Alapon

কেন তাড়াতাড়ি বিয়ে করা প্রয়োজন...?



তাড়াতাড়ি বিয়ে করা প্রয়োজন নিম্নোক্ত কারণে:

১. সুরা নুর ভালো করে অধ্যয়ণ করলে দেখবেন, সবচেয়ে বড় গুনাহের একটা হচ্ছে যিনা করা। আর যিনার শাস্তি সবচে’ কঠোর।

যিনার শাস্তি : অবিবাহিত যিনাকারীকে মুমিনদের একটি দলের উপস্থিতিতে ১০০ বেত্রাঘাত। বিবাহিত যিনাকারীদের প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতে হবে।

এবার দেখা যাক, আমাদের দেশে সমাজে কুরআনের এই বিধান আছে কিনা? সোজা উত্তর—নাই। বরং আমাদের দেশে যিনার কোনো শাস্তিই নাই। পতিতালয় থেকে যাদের গ্রেফতার করে ৫৪ ধারায়, তিনদিন পরে তাদের জামিন হয়ে যায়। কারো সাজা হতে শুনি নাই। তাহলে এবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন, বর্তমান সমাজের ভয়ংকর বাস্তব চিত্র।

২. আজকে চকবাজার কেয়ারী ইলিশিয়ামের সামনে প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়েছিলাম। এ চল্লিশ মিনিটে যতটা ছেলে-মেয়ে দেখেছি, তার মধ্যে ৯০% জোড়া-জোড়া। সবাই কিন্তু স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং অবিবাহিত। এখন চিন্তা করে দেখুন—তারা কেন এই বয়সেই জোড়া হিসেবে আছে? আমরা মনে করি, বিয়ে মানে শুধুই শারীরিক চাহিদা পূরণ। আসলে কি তাই? তাহলে এই যে ছেলে-মেয়েগুলো যুগলে চলাফেরা করছে, তারা সবাই কি শারীরিক সম্পর্ক করে? এটার উত্তর নিশ্চয় সবাই না।

তাহলে তারা কি চায়? হ্যাঁ, এক ভাইয়ের পোস্টে দেখেছিলাম। সে লিখেছে, তার মন সবসময় বোরিং ফিল করে। কিন্তু তার যেসব বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ড আছে, তারা পড়ালেখার মাঝে মাঝে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলে, এরপর খুবই প্রফুল্ল মনে স্টাডি করে, যদিও এটা গুনাহ এবং শয়তান কর্তৃক সৃষ্টি হওয়া ক্ষণিকের ভালোলাগা ও প্রশান্তি তাহলে কি বুঝা যায়? একটা ছেলে বা মেয়ের শুধুই শারীরিক চাহিদা নয়, মানসিক চাহিদাটাও রয়েছে। শারীরিক স্বস্তি এবং মানসিক প্রশান্তি পায় বলেই রাত জেগে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডরা পরস্পররে সাথে কথা বলে।

৩. হযরত আদম আলাইহিস সালামকে যখন আল্লাহ সৃষ্টি করে জান্নাতে রেখেছিলেন, তখন তিনি এতো নেয়ামতের মধ্যে থেকেও একাকিত্ববোধ করছিলেন। সেজন্যই আল্লাহ তায়ালা দয়া করে তার একাকিত্ব দূর করার জন্য জীবনসঙ্গিনী হিসেবে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করেছিলেন। শারীরিক সম্পর্কটা হচ্ছে পরে বংশ বৃদ্ধি করার জন্য। এখন যদি শারীরিক আকর্ষণ তীব্রভাবে না থাকতো, তাহলে মানুষ বংশবৃদ্ধিতে যথেষ্ট আগ্রহী হয়তো নাও হত। এখনো ক্ষেত্র বিশেষে সেটা দেখা যায়।

