কাদিয়ানীদের ভুল ব্যখ্যা ও তার জবাব
তারিখঃ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১৩:৫৪
হযরত ঈসা (আ
-কে মৃত সাব্যস্ত করতে পবিত্র কুরআনের ত্রিশ (৩০) আয়াতে কাদিয়ানীদের ভুল ব্যাখ্যার খন্ডনমূলক জবাব (পুরোটা না পড়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন)।
=> সুখবর! বাংলা ভাষায় এই প্রথম কাদিয়ানীদের ভ্রান্ত মতবাদের জবাব দিয়ে চমৎকার Apps কাদিয়ানী সমাচার গুগল প্লে স্টোরে আপলোড করা হল!
_________________________________________________
নিচে ১ থেকে ৩০ নং পর্যন্ত আয়াতগুলো কাদিয়ানীদের বই থেকে নেয়া আর খন্ডনমূলক জবাবগুলো আমার।
______________________________________________
#আয়াত ১ : ‘হে ঈসা নিশ্চয় আমি তোমাকে নিয়ে নিচ্ছি এবং তোমাকে নিজের কাছে তুলিয়া লইতেছি...।’ (কুরআন ০৩:৫৫; অনুবাদ- ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কৃত অনুবাদ এবং মির্যায়ী প্রথম খলিফা হেকিম নূরুদ্দিন কৃত অনুবাদও, রেফারেন্স: তাসদীকে বারাহীনে আহমদিয়া খন্ড ১ পৃষ্ঠা ৮)।
√ কাদিয়ানী সম্প্রদায় যে কয়টি হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে ঈসা (আ
-কে মৃত প্রমাণ করে থাকে তার দালিলিক ও যুক্তিক খন্ডনমূলক জবাব এখানে www.markajomar.org/?p=240
√ শেষ যুগে ঈসা (আ
আবার ফিরে আসলে তখন "শেষনবী" কে হচ্ছেন—কাদিয়ানীদের প্রশ্নের জবাব : www.markajomar.org/?p=380
জবাব: এই আয়াতে متوفيك [মুতাওয়াফ্ফীকা] শব্দটি ইস্মে ফায়েল এর ছিগাহ; মূল হচ্ছে وَفْيُ [ওয়াফ্ইউ]। এটি বাবে তাফা'উল (تفعل)’র মধ্যে থেকে অর্থ দেবে ‘নিয়ে নেয়া’। আর এই নিয়ে নেয়ার ঘটনা কিরূপে সংঘটিত হয়েছিল তাও আল্লাহতায়ালা সূরা নিসার ১৫৮ নং আয়াতে ‘রাফা’আহুল্লাহু ইলাইহি’ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁকে উপরে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই নিয়ে নেয়া হয়েছে। তাই আয়াতটি দ্বারা ঈসা (আ
-কে মৃত প্রমাণ করা ঠিক হবেনা। তবে হ্যাঁ ‘তাওয়াফ্ফা’ এর রূপক অর্থ ‘মৃত্যু’ নেয়া হলে তখন তা বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (রা
-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী বাক্যের মধ্যে শব্দের তাক্দীম-তাখীর [আগে-পিছে] করতে হবে। আর তখন আয়াতটির অর্থ দাঁড়াবে, হে ঈসা! ‘প্রথমে তোমাকে [ঈসা] উঠিয়ে নেব অতপর শেষ যুগে তোমাকে মৃত্যু দান করব।’ (রেফারেন্স সামনে দেখুন) সুতরাং উভয় তাফসীরের বিচারে কাদিয়ানীদের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা ভ্রান্ত ও বাতিল সাব্যস্ত হচ্ছে। সংক্ষেপে।
√ আল-কুরআনে লোহা, পোশাক, গবাদিপশু ইত্যাদি নাযিল হওয়ার আয়াত ও কাদিয়ানীদের ভ্রান্তি নিরসন : ডকুমেন্ট সহ ওয়েবসাইট থেকে পড়ুন >> https://markajomar.org/?p=1577
শব্দের আগে-পিছে করতে হবে এটা কি ইবনে আব্বাস (রা
-এরও কথা?
জ্বী হ্যাঁ, এমনি একটি তাফসীর হযরত ইবনে আব্বাস (রা
থেকেও প্রমাণিত আছে। কুরআন মাজীদে এমনি ধরণের বিশেষ বিশেষ রহস্যের কারণে শব্দ আগে-পিছে করার ভুরি ভুরি নজির রয়েছে। পরবর্তী ঘটনাকে আগে ও পূর্ববর্তী ঘটনাকে পরে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশিষ্ট যুগ-ইমাম ও তাফসীরকারক ফখরুদ্দীন আর-রাজী (রহ
তিনি তাঁর ‘তাফসীরে কাবীর’ কিতাবে এর বহু উদাহরণ এনেছেন। তন্মধ্যে সূরা আলে ইমরান এর ৪৩ নং আয়াত অন্যতম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ইয়া মারইয়ামুকনুতী লিরাব্বিকি ওয়াছ্জুদী ওয়ারকা’ঈ মা’আররা-কি’ঈন।’ অর্থাৎ হে মরিয়ম, তুমি রবের জন্য অনুগত হও। আর সিজদা কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকূ কর। এখানে প্রথমে সিজদা তারপর রুকূর কথা এসেছে। কাদিয়ানীরা কি নামাযে প্রথমে সেজদা তারপর রুকূ করে? অবশ্যই না। অতএব বিশেষ রহস্যের কারণেও শব্দ আগেপরে হতে পারে তার প্রমাণ কুরআন নিজেই দিল।
