Alapon

তুরস্ক ও ইসরাইলের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু কথা...



তুরস্ক ও ইসরাইল সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। বরং বহু পুরোনো। মুসলিম বিশ্বের সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে তুরস্ক ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় ১৯৪৯ সালে। তারপর থেকে একে পার্টি ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত তুরস্ক এবং ইসরাইলের সম্পর্ক ছিলো বেশ গভীর দু একটি ঘটনা ছাড়া। এরদোয়ান ২০০৫ সালে ইসরাইল সফরে গিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করেন। কিন্তু কোন ফলাফল আসে নি।

তারপর ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে রজব তাইয়্যব এরদোয়ান তুর্কী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এক জ্বালাময়ী ভাষণের মাধ্যমে ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট শিমন প্যারেজকে প্রচন্ড অসম্মানিত করেন। তারপর থেকে ইসরাইল ও তুরস্কের সম্পর্কে টানাপোড়ন বেশ ভালোভাবে শুরু হয়। ২০১০ সালে তুরস্ক গাজাবাসীর জন্য মেডিকেল সাহায্যসহ একটি বোট পাঠায়। ইসরাইল তা গাজায় প্রবেশের আগে আক্রমণ করে ধংস করে। এই ঘটনার পর তুরস্ক ইসরাইল থেকে তাদের রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেয়।

তারপর ২০১৩ সালে আমেরিকার চাপে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তুর্কী প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়্যব এরদোয়ানকে ফোন করে ক্ষমা চায় এবং বোটের ক্ষতিপূরণ স্বরুপ ২ কোটি ডালর তুরস্ককে পরিশোধ করে। ২০১৭ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ার পর তুরস্ক আবারও তাদের রাষ্ট্রদূত ফিরিয়ে নেয় এবং ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তুরস্ক থেকে বহিষ্কার করে। তারপর কিছু দিন আগে তুরস্ক আবারও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। এই প্রক্রিয়ায় মধ্যস্ততা করছে আজারবাইজান।


দু বছরের বেশী সময় পর তুরস্ক ও ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হচ্ছে। আর এ নিয়ে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যারা তুরস্কের এই পদক্ষেপকে ভালোভাবে জানা দরকার যে, এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর তুরস্ক ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক রাখার প্রধান কারণ ফিলিস্তিনিরা। কারণ তুরস্ক ইসরাইলের অনুমতি নিয়ে গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য, চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে। গাজা ইসরাইলের দখলে থাকায় এখানে ইসরাইলের অনুমতি নিতে হয়।

তুরস্ককই মুসলিম বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা ফিলিস্তিনিদের জন্য সবচেয়ে বেশী কথা বলে আন্তজার্তিকভাবে। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে তুরস্ক এর মতো ভূমিকা মুসলিম বিশ্বের মোড়ল খ্যাত সৌদি আরবও পালন করে না। এখন ইসরাইলের সাথে তুরস্ক সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে বেশ কয়েকটি কারণে। প্রথমত ইসরাইল যাতে প্রকাশ্যে তুরস্ক বিরোধী কাজে না জড়ায়। দ্বিতীয়ত তুরস্ক যাতে আবারও ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করতে পারে তার জন্য। তৃতীয়ত ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। এটা দেখে মনে হতে পারে তুরস্কের আদর্শিক ক্ষেত্রে আংশিক পরাজয়। কিন্তু আমরা আমাদের সোনালী অতীতে দেখেছি যে, ছোট ছোট পরাজয় বড় জয়ের কারণ।


[সমাপ্ত]

তথ্যসূত্রঃ Reuters

Al-Jazeera

Al-Arabiya

TRT WORLD

The Economists

The New York Times

The Guardian

- জান্নাত

পঠিত : ৩৭৯ বার

মন্তব্য: ০