Alapon

নাস্তিকতা নাকি ইসলাম বিদ্বেষী...



একজন উচ্চশিক্ষত ভদ্রলোক এর সাথে আমার দেখা হলো,কেমন আছি খোঁজখবর নেয়ার একপর্যায় সে আমাকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা তামান্না তুমি শিক্ষত ও আধুনিক মেয়ে তোমার কাছে কি মনে হয় না তোমার এই বোরখা পড়া টা ইসলামের বাড়াবাড়ি পর্যায়ের পর্দা?
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার এরকমটা কেন মনে হচ্ছে?

সে বলল, এতো গরমের মধ্যে তুমি বোরখা পড়ে আছো!সেলোয়ার কামিজ পরলে কি পর্দা হয় না, তুমি তো কাপর পরেই আছো, ছাড়া তো আর নও? তবে এই হিজাবের কি দরকার। আর মনের পর্দা হচ্ছে বড় পর্দা।

আমি শুধু তাকে এইটুকুই বলেছিলাম, আমার গরম লাগছে না, উপরন্তু ধুলাবালি, সূর্যের সরাসরি তাপ, মানুষের কুদৃষ্টির বা কামনারদৃষ্টি ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাচ্ছি।তাছাড়া আমি আমি যদি শুধু সেলোয়ার কামিজ পরে সারাদিন জার্নি করি তবে ড্রেস ধুলা বালি মেখে একাকার হবে অথবা আমার ড্রেসটা যেকোন সময় ছিড়ে যেতে পারে তাই যদি আমি বোরখা পড়ি সেটা ছিড়ে গেলোও নিচে আমার কাপর থাকবে সমস্যা হবে না।এছারা অনেক অপ্রিতিকর উপরিস্থিতি থেকে বোরখা আমাকে রক্ষা করে।

তারপর সে বলল তুমি জানো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দাঙ্গাফাসাদ করে মুসলমানেরা।জঙ্গি দিয়ে ভরে গেছে দেশ। আমি বললাম হতে পারে তবে পৃথিবীতে মুসলমানের পরিমান বেশি সে হিসেবে দাঙ্গাজনিত ঘটনাতে মুসলাম জরিত থাকতে পারে। তবে আপনি যদি শতকরা হিসেব করেন তবে মনে হয় আপনার ধারনা ভুল প্রমানিত হবে।আর মুসলমান কিছু করলেই জঙ্গি বলা হয় কিন্তু অন্য ধর্মের কৃত জঘন্য কাজ কে কি বলে আখ্যায়িত করেন?

এরপর সে আমাকে বলল, আমি অনেক রাষ্ট্র ভ্রমন করেছি, অনেক ধর্মের মানুষের সাথে মিশেছি, আমার কাছে বৌদ্ধ ধর্মকে বেশি ভালো লেগেছে! আমিঃ কেন?

তিনিঃ কারন সে ধর্মে জীব হত্যা মহাপাপ এবং জীবের প্রতি অনেক মানবিক। আমিঃওহ! বেশ ভালো বলেছেন! ইসলাম সম্পর্কে কতটা জানেন? ইসলাম মানেই হচ্ছে শান্তি। এখানে দাঙ্গাফাসাদ এর কোন স্থান নাই। ইসলামে শুধু জীব কেন সব কিছুতেই মানবিক হতে শেখায়। আপনাকে আরো ভালোভাবে ইসলাম কে জানতে হবে।আর একটা কথা আপনার এখনো কোন সত্যিকারের মুসলামানের সাথে দেখা হয় নি। যাদের সাথে দেখা হয়েছে সে হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা নামে মুসলমান আপনার আর আমার মতো।

তিনি আমাকে বললেন, তুমি জানো সবচেয়ে বেশি রক্ষিতা কারা রাখে, সৌদিয়ানরা! ওখানে ৭০% খ্রিষ্টান যারা মুসলমান সেজে আছে! আমি বললাম ঠিক বলেছেন সে জন্যই রক্ষিতা বেশি! সে দেশে কেন পর্দা করা হয় জানো সেখানে প্রচন্ড রোদ তাপ ও বেশি। খালি মাথায় বের হলে হিট স্ট্রোক করে মারা যাবে তাই তারা পর্দা করে। আমি বললাম ওহ তাই বুঝি! তারা গরমের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পর্দা করে আর আমি বা আমরা গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বোরক্ষা খুলে যতদূর সম্ভব কাপর ছাড়া ঘুরে বেড়াবো, ঠিক না?
এবার সে আসলো দেশ নিয়ে, বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সেখানে কেন পর্দা করে অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়ে চলতে হবে! আমিঃ অবশ্যই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ।

তবে তো যার যার ধর্ম তার তার পালন করার অধিকার আছে তাই না। তিনি বললেন, হ্যা। আমিঃ তবে সমস্যাটা কোথায়? একজন হিন্দু মহিলা তার ধর্মীয় রীতি অনুসারে শাখা সিঁদুর পরছে তাকে তো বাধা দিচ্ছেন না, একজন খ্রিষ্টান সিস্টার মুখমণ্ডল বাদে সারা শরীর ঢেকে রাখে তাকে তো বাধা দেন না।এরকম আরো অনেক কিছুই আছে অন্য ধর্মের ভাইবোনেরা পালন করে তাদের যদি বাধা না দেওয়া হয় তবে কেন মুসলিম বোনদের পর্দা ও ভাইদের সুন্নতি পোশাক নিয়ে এতো কথা?

সর্বশেষ আমি তাকে বলেছিলাম,। আমি অবশ্যই আধুনিক তবে সেটা শরীরে প্রকাশ করার প্রয়োজন মনে করি না। আধুনিকতা আমার বিবেকের মধ্যে যার দ্বারা ভালো মন্দ সত্য মিথ্যা যাচাই করতে পারি এবং সত্য ও ন্যায়সঙ্গত বিষয়কে ধারন করতে পারি।আর স্মার্টনেস বলতে আমি বুঝি কারো ক্ষতি না করে পথ চলা। আধুনিকতা আর স্মার্টনেস এর নামে বিপরীত লিঙ্গে মানুষকে শুরশুরি দেয়া নয় বা হাজার হাজার টাকার কাপর কিনেও শরীরকে না ঢাকতে পারাকে আমি সমর্থন করি না।

- সাদিয়া মাহমুদ তামান্না

পঠিত : ৪১০ বার

মন্তব্য: ০