আরো দেখুন, সূরা নিসা আয়াত নং ১৬৩। সুতরাং ইবনে আব্বাস (রা
এর তাফসীরে রাফেউকা-কে প্রথমে তারপর মুতাওয়াফফীকা-কে আগে ধরে যে ব্যাখ্যা রয়েছে সেটি যথার্থই। যেমন তিনি আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেছেন : ‘ইয়ানী রাফেউকা ছুম্মা মুতাওয়াফ্ফীকা ফী আখিরিয্ যামান’ (يعني رافعك ثم متوفيك فى آخر الزمان) অর্থাৎ তোমাকে উঠিয়ে নেব অতপর শেষ যুগে তোমাকে ওফাত (মৃত্যু) দেব। (ইমাম সুয়ূতী রচিত দুররে মানছূর ৩/৫৯৮; সূরা আলে ইমরান)।
এই একই মর্মার্থের আরেকটি হাদীস হযরত ইবনে আব্বাস (রা
এর সূত্রে 'তারিখে ইবনে আসাকীর' নামক গ্রন্থেও রয়েছে। ইমাম ইবনে আসাকীর (ابن عساكر) [জন্ম-মৃত্যু:৪৯৯-৫৭১হিজরী] তিনি জাওহার (جوهر) থেকে তিনি যাহহাক (الضحاك) থেকে তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রা
থেকে বর্ণনা করেছেন যে, رافعك ثم متوفيك فى آخر الزمان অর্থাৎ তোমাকে উঠিয়ে নেব অতপর শেষ যুগে তোমাকে মৃত্যু দেব। (তারিখে ইবনে আসাকী, সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং ৫৫ এর তাফসীর দ্রষ্টব্য)। আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণতাও লাভ করে। দেখুন, 'রাফাআ' অতীতকাল বাচক ক্রিয়াপদ দ্বারা بل رفعه الله إليه অর্থ, বরং আল্লাহ তাঁকে তাঁর নিজের নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন (পবিত্র কুরআন/০৪:১৫৮)।
#আয়াত ২ : ‘বরং আল্লাহ তাহাঁকে তাঁহার নিকট তুলিয়া লইয়াছেন।’ (কুরআন ০৪:১৫৮/ইফা)।
জবাব: এই আয়াতে ঈসা (আ
এর মৃত্যু সম্পর্কে ইংগিতেও কোনো কথা নেই। বরং এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালা নিজের অলৌকিক শক্তি দ্বারা ঈসা (আ
-কে জীবিত অবস্থায় সশরীরে আকাশে তুলে নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হল, আয়াতের কোথাও তো ‘আকাশ’ শব্দের উল্লেখ নেই, তাই এর ‘রাফা’ অর্থ শুধুমাত্র রূহ উঠিয়ে নেয়া বুঝাল কিনা? তার জবাব হল, আয়াতের কনটেক্স বা প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করে দেখুন, এই আয়াতে ঈসাকে সশরীরে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার কথাই বুঝিয়েছেন। কারণ ইহুদীরা যখন উনার বিরুদ্ধে হত্যার ষড়যন্ত্র করল (কুরআন ০৩:৫৪) এবং পাকড়াও করতে তাঁকে ঘিরে সবাই সমবেত হল (তারিখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৪৭২; দুররে মানছূর ৩/৫৯৫ দ্রষ্টব্য); ঠিক সেই মুহূর্তে সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী মহান আল্লাহ তাঁকে নিজের কাছে উঠিয়ে নেন (কুরআন ০৪:১৫৮)। তিনি জিবরাইল (আ
-এর মাধ্যমে তাঁকে এইভাবেই সাহায্য করেন এবং আকাশে সশরীরে উঠিয়ে নিতে নির্দেশ করেন (কুরআন ০৫:১১০; তারীখে ইবনে আসাকীর ৪৭/৩৭৯)।
অতএব, উক্ত আয়াতের ‘রাফা’ অর্থ শুধুমাত্র রূহ উঠিয়ে নেয়ার দাবী আয়াতটির প্রেক্ষাপটের বিচারে সঠিক নয়। বর্তমানে কাদিয়ানীরা দলিল-প্রমাণে অক্ষম হয়ে মুসলমানদের যুক্তি দেয়, তাহলে আল্লাহতায়ালা মুহাম্মদ (সা
-কে কেন আকাশে উঠিয়ে নেননি? তার জবাব তাদেরই স্ববিরোধী প্রবক্তা মির্যা কাদিয়ানীর বই থেকে দিচ্ছি। মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন: “হযরত (সা
-কে মেরাজের রাতে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। সকল সাহাবীর এটাই বিশ্বাস।” (রূহানী খাযায়েন ৩/২৪৭)। সুতরাং বুঝা গেল, আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবকেও আকাশে উঠিয়ে নেননি বলা কাদিয়ানীদের পুরোপুরি অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না।
জেনে রাখা দরকার, কাদিয়ানীরা এইরূপ অকাট্য দলিলের মুকাবিলায় পুরোদস্তুর অক্ষম হয়ে সরলমনা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে প্রশ্ন তুলে ‘আল্লাহর দিক কোনটি? তিনি তাঁকে তাঁর কোন্ দিকে তুলিয়া লইয়াছেন?’
