Alapon

স্বল্পতার মাহাত্ম্য

রাসূল সা. বলেন:

“আদম সন্তান দু’টি জিনিসকে অপছন্দ করে। ১, মৃত্যু, অথচ মু’মিমের জন্য ফিতনা থেকে মৃত্যুই উত্তম । ২, স্বল্প সম্পদ, অথচ সম্পদের স্বল্পতাই হিসাবের জন্য কম (সহজ)।” [মুসনাদে আহমাদ ২৩৬২৫]

চলুন এবার আপনাদের নিয়ে একটা এক্সাম হল থেকে ঘুরে আসি। যেখানে দু’ধরণের প্রশ্ন আছে। একটা সহজ সেট আরেকটা কঠিন। এবং পরীক্ষার পাশ করলে উভয়ের জন্য পুরস্কার একই। এখানে পরীক্ষার্থী যে কোন সেট নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারে। বুদ্ধিমান পরীক্ষার্থী যারা তারা কোন সেট চয়েজ করবে সেটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি। এবার আসুন আমাদের সাথে মিলিয়ে নিই।

আল্লাহ বলেন:
“যাদেরকে আমি পরীক্ষা করার জন্য পার্থিব সৌন্দর্য-স্বরূপ ভোগ বিলাসের উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি কখনোই তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করবে না। তোমার প্রতিপালকের জীবিকাই উতকৃষ্টতর আর স্থায়ী।” [সূরা ত্ব-হা: ১৩১]

আয়াতের ভাষ্যানুযায়ী, আমরা দুনিয়াতে একটা এক্সামের মধ্য দিয়ে কাটাচ্ছি। সম্পদের পরিমান কম হলে প্রশ্নটা সহজ, আর বেশী হলে কঠিন। একটু আগে আমরা পরীক্ষার হলে বুদ্ধিমত্ত্বা প্রদর্শন করলেও বাস্তবিক লাইফে আমরা কিন্তু একেবারেই উল্টো। আমরা জেনেশুনে সম্পদের আধিক্য চাই। অথচ আধিক্য চাওয়া মানে, আমরা স্বেচ্ছায় আমাদের প্রশ্নপত্রটা কঠিন করে দিচ্ছি।

এবার আসুন কেয়ামতের মাঠ থেকে ধনবানদের একটু দেখে আসি, দেখি তারা কি অবস্থায় আছে। কেয়ামতের মাঠে আপনি দেখতে পাবেন যারা কম সম্পদের মালিক ছিল তারা মোটামোটি হিসাব চুকিয়ে জান্নাতে চলে গেছে। আর যারা জাহান্নামে যাওয়ার তাদেরকেও সেখানে নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মাঠে কেবল একটা দলকে আপনি দেখতে পাবেন। এরা ধনিক বুর্জোয়া শ্রেণী। টাকা পয়সা অঢেল ছিল তাই পাই পাই করে হিসেব নেয়ার জন্য আটকা পড়ে আছে।

রাসূল সা. বলেন-

“আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাঁরা অধিকাংশই গরীব-মিসকীন; অথচ ধনবানরা আটকা পড়ে আছে।“ [মুসলিম-২৬/২৭৩৬]

মানে এদের যারা জান্নাতে যাবে তাদেরকে তাদের মালের হিসাব চুকিয়ে তারপর জান্নাতে যেতে হবে। বুঝেন কি একটা ঝামেলায় তাঁরা পড়বেন।

দুনিয়াতে যারা ধনিক শ্রেণী তাঁরা, আপনি কিংবা আমি আমাদের সবাইকে আল্লাহ সাহায্য করেন; রিযিক দেন। কাদের জন্য জানেন? এই ক্রেডিটটা আল্লাহর রাসূল সা. দরিদ্রকে দিয়েছেন। ধনিক বুর্জোয়া শ্রেণীর লোক এবং আমরা সবাই এই দরিদ্র লোকদের কাছে ঋণী। কিভাবে জানেন? হাদিসটি পড়ুন।

রাসূলে করীম সা. বলেন-

“আমার জন্য তোমরা দুর্বলদের খোঁজে আনো, তোমাদের দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।” [আবু দাউদ ২৫৯৪]

ইসলামে অল্প সম্পদকে প্রমোট করা হয়েছে। এজন্য যারা ধনকুবের তাদেরকে ইসলাম ধনী বা সম্পদশালী বলে স্বীকৃতি দেয়নি। কারণ সম্পদ মাত্রই ফিতনার মাধ্যম। বুখারীর হাদিসে প্রকৃত ধনকুবেরের পরিচয় এভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

রাসূলে আকরাম সা. বলেন-

“বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনবত্তা নয়, প্রকৃত ধনবত্তা হল অন্তরের ধনবত্তা।” [বুখারী-৬৪৪৬]

সুতরাং হতেই পারে আপনার সম্পত্তি অঢেল থাকা সত্বেও যদি আপনার অন্তর প্রশস্ত না থাকে, আপনি আল্লাহর চোখে মোটেও ধনকুবের নন।

হাদিসে যাদেরকে সফলকাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণী হলেন অল্প সম্পদের মালিকগণ। তবে এর সাথে একটা কন্ডিশান আছে। সেটা হলো তাকে তুষ্ট থাকতে হবে। সম্পদের মোহ নয় বরং আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত সম্পদের উপর সন্তুষ্ট থাকাকে আল্লাহর রসূল সফলকাম বলে উল্লেখ করেন।

রসূলে কারীম সা. বলেন-
“সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।” [মুসলিম-১০৫৪]

এখন যারা ধনী বা বুর্জোয়া শ্রেণী আছেন তাঁরা হয়তো মন খারাপ করে বসে আছেন। তাদের মন খারাপের কিছু নেই। আপনাদের মন ভালো করে দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করবো। আপনাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। শুনুন তাহলে।

রাসূলে আকরাম সা. বলেন-

“কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ
(১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছে, অতঃপর তাকে হক পথে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন।
এবং
(২)ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত (প্রজ্ঞা) দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।” [সহীহ বুখারী-৭৩,১৪০৯]

সুতরাং আপনারা আল্লাহর পথে বেশী করে দান করুন আর বেশী থেকে বেশী শোকরিয়া আদায় করুন। তাহলে আল্লাহ আপনাদের সম্পদ আরো বাড়িয়ে দিবেন। এ ওয়াদা কুরআনে দেয়া আছে।

আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা বলেন-

“তোমরা শোকরিয়া আদায় করলে আদায় করলে আমি অবশ্যই তোমাদের অধিক দান করবো। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে আমার শাস্তি কিন্তু খুবই কঠোর।” [সূরা ইব্রাহীম-৭]


~শরীফুল ইসলাম

পঠিত : ২৮৪ বার

মন্তব্য: ০