লিংক https://m.facebook.com/groups/Minbarbd/permalink/638662666845817/

পঠিত : ৫৬৪ বার

মন্তব্য: ০