তখন আমরাও তাদেরকে পাল্টা প্রশ্ন করি, পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে تعرج الملائكة و الروح اليه (তা’রুজুল মালা-ইকাতু ওয়াররূহু ইলাইহি) অর্থাৎ ফেরেশতারা এবং রূহ (জিব্রাইল) আল্লাহর দিকে আরোহন করেন এমন একটি দিনে যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর (সূরা মা’আরিজ/৭০:০৪)। তাহলে এখানেও ফেরেশতারা আল্লাহর কোন্ দিকে আরোহন করে বলা হল, বলুন! তখন তাদের কাছে আর কোনো জবাব থাকেনা।
√ আল্লাহর দিক কোনটি? কাদিয়ানীদের উদ্দেশ্যমূলক একটি প্রশ্ন ও আমার ডকুমেন্টারি জবাব! ওয়েবসাইট থেকে https://markajomar.org/?p=1610
এই পর্যায় ঈসা (আ
এর অবতরণ ‘আকাশ থেকে’ হওয়ার দলিল ‘মিনাস সামায়ি’ শব্দে যেসব হাদীস ও তাফসীর গ্রন্থে রয়েছে নিচে তার কয়েকটির রেফারেন্স দেয়া হল। যথা, ইমাম বায়হাক্বীর ‘আল আসমা ওয়াস সিফাত’ ২/৩৩১ হা/৮৯৫, মসনাদে বাজ্জার ১৭/৯৬ হা/৯৬৪২, ইমাম ইবনে আসাকির এর ‘তারিখে দামেস্ক’ ৪৭/৫০৪-৫, কাঞ্জুল উম্মাল ১৪/৬১৮-১৯ হা/৩৯৭২৬, ইমাম আল-মুক্বরী আদ-দানী’র ‘আস-সুনানুল ওয়ারিদাহ ফিল ফিতানি ওয়া গাওয়ায়িলুহা ওয়াস সা’আতু ওয়া ইশরাতুহা’ ৫/১১০৫, ইমাম শাহরাস্তানীর ‘আল মিলালু ওয়ান নাহাল’ ৩/৯, ইমাম সুয়ূতীর ‘আল আরফুল ওয়ারদী’ পৃষ্ঠা নং ১৩৮, ইমাম ইউসুফ ইবনে ইয়াহ্ইয়া ইবনে আলী ইবনে আব্দুল আজীজ আল মাকদিসি আশ-শাফেয়ীর ‘ইক্বদুদ দুরারি ফী আখবারিল মুনতাজির’ ১/২৯৫, ইমাম সুয়ূতীর ‘তাফসীরে দুররে মানছুর’ ৫/৩৫০, সূরা মায়েদা দেখা যেতে পারে। আর হ্যাঁ, ‘বাল’ শব্দের তাৎপর্য একটু পরেই আলোচিত হবে। সেখান থেকে দেখে নেবেন।
#আয়াত ৩ : ‘কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলিয়া লইলে তখন তুমিই তো ছিলে তাহাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী।’ (কুরআন ০৫:১১৭/ইফা)।
জবাব: কেয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর একটি প্রশ্নের প্রতিউত্তরে হযরত ঈসা (আ
বলবেন : فلما توفيتنى অর্থাৎ যখন তুমি আমাকে তাওয়াফ্ফা করলে তথা তুলিয়া লইলে। মির্যা কাদিয়ানীর নিকটেও যুগ ইমাম ও মুজাদ্দিদ হিসেবে স্বীকৃত ইমাম আল্লামা শাওক্বানী (রহ
তিনি উক্ত আয়াতাংশের তাফসীরে লিখে গেছেন : و إنما المعنى فلما رَفَعْتَنِىْ إلى السماء (ওয়া ইন্নামাল মা’না ফালাম্মা রফা’তানী ইলাস সামায়ি) অর্থাৎ ‘আয়াতাংশের শুধু এ অর্থই যে আপনি যখন আমাকে আকাশে তুলিয়া লইলেন।’ কেননা পবিত্র কুরআনে ‘তাওয়াফ্ফা’ শব্দটি তিনখানা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথাক্রমে মৃত্যু [৩৯ : ৪২], ঘুম [০৬ : ৬০] এবং রাফা বা তুলিয়া নেয়া [০৩:৫৫, ০৫ : ১১৭]। (ফাতহুল ক্বাদীর ৭/৪০৬; সূরা মায়েদা ১১৭)। এই ক্ষেত্রে ঘুম, মৃত্যু এবং সশরীরে উঠিয়ে নেয়া, এই সমস্ত অর্থ রূপক আর ‘নিয়ে নেয়া বা পূর্ণকরা’ [কুরআন ০৪: ১৫] তার আভিধানিক ও প্রকৃত অর্থ। সুতরাং এই আয়াতটিও তাদের মত ও দাবীর পক্ষে দলিল হয়নি।
#আয়াত ৪ : ‘কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর (ঈসা) মৃত্যুর পূর্বে তাঁহাকে বিশ্বাস করিবেই এবং কিয়ামতের দিন সে [ইতিপূর্বে যাহারা তাঁহাকে আল্লাহর পুত্র আখ্যা দিয়েছিলো] তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে’ (কুরআন ০৩:১৫৯; অনুবাদ, ফছলুল খেতাম [উর্দূ]; লিখক কাদিয়ানীদের প্রথম খলীফা হেকিম নূর উদ্দীন)।
জবাব: এই আয়াত বরং ঈসা (আ
বর্তমানেও জীবিত থাকার পক্ষেই মজবুত দলিল। কারণ, যদি বলা হয় যে, ঈসা (আ
পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেছেন তখন প্রশ্ন আসবে যে, তবে কি বর্তমানে আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে ঈমান আনয়ন করে মুসলমান হয়ে গেল? সুতরাং গভীরভাবে চিন্তা করুন! কাদিয়ানীরা এই ধরণের প্রশ্ন থেকে বাঁচার জন্য আয়াতের অর্থ নেয় এইরূপ ‘আহলে কিতাবীদের প্রত্যেকে নিজ নিজ ধারণা অনুযায়ী ক্রুশীয় ঘটনার উপর তারা ঈমান আনবে।’ কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, তারা নিজ নিজ ক্রুশীয় ঘটনার উপর তো এখনো বিশ্বাসী হয়ে আছে। তাহলে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ মৃত্যুর পূর্বে ক্রুশীয় ঘটনার উপর ঈমান আনয়নের অর্থ কি ওই একই বিশ্বাসের উপর অটল থাকা? যদি তাই হয় তাহলে নিজেদের মৃত্যুর পূর্বের ঈমান আর জীবদ্দশাতে ধারণকৃত ঈমান, এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রইল কোথায়? সুতরাং কাদিয়ানীদের কৃত অর্থ ও বিশ্লেষণ ইজমায়ে উম্মত ও যুক্তির নিরিখে এমনকি তাদের কথিত প্রথম খলীফা হেকিম নূর উদ্দীনের কৃত অনুবাদের বিচারেও সর্বোতভাবে বাতিল। এই সম্পর্কে পেছনে বিস্তারিত লিখা রয়েছে। প্রয়োজনে আবার দেখা যেতে পারে।
জনৈক কাদিয়ানী বলল, মওলানা সাহেব আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিন! প্রশ্নটি হল, আল্লাহতালার বাণী: (অনুবাদ) সমস্ত আহলে কিতাব তাঁর (ঈসা) মৃত্যুর আগে আগেই তাঁর (ঈসা) প্রতি ঈমান আনবে (সূরা নিসা, আয়াত নং ১৫৯)। কিন্তু একথা সঠিক নয়। কেননা হাদীসে আছে যে, দাজ্জালের সাথে ৭০,০০০ আহ্লে কিতাব যোগ দেবে, আর সে নিজেও আহ্লে কিতাবের অন্তর্গত হবে। সে মসীহ্র প্রতি ঈমান আনবে না এবং কাফির অবস্থাতেই মারা যাবে। অতএব এ যুক্তি ভ্রান্ত, পক্ষান্তরে এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, হযরত ঈসা (আ.) ইন্তেকাল করেছেন। এখন এর কী উত্তর দেবেন!
