Alapon

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস‌অর্ডার কি এবং এর প্রতিকার...


অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিস‌অর্ডার বা ওসিডি হচ্ছে এক ধরনের মানসিক রোগ। যাকে মনরোগের ভাষায় সবচেয়ে জটিল ধরনের অ্যাংজাইটি নিউরোসিস বলা হয়। বাংলায় বলে শুচিবাই। এই রোগ শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক যেকোন ব্যক্তির মধ্যেই দেখা যেতে পারে।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মধ্যে ভিত্তিহীন চিন্তার পুনরাবৃত্তি করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য হয়। আমাদের অনেকের মধ্যেই কখনো কখনো ওডিসিতে আক্রান্ত ব্যক্তির ন্যায় আচরণিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তবে আমাদের সমস্যাগুলো মাত্রাতিরিক্ত নয়। মাত্রাতিরিক্ত সমস্যা হলে অবশ্যই দেরী না করে একজন সাইকোলজিস্ট দেখানো উচিত। আসুন এ রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো দেখে নেই।

ওসিডির মূল উপসর্গগুলি হল:

১। এরা একই কাজ বারবার করে। যেমন: দরজায় তালা লাগানো আছে কিনা, জানালা বন্ধ আছে কিনা তা বারবার চেক করা, গ্যাসের চুলা ঠিকমতো বন্ধ করা হয়েছে কিনা দিনে একশবার সেই খোঁজ নেওয়া।

২। এরা জিনিসপত্রকে নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করে। প্রত্যেকটা জিনিস প্রতিদিনই একটা নির্দিষ্ট জায়গায়, নির্দিষ্ট রীতিতে রাখতে পছন্দ করে।

৩। একটা কাজ শেষ করার চেয়ে নিঁখুতভাবে করার দিকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
কাজটি মনের মতো না হলে বারবার করতে থাকে। ফলে বারংবার বাসনপত্র, বই, বিছানা ইত্যাদি গোছাতে থাকে।

৪। জীবাণু ও দূষণের ভয়ে বারবার হাত ধোয়া, ঘর মোছা বা পরিষ্কার করতে থাকে।

৫। বারবার জিনিসপত্র, টাকা পয়সা গুনে দেখা। পরীক্ষার খাতার পেছনের পাতায় কি লিখেছে, কোনো ভুল বানান লিখেছে কিনা তা বার বার চেক করে।

৬। অকারণে পুরানো জিনিসপত্র জমিয়ে রাখার প্রবণতা। যেমনঃ পুরনো কাপড়, পুরনো খবরের কাগজ ইত্যাদি জমিয়ে রাখে।

৭। নিজের অথবা অন্যদের প্রতি আক্রমনাত্বক চিন্তাভাবনা করতে থাকে।যেমনঃ শিশুদের দেখলেই তাদের গলা টিপে দিতে ইচ্ছে করে, অথবা ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্নহত্যা করার কথা ভাবে। যদিও বাস্তবে সে কখনোই এসব করে না।

৮। রোগীর মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অমূলক ভয় দেখা যায়। বিশেষ কোন স্থান বা অবস্থান কে কেন্দ্র করে অহেতুক ভয় পায়। অনেকের মধ্যে বদ্ধ জায়গার ভয় (ক্ল্যসট্রোফোবিয়া), উচ্চতা ভীতি (হেমাটোফোবিয়া), অন্ধকার ভীতি (অ্যাগোরাফোবিয়া), রক্ত দেখলে ভয় (মোনোফোবিয়া) ইত্যাদি দেখা যায়।

৯। কোন একটি শব্দ বা বাক্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও বারংবার মাথায় ভেসে উঠে। যার থেকে কিছুতেই রেহাই মিলে না।

১০। রোগী ভয় পেতে থাকেন, তাঁর হয়তো ক্যানসার, এইডস বা সিফিলিস হতে পারে। যদিও এসব তাঁর অমূলক ভয়।

উপরিউক্ত লক্ষণ গুলোর একাধিক বৈশিষ্ট্য যদি আপনার সাথে মিলে যায় তবে আপনার একজন কাউন্সিলর দরকার। ওসিডি ঠিক কি কারণে হয় তা আজও জানা যায়নি।

তবে নিম্নলিখিত কারণগুলিতে ওসিডি হবার সম্ভাবনা থাকেঃ-

জিনগত কারণ: গবেষণায় দেখা গেছে যে মস্তিষ্কে সেরোটিনিন নামে এক রাসায়নিকের ভারসাম্যের অভাবে ওসিডির ঝুঁকি বেড়ে যায়।

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: বাচ্চার জন্মের পর বা নতুন চাকরিতে ঢুকে কাজের চাপে ওসিডির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

চালচলনের কারণ: যারা ছোটবেলা থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে, সাজিয়ে গুছিয়ে ফিটফাটভাবে কাজ করতে ভালবাসেন তাদের ওসিডি হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: কোনো একটা ঘটনায় খুব বাজে অভিজ্ঞতা হলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

করণীয়ঃ-
১. পর্যাপ্ত ঘুম
২. নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন
৩. সঠিক খাদ্যাভ্যাস
৪. নিয়মিত ব্যায়াম
৫. প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, একুশে টিভি, প্রথম আলো ইত্যাদি।

- সালমা আফরিন

পঠিত : ৫৬১ বার

মন্তব্য: ০