Alapon

নারীদের নিকাব এবং কিছু কথা...



সেদিনও ভাইভার টেবিলে নিকাবীদের নিকাব খুলতে বাধ্য করা হত! বলা হত নিকাব পরলে আইডেন্টিটি বুঝা যায় না, কথা নাকি কান পর্যন্ত আসে না!

অতপর আল্লাহ দেখিয়ে দিলেন। এবার ভাইভা দিলাম, শুধু মেয়ে না আমরা ছেলেরা এবং স্যার ম্যাডামরাও মাস্ক পরেই ভাইভা সব করেছে । এবার কোন সমস্যা হয়নি। আর এটাই প্রমাণিত হল এতদিন নিকাবীদের প্রতি কতটা কটু ব্যবহার অন্যায় করা হয়েছে। কাল যদি করোনা চলে যায় তবে কালই বলা হবে নিকাব পারফেক্ট না!

নিকাব পরলে আগে কর্পোরেট অফিসের নাকি মান চলে যেত, সেবায় সমস্যা হত কিন্তু এখন সমস্যা হয় না। চোখের সামনে বহু নিকাবীদের প্রতি অন্যায় দেখেছি।

কয়েক বছর আগের ঘটনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নিকাব নট এলাউড করে দিল। যুক্তি দেখানো হল এতে নাকি প্রক্সি হতে পারে। তখন বহু মডারেট ইসলামিস্টরা নিকাবীদের ধুয়ে দিল, এটা বুঝাতে চাইলো নিকাব ইসলাম না! সেদিন আমি বলেছিলাম এগুলো কোন ফ্যাক্ট না এগুলো জাস্ট এলার্জি । জগতের সবখানে নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা সম্ভব হলে ভর্তি পরীক্ষার চেকিং এ কেন আলাদা ব্যবস্থা সম্ভব না? মেয়েরা আলাদা গেট দিয়ে ঢুকবে। ঢোকার সময় ম্যামরা ফেস চেক করবে, অতপর হলে ঢুকলে আবার ফেস ঢেকে ফেলবে । এটা কি জটিল কিছু ছিল? এমন কোন জায়গা আছে কি যেখানে ম্যাডাম নেই? সম্ভব ছিল সবই কিন্তু ইসলাম বলছে তাই এলার্জি । আজগুবি ব্যাপার হচ্ছে চেক করার পরও হলে নিকাব দিতে নিষেধাজ্ঞা থাকে! চেক করেই তো ঢুকাইছেন তাহলে সমস্যা কোথায়? এইবার যদি ভর্তি পরীক্ষা হয় এবার মাস্ক কি খুলে রাখতে বলবেন?

বেশ কিছুদিন আগে এক ভাই বললেন আমাদের মেডিকেলে ওনার বড় আপুকে ডাক্তার দেখিয়ে দিতে। ভাই আমেরিকা থাকেন আমার সাথে ভাল সখ্যতা। ওনার আপু হাজবেন্ড নিয়ে আসলেন। লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। এক মহিলা নিকাব পরে আছেন। ম্যাম জোর ধমক দিচ্ছেন মাস্ক কই? মাস্ক ছাড়া চিকিৎসা হবে না? অথচ উনি নিকাব পরা ছিলেন। আসলে ম্যাম নিকাব দেখেই তেলে বেগুনে আগুন!

অবাক হলাম মাস্ক নাম দিল তাই ঐটা জায়েজ আর নিকাব হারাম! বাহ! অতঃপর ম্যাম বোরখা নিয়েও দুই চারটা কথা বললেন। বোরখা জন্যই নাকি স্কিন ডিজিজ হচ্ছে! অথচ ম্যাম নিজেই সেদিন দুনিয়ার প্রোটেকটিভ পোশাক গগলস গ্লাবস মাস্ক সব পরে আছেন!
চিন্তা করে দেখুন ম্যামের পোশাক স্কিনের জন্য ভাল, বোরখা স্কিনের জন্য খারাপ! কারা শিখিয়ে দিল এসব? আজ যদি ইউরোপ আমেরিকা বলে নিকাব উপকারী দেখবেন এনারাই বলবে নিকাব পরো।

কয়েকদিন আগে সৌদি আরবে নারীদের চেকিং নিয়ে দেখলাম। তারা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে চেক করছে ফেস খোলার দরকার নেই। আজকের প্রযুক্তির যুগেও যখন নিকাবীদের পরিচিতির জন্য নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয় তখন বুঝতে হবে সমস্যা অন্য কোথাও!
এই যে বিসিএসের আবেদনে মেয়েদের কান দেখাতে হবে! কান দেখানো ছাড়া কি আইডেন্টিফিকেশন সম্ভব না? সম্ভব সবই সম্ভব! চোখ দেখেও মানুষকে চেনা যায়। কিন্তু প্রভুরা বলেছে কান দেখাতেই হবে কারণ সকল অভিমত অনুযায়ী কান আওরাতের অন্তর্ভুক্ত। তারা তাদের নারীদের অর্ধনগ্ন ফুল নগ্ন করলো এখন তারা আমাদের সম্ভ্রান্ত নারীদেরও ফেস আর কান দেখতে চায়!

আমাদের মুসলিম নারীরা আমাদের কাছে মুক্তোর মত। আমরা মুক্তোকে সযত্নে রাখি।
বিঃদ্রঃ এটা হেলথ ইস্যু নিয়ে লেখা নয়, এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা হিপোক্রেসি নিয়ে লেখা। সুতরাং কেউ ভাববেন না নিকাবকে মাস্কের বিকল্প বলা হচ্ছে।

লেখাঃ হাফেজ উদ্দীন নাঈম

পঠিত : ৫৫২ বার

মন্তব্য: ০