√ উত্তর এই লিংকে দেখুন : https://www.facebook.com/226066450926065/posts/1418052271727471/
বলে রাখা দরকার যে, কেউ কেউ বলেছেন : আয়াতে قَبْلَ مَوْتِهِ অংশের শেষোক্ত ‘হা’ সর্বনামটি দ্বারা আহলে-কিতাবীদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে। কিন্তু এই মতটি শক্তিশালী নয়। কেননা, যদি এখানে আহলে-কিতাবীরাই উদ্দেশ্য হতো তাহলে সর্বনাম একবচন হত না। হ্যাঁ, ক্ষেত্রভেদে বিশেষ করে উদ্দেশ্য (Subject) যখন কোনো একটি সম্প্রদায় হবে তখন সর্বনাম একবচন হওয়াও ব্যাকরণসিদ্ধ। তবে এখানে তেমনটি হয়নি। কারণ এই আয়াতেই আহলে-কিতাবীদের সুস্পষ্ট বহুবচন সর্বনাম দ্বারা উদ্দেশ্য করা হয়েছে। যেমন এর পরের অংশের আরবী পাঠ : وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا অর্থাৎ আর কিয়ামতের দিন তিনিই হবেন তাদের (ঈমানের) উপর ও যারা তাঁকে (ইতিপূর্বে) আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী’ (আল-ইয়াসীর ফী ইখতিসারে ইবনে কাসীর ৬/৪৯০; সৌদীআরব রিয়াদ থেকে প্রকাশিত)। এখানে عَلَي [আলা] হরফের সাথে যুক্ত هِمْ [হিম] সর্বনামটি বহুবচন। যেহেতু একই বাক্যে একই উদ্দেশ্যের সর্বনাম বিভিন্ন হওয়া ব্যাকরণিক নীতির অন্তরায়, সেহেতু নিশ্চিতভাবে বলা যায় আয়াতে قَبْلَ مَوْتِهِ অংশের শেষোক্ত ‘হা’ সর্বনামটি দ্বারা আহলে-কিতাবীদের বুঝানো হয়নি, বরং এককভাবে হযরত ঈসা (আ
-কেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
কাদিয়ানীরা সরলমনা মুসলমানদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এখানে একটি প্রশ্ন তুলে। প্রশ্নটি হল, ঈসা (আ
-এর যুগে এবং তাঁরই মৃত্যুর আগে আগে সমস্ত আহলে কিতাবী (ইহুদ-খ্রিস্টান) মুমিন হয়ে গেলে তখন পবিত্র কুরআনের ০৫:৬৪ আয়াত অনুসারে আহলে কিতাবীদের মাঝে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ শত্রুতা সঞ্চারিত থাকে কিভাবে? প্রশ্নটির জবাব এই যে, এখানে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলে মূলত ‘সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত’ সময়ের বিশালতাকেই বুঝানো হয়েছে। যেহেতু সময়ের বিশালতাকে বুঝাতে ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ কথাটি একধরণের বাগধারা-ও। যেমন, সাজেদ তার সহপাঠী মাজেদকে বলল, তুই কেয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও এক নাম্বারে পাশ করতে পারবিনা। খেয়াল করুন, ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলতে সাজেদ মোটেও এটা বুঝাতে চায়নি যে, সে প্রকৃতপক্ষে কেয়ামতের শিঙ্গাফুঁকা পর্যন্ত বেঁচে থাকবে! কারণ বাগধারাকে সাধারণ অর্থে বিচার করা যায়না। এবার আরেকটু খোলাসা করছি!
হাদীসে আছে, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা
হতে বর্ণিত রাসূল (সা
ইরশাদ করেছেন الجهادُ مَاضٍ إلى يوم القيامة [আল জিহাদু মা-জিন ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ্] অর্থাৎ ‘জিহাদ কেয়ামত পর্যন্ত চলমান থাকবে’। (মেশকাত শরীফ, আবুদাউদ হা/২৫৩২)। এখানেও ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ শব্দ চয়িত হয়েছে। পক্ষান্তরে অপর একটি হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ আছে ‘ওয়া তাদ্বাউল হারবু আওযারাহা’। অর্থাৎ তখন [যখন ঈসা নবী দুনিয়াতে ফিরে আসবেন] যুদ্ধ তার সমস্ত সমরাস্ত্র গুটিয়ে নেবে (মুসনাদে আহমদ হা/৯১১৭)। এবার তাহলে জিহাদ ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ চলবে, এর কী অর্থ দাঁড়াল? যে জিহাদ কেয়ামত পর্যন্ত অবিরাম চলতে থাকবে বলা হল, সেই জিহাদ হযরত ঈসা (আ
এর যুগে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে; উল্লেখ থাকাটাই কি প্রমাণ করে না যে, ‘কেয়ামত পর্যন্ত’ বলে মূলত ‘সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত’ সময়ের বিশালতাই উদ্দেশ্য! অতএব পবিত্র কুরআন আর অসংখ্য সহীহ হাদীসের বিরুদ্ধে গিয়ে কারো জন্য এমন কোনো যুক্তি দাঁড় করা ঠিক হবেনা যা ইজমায়ে উম্মতের সুপ্রতিষ্ঠিত বুনিয়াদী আকীদার সাথে সাংঘর্ষিক। তাই কাদিয়ানীদের উল্লিখিত প্রশ্ন পুরোপুরি অবান্তর ও প্রত্যাখ্যাত। আশাকরি জবাব পেয়েছেন।
