Alapon

চাকুরীজীবী মেয়েরা কেন বেকার ছেলে বিয়ে করে না...?



ফেসবুকের কল্যানে প্রায়ই একটা পোষ্ট দেখতে হয় একজন চাকুরীজীবী ছেলে যদি বেকার মেয়েকে বিয়ে করতে পারে, তবে কেন একজন চাকুরীজীবী মেয়ে বেকার ছেলে বিয়ে করবে না? চাকুরীজীবী মেয়েরা কেন চাকুরীজীবী ছেলে খুজবে? তবে বেকারদের কি হবে?

এখন অবশ্য চায়ের আড্ডায় আলোচনা বা চাকুরীজীবী মেয়েদের সরাসরি ও শুনতে হয়, তুমি তো চাকুরি করই তবে একজন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলো। ছেলেকে চাকুরী করতে হবে এমন কেন?একটা ব্যবসা দিয়ে দিবে তবেই হলো!

আমার মনে কিছু প্রশ্ন প্রায় ঘোরপাক খায়,,সেটা হচ্ছে

১। চাকুরীজীবী ছেলেরা কি বেকার মেয়ে বিয়ে করে, মেয়েদের বেকারত্ব বা তাদের অসহায়ত্ব দেখে নাকি নিজেদের সুবিধার জন্য বা তেমনটা তারা চায়?
২। একজন বেকার মেয়ে যখন কারো স্ত্রী বা কোন সংসারে বউ হয়ে যায় তখন কি সে বেকারই থাকে নাকি তাকে বেকার হিসেবে পায়ের উপর পা তুলে খাওয়া?
৩। একজন মেয়ে বেকার হয়ে ঘরের স্ত্রী, ভাবি, বা বউ এর যে দ্বায়িত্ব পালন করে তা একজন বেকার পুরুষ কি সেসব দ্বায়িত্ব পালন করবে?

আমার এই প্রশ্নগুলোর সব উত্তর না হবে। আমরা জানি বেকার মেয়ে পুরুষ বিয়ে করে তার ঘর সংসার দেখার জন্য, আমি এটা কে অসম্মান করি না বা এতে আমার আপত্তি ও নেই। তবে আমার কথা ভিন্ন। একজন বেকার পুরুষ কি ঘর সংসারটা একজন বেকার মেয়ের মত গুছিয়ে রাখবে বা একজন বেকার পুরুষের পরিবার কি এটা মেনে নিবে? কিন্তু শুধু একটা বেকার মেয়ের পরিবার নয়, চাকুরীজীবী মেয়ের পরিবার এটা মেনে নেয় যে জব কর বা অন্য যাই কর তোমাকে ঘরের কাজ করতেই হবে!

তবে কেন একটা চাকুরীজীবী মেয়ে বেকার ছেলেকে বিয়ে করবে, যেখানে সংসারের সমস্ত কাজও করতে হবে অন্যদিকে সংসারের জন্য আয় ও করতে হবে!

আবার সংসারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কিছু বললে, বলবে, ওহ! তুমি টাকা দিচ্ছো সে জন্য মাদবরি ফলাতে আসছো? আমি তো ভুলেই গেছিলাম তোমার টাকা আমার খেতে হয়, তোমার কথা তো আমাকে শুনতেই হবে, তোমার কথা না মানলে তো আবার তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে চলে যাবা, তোমার আর কি সম্মান যা যাবার আমারই যাবে!

আমি কোন পুরুষকে অসম্মান বা ছোট করার জন্য এসব বলছি না। একটা সমাজে সব ধরনের পুরুষ রয়েছে। তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে একজন ভালো পুরুষ থাকলে একজন খারাপ পুরুষ ও আছে তেমনি একজন ভালো মেয়ে থাকলে একজন খারাপ মেয়েও আছে। একজন পুরুষ বা মহিলা কেউ কারো প্রতিযোগী নয় সহযোগী।

আমি এমন পুরুষ কে দেখেছি সন্তান লালনপালন এর ক্ষেত্রে রাতে স্ত্রীকে ঘুমাতে দিয়ে সন্তান নিজে কোলে রাখে। তারা বলে দিনে তুমি রেখো আমি সকালে কাজে যাওয়ার সময় গাড়িতে একটু ঘুমিয়ে নিবো তুমি এখন ঘুমাও।

