Alapon

ড. আহমেদ তুতুনজির সংক্ষিপ্ত জীবনী...



ড. আহমদ তুতুনজি যিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি মুসলিম স্কলার। ১৯৪১ সালে ইরাকের আরবিলে জন্ম নেয়া এ মহান ব্যক্তিত্ব বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। জীবনের শুরু থেকে যার স্বপ্ন একটি শক্তিশালী, ঈমানদীপ্ত উম্মাহ দেখে যাওয়া। শুধু স্বপ্ন দেখার মধ্যে তার জীবন সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তার উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে।

আহমদ তুতুনজি ১৯৫৭ সালে বাগদাদে উচ্চমাধ্যমিক পড়াশুনা শেষ করে ইরাক সরকারের স্কলাশিপ নিয়ে পেট্রোলিয়াম প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি করেন ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে। বিএসসি শেষে ১৯৬৩ সালে তিনি ডক্টরেট করেন একই বিষয়ের উপর আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। ব্যক্তিগত জীবনে একজন পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হয়েও তিনি চালিয়ে যান ইসলাম নিয়ে ব্যপক পড়াশুনা। তিনি দাওয়াহ কাজের জন্য মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশের নমকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট লাভ করেছেন।

মুসলিম উম্মাহকে বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট থেকে উত্তোরিত করার প্রচেষ্টায় তিনি সর্বদাই নিমগ্ন রয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি ছাত্রাবস্থায়ই শুরু করেন মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করার কাজ। তিনি বিশ্বের যেখানে গিয়েছেন সেখানেই চেষ্টা করেছেন মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য।

আহমদ তুতুনজি একটি উদাহরণ প্রায়ই দিয়ে থাকেন যে, ” ’১’ সংখ্যাটি থেকে দূরে আরেকটি ’১’ সংখ্যা বসালে ’১’ ও ‘১’ মিলে ২ হবে। কিন্ত যদি পাশাপাশি ’১’ এবং ‘১’ সংখ্যা বসানো যায় সেটি হবে ১১ (এগারো)। অর্থাৎ আলাদা আলাদা কাজ করার চেয়ে একত্রে কাজ করলে বহুগুণ বেশি কাজ করা সম্ভব হয়।”

একজন আশাবাদী মানুষ আহমদ তুতুনজি যুবকদেরকে উৎসাহিত করেন সবসময়। তিনি ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তার কথা হলো, এ পৃথিবীটা পাল্টে দিবে যুবকেরা যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে দেখা গেছে। আহমদ তুতুনজি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন বিখ্যাত আমেরিকান দা’য়ী আলহাজ মালিক আল শাহবাজ(ম্যালকম এক্স), বিশ্ববিখ্যাত বক্সার মুহাম্মদ আলীসহ আরও নামকরা ব্যক্তিত্ব। তার
মুসলিমদেরকে আন্তার্জাতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য ড. আহমদ তুতুনজি গড়ে তুলেন অসংখ্য আন্তার্জাতিক সংগঠন। যার মধ্যে রয়েছে দাওয়াহ ও লিডারশিপ সংগঠন। তাঁর একক প্রচেষ্টায় এবং সহযোগিতায় যেসকল প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন গড়ে ওঠে তার মধ্যে আছে।

IIIT- INTER NATIONAL INSTITUTE OF ISLAMIC THOUGHT,1981.
IIFSO- INTER NATIONAL ISLAMIC FEDERATION OF STUDENT ORGANIZATIONS, 1969.

NAIT-NORTH AMERICAN ISALMIC TRUST 1972
WAMY-WORLD ASSEMBLY OF MUSLIM YOUTH, 1972.
(MSS)- MUSLIM STUDENT SOCIETY IN UK 1960
UMSO -UNITED MUSLIM ORGANIZATION OF EUROPE 1961
FOSIS- FEDERATION OF ISLAMIC STUENT SOCIETY IN UK 1963
MUSLIM COMMUNITY IN BIRMINGHAM ENGLAND 1960-63
MSA-1963
SAAR- 1983

তাছাড়া তিনি তাঁর প্রচেষ্টায় সৌদি আরবের তৎকালীন রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে মালিক সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে) ডিপার্টমেন্ট অব পেট্রোলিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া তিনি ১৯৭২ সালে লিবিয়া, ত্রিপলিতে আল ফাতেহ ইউনিভার্সিটিতে প্রতিষ্ঠা করেন কলেজ অব পেট্রোলিয়াম এন্ড মিনারেল ইঞ্জিনিয়ারিং। তার এসকল কাজের মুল উদ্দেশ্যই ছিল মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে শক্তিশালী করা এবং মুসলিমদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধার দ্বার উন্মুক্ত করা। তার অত্যন্ত কাছের মানুষ ফুয়াদ আল খতিবকে দিয়ে বাংলাদেশে ইবনে সিনা এবং ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।

সৌদি আরব ও ইরাকের নাগরিক হিসেবে তিনি জীবন অতিবাহিত করলেও সারা বিশ্বের একশ’ বিশটিরও বেশি দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন। বর্তমানে পরিবারসহ তুরষ্কে থাকেন। ব্যক্তি জীবনে ৩ ছেলে ২ মেয়ের জনক। সারা বিশ্বের ১৮০ টিরও বেশি দেশের দাওয়াহ কাজের সাথে তিনি যুক্ত আছেন। ১৯৭৫ সালে এ দেশের মুসলিমদের আমন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের সাথে তিনি যোগাযোগ রাখেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সভা-সেমিনার অংশগ্রহণ, প্রতিষ্ঠান ও প্রজেক্ট উদ্বোধনসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ৮০ বছর বয়সেও তিনি ছুটে চলেছেন অবিরত।

ভবিষ্যতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ৮০-৯০ এর দশকে তিনি সারা বিশ্বের ১০ জনকে নিয়ে ট্রেইন আপ করা শুরু করেছিলেন। সেই দশ জনের মধ্য বর্তমান তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ গুল, মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মাদ, মরোক্কোর সাবেক প্রধানমন্ত্রী আব্দুল্লাহিল বেনকারিনেসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে সেই তালিকায় ছিলেন সাবেক এমপি ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ তাহের। আল্লাহ তা’আলা এ মাহান ব্যক্তির জ্ঞানে ও হায়াতে বরকত দান করুন।

(Collected from Minbor and Edited)

পঠিত : ২৫১০ বার

মন্তব্য: ০