#আয়াত ৫ : ‘মারইয়াম তনয় মসীহ তো কেবল একজন রাসূল। তাহার পূর্বেও রাসূলই আগমন করিত।’ (কুরআন ০৫:৭৫/অনুবাদ, রূহানী খাযায়েন [উর্দূ] খন্ড ৬ পৃষ্ঠা ৮৯)।
জবাব : এই আয়াতে ঈসা (আ
এর মৃত্যু সম্পর্কে সরাসরি কিংবা ইংগিতেও কিছু বলা কওয়া নেই। বরং তার পরের আয়াতগুলো দ্বারা বুঝা যায় যে, খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদী মতবাদ খন্ডন করার জন্য এই আয়াতে ঈসা আর তাঁর মায়ের পানাহারের কথা উল্লেখ করেছেন। কেননা খ্রিস্টানরা তাঁদেরকে উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করে। অথচ সত্যিকারের উপাস্য যিনি তিনি সব সময় পানাহারের ঊর্ধ্বে; বরং ঊর্ধ্ব থেকেও ঊর্ধ্বে। মির্যা কাদিয়ানী সাহেব এখানে ‘আর-রসুল’ এর অর্থ করেছেন : ‘উস চে ফহেলে বিহি রাসূল হি আ-তে রাহে হেঁ’। অর্থাৎ তাহার পূর্বে রাসূলই আগমন করিত। এতে বুঝানো হয়েছে যে, ঈসা ‘রাসূল’ বৈ ভিন্ন কেউ নন, বরং রাসূলগণের আসা-যাওয়া তো তাঁর পূর্বেও ছিল! এককথায় ত্রিত্ববাদ খন্ডনই আয়াতটির উদ্দেশ্য, কাউকে মৃত প্রমাণ করার কোনো রসদ এখানে নেই।
#আয়াত ৬ : ‘এবং আমি তাহাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করি নাই যে, তাহারা আহার্য গ্রহণ করিত না; তাহারা চিরস্থায়ীও ছিল না।’ (কুরআন ২১:০৮/ইফা)।
জবাব : এই আয়াতেও ঈসা (আ
এর মৃত্যু সম্পর্কে সরাসরি কিংবা ইংগিতেও কিছু বলা কওয়া নেই। বড়জোর এটি মক্কার মুশরিকদের একখানা প্রশ্নের জবাব মাত্র। তারা বলত যে, এই লোক কেমন নবী যে, খাওয়া-দাওয়া করেন! তাদের আজগুবি কথাবার্তার জবাবে সূরা আল ফুরকান আয়াত নং ২০ দেখুন।
#আয়াত ৭ : ‘মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র; তাহার পূর্বে বহু রাসূল গত হইয়াছে।’ (কুরআন ০৩:১৪৪/ইফা, কাদিয়ানীদের খলিফা হেকিম নূরুদ্দীনও আর-রসুল হতে ‘বহু রাসূল’ অর্থ নিয়েছেন; ফাছলুল খিতাব লি-মুকাদ্দিমাতি আহলিল কিতাব [উর্দূ] পৃষ্ঠা নং ২৮ দ্রষ্টব্য)।
জবাব: মনে রাখতে হবে যে, গত হওয়া মানে মরে যাওয়াই নয়, দায়িত্বে বর্তমান নেই অথবা কোথাও স্থানান্তরিত হয়ে গেছে এমন ব্যক্তিকেও এই অর্থে অন্তর্ভুক্ত করবে (দেখুন পবিত্র কুরআন ০২:১৪, ৩৫:২৪)। কিন্তু কাদিয়ানীরা আয়াতটির ‘ক্বদ খালাত’ শব্দ দ্বারা ‘মারা গিয়াছে’ উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে এমনকি ‘আর-রসুল’ দ্বারা ‘সমস্ত রাসূল’ অর্থও নিয়ে থাকে। তাদের এও দাবী, এই আয়াত দ্বারা নাকি ঈসা (আ
ও বেঁচে নেই, মৃত্যুবরণ করিয়াছেন মর্মে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু তাদের এসমস্ত দাবী অসত্য ও উম্মতে মুসলিমার ইজমা তথা সর্বসম্মত মতের ঘোর-বিরোধী। তাদের জন্য দুঃসংবাদ এইজন্য যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার ছয় বছর পর অর্থাৎ হিজরী নবম বর্ষে যখন নাজরানের খ্রিষ্টান প্রতিনিধি দল রাসূল (সা
-এর নিকট এলেন, তখন তিনি বললেন : আপনারা কি জানেন যে, আল্লাহ চিরঞ্জীব এবং মৃত্যু ঈসার নিকট আসবে? (তাফসীরে তাবারী ৬/১৫৪, তাফসীরে ইবনে আবী হাতিম ৯/৪০৮ দ্রষ্টব্য)।
এছাড়াও হযরত আলী (রা
এর খাস শিষ্য ও বিশিষ্ট তাবেয়ী ইমাম হাসান বছরী (রহ
থেকে একদম সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত আছে তিনি বলেছেন : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لليهود إن عيسى لم يمت، وإنه راجع إليكم قبل يوم القيامة ‘রাসূল (সা
জনৈক ইহুদীকে বলেছেন নিশ্চয় ঈসা মসীহ তিনি মৃত্যুবরণ করেননি। তিনি নিশ্চয় কেয়ামতের পূর্বে তোমাদের নিকট ফিরে আসবেন।’ (সূত্র সুনানে তাবারী ৩৩৩৮, হাদীস নং ৫৭৪৭; তাফসীরে দুররে মানছূর ২৬৪; ইমাম সুয়ূতী)। এবার কাদিয়ানীদের নিকট নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর চাচ্ছি।
প্রশ্নগুলো : (ক) আল্লাহতায়ালার বাণী ‘ক্বদ খালাত’ দ্বারা যদি সকল রাসূলই মৃত বলে উদ্দেশ্য হত তাহলে আয়াতটিতে ‘ক্বদ মা-তাত’ (মৃত্যুবরণ করিয়াছেন) না হয়ে ‘ক্বদ খালাত’ (গত হইয়াছেন) কেন হল? রহস্যটা কী?