৪. মানুষের তিনটি চাহিদা। প্রথমত—পেটের চাহিদা, দ্বিতীয়ত—মানসিক চাহিদা, তৃতীয়ত—শারীরিক চাহিদা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। আবার এসব চাহিদা পূরণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও বলে দিয়েছেন। উপরের তিনটি চাহিদার মধ্যে দ্বিতীয়টি অপর দুটির সাথে সম্পৃক্ত। যখন কেউ বৈধ উপায়ে পেটের চাহিদা পূরণ করতে না পারে, তখনি সে অবৈধ উপায়ে সে চাহিদা পূরণ করে। এক্ষেত্রে আপনি যতই আইন আর গুনাহের কথা বলেন না কেন, আপনি সেটা বন্ধ করতে পারবেন না।

অনুরূপভাবে, শারীরিক চাহিদা যখন কেউ বৈধভাবে পূরণ করতে না পারে, তখন সে অবৈধ পথে তা পূরণ করে। এক্ষেত্রেও আপনার আইন আর নিয়ম অকার্যকর। যা বর্তমানে আমরা সবাই প্রতিনিয়ত দেখছি। তাহলে দেখা যায়, এসব চাহিদা পূরণের দুটো উপায়, বৈধ অথবা অবৈধ পথ। আপনি বৈধ পথকে যত কঠিন করবেন, ততই অবৈধ পথে পা বাড়াবে।

৫. আল্লাহ তায়ালা যিনার শাস্তি সবচে’ কঠিন করেছেন। কারণ, অবৈধ পথে না গিয়ে যাতে বৈধ পথে যায়। আর সে বৈধ পথটা হচ্ছে বিয়ে। সেজন্য আল্লাহ তায়ালা বিয়ের পথটা সবচে’ সহজ করেছেন। বর্তমানে কি দেখা যাচ্ছে? পৃথিবীর সবচে’ কঠিন কাজ হচ্ছে বিয়ে, বিপরীতে সবচেয়ে সহজ কাজ হচ্ছে যিনা। হিসেব করেই দেখুন—২০০-৫০০ টাকা খরচ করেই যে কেউ যিনা করতে পারছে। আর বিয়ে করতে হলে প্রথমেই লাগবে একটি ভালো অবস্থান, তারপরে সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১০-১৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।

তাহলে এবার বলুন, কেন মানুষ এতটাকা খরচ করে বিয়ে করবে, যেখানে ২০০ টাকায় কাজ শেষ।

৬. বিয়ের পথ কঠিন হলে যিনার পথ সহজ হবে এটাই স্বাভাবিক। পশ্চিমা সমাজ আর ইসলামের দুশমনেরা সেটাই চায়। আর আমরা মুসলমানরা তাদের সে ফাঁদেই পড়ে আছি। বের হওয়ার চেষ্টা তো দূরে থাক, চিন্তাও করিনা। কিন্তু তারা ঠিকই তাদের নিয়মে চলে। তাদের বিয়ের আগেই ৯৯%-এর সবকিছু আদান-প্রদান হয়ে যায়, তাই তারা বিয়ে করে ক্যারিয়ার গঠনের পরে। বাট, মুসলিম সমাজে সেটা কখনো সম্ভব নয়। আর সম্ভব না হলেই কি বিরত থাকে? নাহ, খুব কম সংখ্যক বিরত থাকে এখন। সেটা দিন দিন বাড়ছেই। আর সেটাই পশ্চিমারা চায়।

৭. ক্রুসেড চলাকালীন মুসলিমদেরকে যখন ইহুদি-খ্রিষ্টানরা কোনোভাবেই পরাস্ত করতে পারছিল না, তখন শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে সুন্দরী নারীদের মুসলিম সৈন্যদের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছিল। কেন? কারণ, দীর্ঘদিন নারীসঙ্গ বঞ্চিত মুসলিম সৈন্যদের সহজেই আকৃষ্ট করা যাবে। তাতে করে অবৈধভাবে যিনা করার ফলে মুসলিম সৈন্যদের চারিত্রিক শক্তি নষ্ট হবে, ঈমান দুর্বল হয়ে যাবে। ফলে, যুদ্ধ করার জন্য ঈমানী শক্তি হারিয়ে ফেলবে। আর বর্তমান মুসলিম সমাজেও ইহুদি-খ্রিষ্টানরা সেই নগ্নতাকে ছড়িয়ে দিয়েছে। বিয়ে না করে যুব সমাজ তাদের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে।

