Alapon

কাতারের কাছে পরাজিত হল সৌদি-আমিরাত বলয়...



২০১৭ সালের ৫ ‍জুন, মধ্যপ্রাচ্যে একটি বিরাট ঘটনা ঘটে যায়। ব্যাপারটা আচমকা ঘটেছে, তেমন নয়। অনেকদিন থেকেই এ বিষয়ে দেন-দরবার চলছিল, কিন্তু এই দেন-দরবারের মাঝে এমন চরম সিদ্ধান্ত গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে। এই দিনে সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের অপর দেশ কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করে।

এই অবরোধের মধ্যে ছিল, সৌদি ও কাতার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, দুই দেশের মধ্যে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিত করা, আকাশ ও জল পথ বন্ধ করে দেওয়া। এছাড়াও সৌদি আরবে অবস্থানকারী সকল কাতারের নাগরিককে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে যেতে হবে।

মূলত সৌদি আরব ও আমিরাত জুটি কাতারকে ১৩ টি প্রস্তাবনা দিয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাতার ভিত্তিক নিউজ চ্যানেল আলজাজিরা বন্ধ করে দেওয়া এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা শায়খ ইউসুফ আল কারজাভিকে মিশরের সিসি সরকারের হাতে তুলে দেওয়া। কাতার তাদের এই প্রধান দুটি শর্ত মেনে নেওয়া তো দূরে থাক, তারা সৌদি-আমিরাতের ১৩ টি শর্তের একটিও মেনে নেয়নি। যার কারণে কাতারকে গত ৩ বছর বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

সৌদি আরব তাদের আকাশ সীমানা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে কাতার এয়ারওয়েজের বিমান নির্দিষ্ট রুট দিয়ে যাতায়াত করতে না পেরে বিকল্প পথ ব্যবহার করে। যার কারণে কাতার এয়ারওয়েজেরে ব্যয় কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। এছাড়া কাতার অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ হলেও খাদ্যের দিক থেকে মোটেও সমৃদ্ধ নয়। খাদ্যের জন্য তাদের পাশ্ববর্তি আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে আমদানি চুক্তির উপর নির্ভর করতে হতো। এক্ষেত্রে কাতারকে খাদ্যের জন্য সৌদি আরবসহ বাহরাইন ও মিশরের উপর নির্ভর করতে হতো। বাহরাইন ও মিশর সৌদি-আমিরাতগংয়ের অংশ হওয়ায় সেসব দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল, কাতার বেশ বড়োসড়ো খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। আর সংকটে পড়লেই কাতার নাকে খত দিয়ে সৌদি-আমিরাতের সব দাবি মেনে নিবে।

কিন্তু এমন এক পরিস্থিতিতে কাতারের পাশে এগিয়ে আসে তুরস্ক ও ইরান। তুরস্ক অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে কাতারে খাদ্য সহায়তা প্রেরণ করে এবং ইরান খাদ্য বোঝাই জাহাজ প্রেরণ করে। তারপর ইরান ও তুরস্কের সাথে কাতারের বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এতো গেল খাবারের কথা।

এই অবরোধের মাঝে আবার সৌদি-আমিরাত কতৃক কাতারে সামরিক অভিযান চালানোর সম্ভাবনা দেখা দিল। কারণ, সৌদি আরবের তুলনায় কাতার সামরিক দিক থেকে খর্ব শক্তির। এমতাবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান পার্লামেন্টে দ্রুত বিল পাশ করে কাতারে সেনা মোতায়েন করেন। এরপর কাতারের মাটিতে তুর্কি সেনা ঘাঁটি স্থাপন করা হয়। এরপর সৌদি আরব কাতারকে বলে, তুকি সেনা ঘাঁটি প্রত্যাহার করো। তাহলে আমরা তোমাদের উপর থেকে অবরোধ তুলে নিবো। কিন্তু কাতার সেই প্রস্তাব নাখোচ করে।

অবরোধের এই তিনটি বছর কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ধৈর্য ধরে বিচলিত না হয়ে কাতারের জনগণকে সাথে নিয়ে সৌদি-আমিরাত বলয়ের অন্যায় অবরোধ মোকাবেলা করে গেছেন। আর তার পাশে ছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও ইরান। আর কাতার এই ধৈর্যের ফলাফল হাতেনাতে পেয়ে গেছে। আরব আমিরাত ও সৌদি আরব কাতারের উপর থেকে সমস্ত অবরোধ তুলে নিয়েছে এবং নিজেদের দাবি দাওয়া থেকে সরে এসেছে। আর এর মধ্যে দিয়ে কূটনৈতিক যুদ্ধে কাতারের বিজয় হল, আর পরাজয় হল সৌদি-আমিরাত বলয়ের!

পঠিত : ৩৯০ বার

মন্তব্য: ০