(খ) কাদিয়ানীদের কৃত অর্থ অনুসারে মুহাম্মদ (সা
-এরও জন্মের আগ থেকেই বিদ্যমান থাকা হযরত জিবরাইল (আ
-কেও মৃত মানতে হবে! কারণ পবিত্র কুরআনে জিবরাইলও ‘রাসূল’ নামে ভূষিত। যেমন বিবি মরিয়মের উদ্দেশ্যে জিবরাইল (আ
বলেছিলেন : ‘ইন্নামা আনা রাসূলু রাব্বিকি লিআহাবা লাকি গুলা-মান ঝাকিইইয়া’ (মরিয়াম/১৯:১৯)। এখন এর কী জবাব?
(গ) আরবী ডিকশনারী মতে ‘খালা’ (خلا) ও তার সমগোত্রীয় শব্দগুলোর অর্থ ‘স্থান খালি করা’ তথা স্থানান্তরিত হওয়া। তাই প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, স্থান খালি করা তথা স্থানান্তর হওয়াটা কি শুধুই মৃত্যুবরণ করার সাথে সীমাবদ্ধ? মৃত্যুবরণ করা ছাড়া অন্য আর কোনোভাবেই কি স্থানান্তর হওয়া যায় না? আচ্ছা যে সমস্ত কাদিয়ানী ব্রিটেন থেকে দেশের বাড়ীতে স্থানান্তরিত হন তখন কি তারা মৃত্যুবরণ করেই স্থানান্তরিত হন? অন্যথা ঈসা (আ
ইহজগত থেকে সাময়িক কিছুদিনের জন্য ঊর্ধ্বজগতে স্থানান্তরিত হয়েছেন বলে তিনিও মৃত বলিয়া অভিযুক্ত হবেন কেন?
(ঘ) কাদিয়ানীদের দাবী অনুসারে উক্ত আয়াত দ্বারা ঈসা (আ
বেঁচে নেই, মৃত্যুবরণ করিয়াছেন মর্মে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকলে বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক বরেণ্য স্কলার ও যুগ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহ
ঈসা (আ
-এর সশরীরে আকাশে জীবিত থাকা মর্মে ‘আন্নাহু রাফা’আহু বি-বাদানিহি হাইয়ান’ (অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই তাঁকে সশরীরে জীবিত উঠিয়ে নিয়েছেন) কেন লিখে গেলেন? দেখুন, ইবনে হাজার রচিত ‘আত-তালখীছুল হাবীর’ কিতাবুত তালাক : খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৪৬২।
তেমনিভাবে শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ (রহ
তিনিও বা কেন লিখলেন যে ‘ওয়াজমা’আতুল উম্মাতু আ’লা আন্নাল্লাহা আ’জ্জা ওয়া জাল্লা রাফা’আ ঈসা ইলাইহি ফীস-সামায়ি’ অর্থাৎ উম্মতে মুহাম্মদীয়া এইমর্মে সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন যে, নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা ঈসা (আ
-কে নিজের নিকট আকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন?! (ইমাম ইবনে তাইমিয়া রচিত 'বায়ানু তালবীসিল জাহমিয়্যা' ২/৪১৯)।
মজারব্যাপার হল, ইবনে হাজার আসকালানী আর শায়খ ইবনে তাইমিয়াহ তারা দুইজনই মির্যা কাদিয়ানীর নিকটেও মুজাদ্দিদ ও যুগ ইমাম হিসেবে স্বীকৃত। (দেখুন, মির্যা খোদাবক্স কাদিয়ানী রচিত ‘আছলে মুছাফফা’ [উর্দূ] খন্ড ১ পৃষ্ঠা নং ১৪২-৪৫; প্রথমপ্রকাশ ১৯০১ইং, কাদিয়ান থেকে)। উল্লেখ্য, মির্যা কাদিয়ানী লিখেছেন, মুজাদ্দিদগণ দ্বীনের মধ্যে কোনোরূপ বেশকম করেননা বরং হারানো দ্বীন পুন: প্রতিষ্ঠা করে থাকেন। রূহানী খাযায়েন ৬/৩৪৪ দেখুন। এখন এর কী হবে?
(ঙ) মির্যা কাদিয়ানীর ৮৩টি বইয়ের সমষ্টি ২৩ খন্ডে প্রকাশিত রূহানী খাযায়েন নামক বইয়ের অষ্টম খন্ডের ৬৮-৬৯ নং পৃষ্ঠায় লিখা আছে ‘হযরত মূসা (আ
আকাশে জীবিত, তিনি (এখনো) মৃত্যুবরণ করেননি।’ সংক্ষেপে। এমতাবস্থায় উক্ত আয়াতটির ‘আর-রসুল’ দ্বারা “সমস্ত রাসূল” অর্থ হলে তখন তো মূসা (আ
ও বেঁচে থাকার কথা না! অথচ মির্যা লিখে গেছেন, মূসা (আ
মারা যাননি, বরং তিনি সশরীরে আকাশে জীবিত আছেন। বিশ্বাস না হলে রেফারেন্স মিলিয়ে দেখুন! অতএব উল্লিখিত আয়াত ঈসা (আ
-কে মৃত প্রমাণ করে বলে কাদিয়ানীদের দাবী পুরোপুরি মিথ্যা ও বাতিল।
#আয়াত ৮ : ‘আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান কনি নাই; সুতরাং তোমার মৃত্যু হইলে উহারা কি চিরস্থায়ী হইয়া থাকিবে?’ (কুরআন ২১:৩৪/ইফা)।
জবাব: এই আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ হচ্ছে মক্কার কাফেররা নবী করীম (সা
এর ব্যাপারে বলত, সে তো একদিন মারাই যাবে। আয়াতটি তারই প্রতিউত্তর। আল্লাহতায়ালা বলেন, মৃত্যু তো প্রত্যেক মানুষের জন্য অবধারিত। মুহাম্মদ (সা
ও এই নিয়ম বহির্ভূত নয়। কারণ সেও একজন মানুষ। আর আমি কোনো মানুষকে অমরত্ব দান করিনি। সেযাইহোক কোনোরূপ প্রাসঙ্গিকতার তোয়াক্কা না করে দাবী করা ঠিক হবেনা যে, এই আয়াত ঈসা (আ
এর মৃত্যুর পক্ষে দলিল!