৮. একটা ছেলে যদি জীবনের সবচে’ কঠিন সময় প্রথম ত্রিশ বছর বিয়ে না করেই কাটিয়ে দেয়, তাহলে পরের রসকষহীন ত্রিশ বছরের জন্য কেনইবা বিয়ে করবে? তার মানে কি বিয়ে শুধু চাকরি করে অন্যজনের পিছনে খরচ করবে, আর বংশ ধরে রাখতে সন্তান উৎপাদন করবে এজন্যই? কারণ, ত্রিশ বছর পরে স্ত্রীর সাথে ভালবেসে কথা বলার টাইম নাই। শুধু চাকুরি, ব্যবসা আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মন-মানসিকতা তখন পরিবর্তন হয়ে যায়। বয়সের গাম্ভীর্য চলে আসে। অপরপক্ষে মেয়েটা ২২-২৫ বছরের তরুণী। সে চাইবে—একটু খুনসুটি করতে, রোমান্টিক কথা শুনতে। কিন্তু বয়সের কারণে গাম্ভীর্য আসা, কাজ করে সারাদিন পরে ক্লান্ত মানুষটার তখন কি সে মুড থাকে?

সেজন্যই এখন বেশিরভাগ সংসারে সুখ নেই, আছে সম্পর্কের টানাপোড়েন। আর উত্তাল সমুদ্রের মত এই প্রথম ত্রিশ বছর তরুণটা কি করে কাটায়? প্লিজ! নিজের সাথে মিলিয়ে দেখুন। জীবনের কঠিন সময়েই যদি সহধর্মিণীকে পাশে না পায়, তাহলে বাকি সময় পেয়ে কি করবেন? কারণ, শেষ ত্রিশ বছর এমনিতেই পার করে দেয়া যাবে।

৯. আমরা যারা এই অবৈধ প্রেম-ভালবাসায় ডুবে থাকা ছেলে-মেয়েদের দেখে ফতোয়া স্মরণ করি—তারা কি ভেবে দেখেছি? তাদের জন্য কী করতেছি বা আদৌ এর থেকে তাদের বের করে আনার পথ কী? আপনি তাদেরকে যতই আইন, নৈতিকতা, কুরআন, হাদিসের বুলি আওড়িয়ে যান না কেন, কোনো লাভ হবেনা। প্রমাণ তো দেখতেই পাচ্ছেন। সুতরাং নিষেধ করার পাশাপাশি কার‌্যকরী পদক্ষপে নেয়া জরুরী। আর প্রত্যেকে নিজ কর্মের জন্য দায়ী, তাই নিজ গুনাহের ভার সমাজের উপর চাপিয়ে হালকা করা যাবে না। তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে।

১০. বর্তমান সমাজ থেকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, অবৈধ প্রেম-ভালবাসা থেকে বের করে আনতে বিয়ের কোনো বিকল্প নেই। যদি ঈমানদার, দ্বীনদার, চরিত্রবান, ইসলামি আদর্শে উজ্জিবিত তরুণ প্রজন্ম গড়তে চাই, তাহলে বিয়ে ছাড়া ভিন্ন কোনো পথ নেই। আমি বলছিনা কিশোর বয়সে বিয়ে করিয়ে দিতে হবে। ছেলেদের ১৮-২১ আর মেয়েদের ১৫-১৬-এর পর বিয়ে করিয়ে দিন। যদিও ইসলামে বালেগ হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে করিয়ে দিতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। যাইহোক এই সময়ে বিয়ে করিয়ে দিলে দেখবেন তাদের চরিত্র ৯০ ভাগ পবিত্র হয়ে গেছে ইনশা আল্লাহ।

লিখেছেন : Revival Muhammad Abdullah‎

পঠিত : ৫৬৫ বার

মন্তব্য: ০