আবার এমন পুরুষের কথা ও শুনেছি বাচ্চা কান্না কাটি করে তাই স্ত্রী সন্তানসহ রুম থেকে বের করে দেয় কারন তাকে ঘুমাতে হবে। আমার এক মেয়ে কলিগ যার স্বামী কিছুই করে না টো টো করে ঘুরে বেড়ায়, সে কলিগ সন্তানের জন্য না রাতে ঘুমাতে পারে, না সংসারের কাজ ও চাকুরীর জন্য দিনে বিশ্রাম পায়?

আমাদের সমাজে ভালো মন্দ অসংখ্য উদাহরন আছে। আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করে বেকার কে কেন না বল? মেয়েরা চাকুরী এতো শত সুবিধা না পেলে তো ছেলেরা চাকরী পেতো, তোমাদের জন্যই ছেলেরা বেকার তবে কেন এই দায় নিবে না? হ্যা এটা সত্য কিছু সুবিধার কারনে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা চাকুরী পায় বেশি। তবে তারপর ও বেকার ছেলেকে বিয়ে করার পক্ষে রায় আমি দেবো না। কারন-
১ম, বেকার পুরুষেরা চাকুরীজীবী স্ত্রী সমানে হীনম্নতায় ভুগে,,, ভালো কথা গুলোও তাদের কাছে কাটার মত লাগে,
২য়, তাদের আত্মসম্মানে আঘাত হানে, তারা ভাবে স্ত্রী সংসারে টাকা দিচ্ছে তাই সে এমন কথা বলছে অথচ কথাটা স্বাভাবিক। কিন্তু একজন পুরুষের হাতে যখন টাকা থাকে তখন স্ত্রীর যা নয় তাই কথা ও হাসি মুখে মেনে নেয়!
৩। মনমালিন্য লেগেই থাকে, অবিশ্বাস বেড়ে যায়, কান কথায় মন দেয় বেশি, সংসার নরকের মত হয়!
৪।চাকুরীজীবী একজন পুরুষ কে কোন কাজের কথা বললে সে হাসি মুখে করলেও একজন বেকার পুরুষকে কাজের কথা নয় সমান্য কথায় মনে করে আজ আমার চাকুরী নেই তাই সে এটা বলল। থাকলে আর বলতো না!
৫। স্ত্রী স্বামীর চেয়ে উচ্চপদস্থ হলেও তারা নিজকে ছোট ভাবে, আবদারকে ও তারা মনে করে স্ত্রী আমাকে হুকুম করছে। অথচ পুরুষের উচ্চপদস্থ চাকুরী থাকলে স্ত্রীর হুকুম কে ও তারা আহ্লাদী আবদার ভাবে!সে হুকুম পালন করেও তারা খুশি হয়!
এই সব কারনেও বিচ্ছেদের পরিমান ও বাড়ছে!

সবচেয়ে বড় কথা বেকার পুরুষ যে শুধু স্ত্রীর সাথেই এমন করে তা নয় বরং মা, বোন, ভাবি সবার কথাই এভাবে নেয়,,, তবে অবশ্যই কিছু ব্যতিক্রম আছে।

পুরুষেরা দাতা হতে চায় গ্রহীতা নয়! তারা সব ক্ষেত্রে উর্ধ্বে থাকবে!এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য।
আমার কথার অর্থ এটা নয় যে বেকার মানুষটিকে পরিহার করুন। প্রিয় ও ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ের আগেই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল করার চেষ্টা করুন। তাকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করলে চুক্তির মাধ্যমে প্রমান রেখে করুন। সে যখন স্বচ্ছল হবে তখন টাকা ফেরত দিবে। তাতে আপনার মনেও ভয় থাকবে না তিনিও হীনম্নতায় ভুগবে না। আপনার কাছে নিজেকে ছোট ভাববে না!

- সাদিয়া মাহমুদ তামান্না

পঠিত : ১১৪১ বার

মন্তব্য: ০