#আয়াত ৯ : ‘সেই ছিল এক উম্মত, তাহা অতীত হইয়াছে। তাহারা যাহা অর্জন করিয়াছে তাহা তাহাদের। তোমরা যাহা অর্জন কর তাহা তোমাদের।’ (কুরআন ০২:১৪১/ইফা)।
জবাব: এই আয়াতের আগের এবং পরের আয়াত দেখলে বুঝা যায়, এখানে একথাগুলো ইয়াহুদীদের উদ্দেশ্যে ছিল। তাদেরকে বলা হচ্ছে যে, তোমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে যারা আম্বিয়া ও সৎলোক ছিলেন তাদের সাথে সম্পর্ক জুড়ে তোমাদের কোনো লাভ নেই। সেযাইহোক, তাদের উদ্ধৃত এই আয়াতও কোনোভাবেই ঈসা (আ
-কে মৃত প্রমাণ করেনা।
#আয়াত ১০ : ‘যেখানেই আমি (ঈসা) থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করিয়াছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়াছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত ও যাকাত আদায় করিতে।’ (কুরআন ১৯:৩১/ইফা)।
জবাব: এই আয়াতে ঈসা (আ
এর মৃত্যুর কোনো উল্লেখই নেই। এখানে যে বিষয়টি বলে রাখা জুরুরি তা হল, আয়াতটিতে ঈসা (আ
এর প্রতি সালাত আর যাকাতের ওসিয়ত পালনের হুকুম শুধুমাত্র পার্থিব জীবনের সাথেই সম্পর্কিত। কেননা সালাত আর যাকাত পালনের কোনো যোগ্যতাই আকাশে নেই। তাই যারা ঈসা আকাশে থাকলে তিনি সেখানে সালাত কিভাবে পড়ছেন, যাকাত কিভাবে দিচ্ছেন; ইত্যাদী যুক্তির অন্তরালে ঈসাকে মৃত দাবী করছেন তাদের নিকট আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সালাতের জন্য নির্দিষ্ট সময় আর যাকাতের জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা জুরুরি কিনা? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বলুন, আকাশে কি সময় গতিশীল নাকি স্থীর? যদি সময় স্থীর হয় তাহলে ঈসা (আ
সালাত কেন পড়বেন? আর তিনি যে আকাশে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে আছেন, আপনার কাছে এমন কী প্রমাণ আছে? কে জানি বলেছিল, ঈসা (আ
আবার পৃথিবীতে আসলে তখন কি তাঁর বয়স কয়েক হাজার বছর হয়ে যাবেনা? এমন প্রশ্নকারীকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, তিরমীযী ও মসনাদে আহমদ কিতাবে সহীহসূত্রে হাদীসে এসেছে, বেহেশতে প্রত্যেকটি পুরুষ (ابناء ثلاث و ثلاثين উচ্চারণ, আবনা-উ ছালা-ছিউঁ ওয়া ছালা-ছীনা) তেত্রিশ বছরের যুবক থাকবে। এখন বলুন, এরা বেহেশতে কোটি কোটি বছর পরেও তেত্রিশ বছরের যুবক কিভাবে থাকবে? সুতরাং বুঝা গেল, ঈসা (আ
ও পৃথিবীতে আবার যখন আসবেন তখন তিনি ঐ বয়সেই বহাল থাকবেন যেই বয়সে তাঁকে উর্ধ্ব জগতে তুলে নেয়া হয়েছিল। সংক্ষেপে জবাব দিলাম।
#আয়াত ১১ : ‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মলাভ করিয়াছি, যেদিন আমার মৃত্যু হইবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হইব।’ (কুরআন ১৯:৩৩/ইফা)।
জবাব: বিশিষ্ট যুগ ইমাম হযরত ইবনে কাসীর (রহ
বলেন, ঈসা (আ
মূলত এই কথাগুলোর মাধ্যমে খ্রিস্টানদের ত্রিত্ববাদী মতবাদের খন্ডন করে নিজেকে তাঁর বান্দা হওয়ার ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন। সংক্ষেপে। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)। কিন্তু কাদিয়ানীরা আয়াতের প্রসঙ্গ গোপন রেখে ভিন্নকিছু সাব্যস্ত করতে চাইলে তখন আমাদের আফসোস করা ছাড়া আর কী বা করার থাকতে পারে!
#আয়াত ১২ : ‘তোমাদের মধ্যে কাহারও কাহারও মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাহাকেও কাহাকেও প্রত্যাবৃত্ত করা হয় হীনতম বয়সে, যাহার ফলে উহারা যাহা কিছু জানিত সে সম্বন্ধে উহারা সজ্ঞান থাকে না।’ (কুরআন ২২:০৫/ইফা)।
জবাব: উল্লিখিত আয়াত দ্বারা পার্থিব জীবনে মানুষের সৃষ্টির সূচনা ও শারিরীক হ্রাস বৃদ্ধির সাধারণ নিয়ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আমরাও বিশ্বাস করি যে, হযরত ঈসা (আ
তিনিও এই নিয়মের বাহিরে নন। বরং পৃথিবীতে পুনরায় আগমন করার পর তিনিও একটা সময় ইন্তেকাল করবেন। সুতরাং এই আয়াত দ্বারা মোটেও সাব্যস্ত হয় না যে, তিনি বর্তমানেও মৃত, জীবিত নেই।
#আয়াত ১৩ : ‘আমি বলিলাম, তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে নামিয়া যাও, পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রহিল।’ (০২:৩৬/ইফা)।
জবাব: উক্ত আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য, ইবলিশ শয়তান কর্তৃক আদম হাওয়াকে জান্নাতে পদস্খলন করার বিষয়ে জানান দেয়া। আয়াতটিতে এও উল্লেখ রয়েছে যে, বনী আদম পৃথিবীতে এসেছে সামান্য কিছুদিনের জন্য। তাই আমরাও বিশ্বাস করি যে, ঈসা (আ
তিনিও ঐশী সফর শেষে পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে এসে হাদীসের ফরমান অনুযায়ী চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছরের মধ্যে (আবুদাউদ, কিতাবুল মালাহিম অধ্যায়) ইন্তেকাল করবেন। সুতরাং এই আয়াত দ্বারা তিনি বর্তমানেই মৃত, তা মোটেও সাব্যস্ত হয় না।
#আয়াত ১৪ : ‘আমি যাহাকে দীর্ঘ জীবন দান করি প্রকৃতিগতভাবে তাহার অবনতি ঘটাই। তবুও কি উহারা বুঝে না?’ (কুরআন ৩৬:৬৮/ইফা)।
জবাব: এই আয়াতে পার্থিব জীবনে মানুষের শারিরীক হ্রাস বৃদ্ধির সাধারণ নিয়ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আমরাও বিশ্বাস করি যে, হযরত ঈসা (আ
তিনিও ফিরে এসে একদিন না একদিন উক্ত নিয়মের মুখোমুখি হবেন কিন্তু তার আগ পর্যন্ত তো তাঁকে প্রকৃতির উক্ত নিয়মের ঊর্ধ্বেই বিবেচনা করতে হবে, তাই নয় কি? মজার ব্যাপার হল, মির্যা কাদিয়ানী মুলহাম দাবিদার অবস্থায় স্বীয় কথিত ইলহামী কিতাব ‘বারাহিনে আহমদিয়া’ এর মধ্যে লিখেছেন: ‘ঈসা (আ
এর দ্বিতীয়বারে আগমন করা এবং তাঁর মাধ্যমে ইসলাম সমগ্র দুনিয়ায় প্রচার প্রসার লাভ করার প্রতিশ্রুতিতে ফোরকানী ইশারা এই আয়াতে (সূরা আত-তওবাহ : ৩৩) রয়েছে।’ (দেখুন রূহানী খাযায়েন ১/৫৯৩)। এবার কী বলবেন? কারণ, তখন প্রশ্ন আসবে যে, আগত সেই ঈসা যদি রূপক ঈসা তথা মির্যা কাদিয়ানী হন তাহলে তার অনুসারীদের একথাও স্বীকার করতে হবে যে, মির্যা কাদিয়ানীর পৃথিবীতে আগমন দ্বিতীয়বারের আগমনই ছিল! অথচ তার অনুসারীদের কেউই আজ পর্যন্ত এটি স্বীকার করেনি।
#আয়াত ১৫ : ‘আল্লাহ, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য।’ (কুরআন ৩০:৫৪/ইফা)।
জবাব: উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রা
এর শিষ্য বিশিষ্ট তাবেয়ী কাতাদাহ (রহ
বলেছেন, প্রথম দুর্বলতা হচ্ছে শুক্র আর শেষ দুর্বলতা হচ্ছে বৃদ্ধ বয়স তখন তার চুল সাদা হয়ে যেতে থাকে। (তাফসীরে তাবারী)। সেযাইহোক, আমরাও বিশ্বাস করি যে, ঈসা (আ
আবার যখন পার্থিব জগতে ফিরে আসবেন তখন আল্লাহ চাইলে তিনিও প্রকৃতির উক্ত নিয়মের বাহিরে থাকবেন না। উল্লেখ্য, ঐশী জগতের নিয়ম-কানূন ইহজগত দিয়ে বিচার করা নেহাত মূর্খতা বৈ কিছুই না। সংক্ষেপে।
#আয়াত ১৬ : ‘বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এইরূপ : যেমন আমি আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করি যদ্দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন-সন্নিবিষ্ট হইয়া উদ্গত হয়, যাহা হইতে মানুষ ও জীবজন্তু আহার করিয়া থাকে।’ (কুরআন ১০:২৪/ইফা)।
জবাব: এই আয়াতে পার্থিব জগতের দৃষ্টান্ত হিসেবে বৃষ্টির উদাহরণ দেয়া হয়েছে। সেযাইহোক অন্তত এইটুকু তো দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে, আয়াতটি কোনোভাবেই ঈসা (আ
-কে বর্তমানে মৃত প্রমাণ করেনা।
#আয়াত ১৭ : ‘ইহার পর তোমরা অবশ্যই মরিবে।’ (কুরআন ২৩:১৫/ইফা)।
জবাব: জ্বী হ্যাঁ, একথা সবাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে, জন্মিলে একদিন মরণ হবেই হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কারো মৃত্যু হওয়ার আগেই জোর করে তাকে মৃত আখ্যা দিয়ে অন্য একজনকে তারই স্থলাভিষিক্ত ও রূপক মসীহ্ মানতে হবে! উল্লেখ্য, বাহায়ী জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মির্যা হোসাইন আলী নূরী (১৮১৭-১৮৯২) তিনিও নিজেকে নবুওয়ত ও রেসালতের দাবী করার পাশাপাশি ১৮৬৩ সালে ইরান থেকে বাগদাদে নির্বাসনে থাকাবস্থায় ‘মসীহ’ হওয়ার দাবীও করেছিলেন। (কিতাবুল আকদাস ৭১ দ্রষ্টব্য; লিখক বাহাউল্লাহ)। উক্ত দাবীর উপর তিনি প্রায় ২৯ বছর বেঁচে ছিলেন, ধ্বংস হননি। সংক্ষেপে।
#আয়াত ১৮ : ‘তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ হইতে বারি বর্ষণ করেন, অতঃপর উহা ভূমিতে নির্ঝররূপে প্রবাহিত করেন এবং তদ্দ্বারা বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, অতঃপর ইহা শুকাইয়া যায়। ফলে তোমরা ইহা পীতবর্ণ দেখিতে পাও, অবশেষে তিনি উহা খড়-কুটায় পরিণত করেন? ইহাতে অবশ্যই উপদেশ রহিয়াছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য।’ (কুরআন ৩৯:২১/ইফা)।
জবাব: এই আয়াত দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, দুনিয়ার মুহাব্বত একদমই অনর্থক। কারণ অতি অল্প সময়ের মধ্যে এটি ধ্বংস হয়ে যাবে। তার ?
মন্তব্য: ০