Alapon

জান্নাতে যেতে চাও যদি...

দ্বিতীয় পর্ব

আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা,
আমরা কি আমাদের অসহায় ভাই- বোনেদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে পারি না? আজ মুসলিম বিশ্বে জুলুম- নিপীড়নের শিকার কতো ভাই-বোন! তারা কাঁদছে! তাঁদের বাসস্থান আজ ধ্বংসস্তুপ! পরিবার থেকে তারা আজ বিচ্ছিন্ন! এদের কারো মুখে কি আমি হাসি ফোটাতে পারি না? প্রতিদিন একজন মুসলিমের জীবনে স্বস্তির ছোঁয়া এনে দেওয়া কি আমাদের প্রাত্যহিক লক্ষ্য হতে পারে না? এটা করা কি খুব কঠিন? না, বরং আপনি হয়তো চাইলেই এই কাজে সফল হতে পারবেন।
যদি জান্নাতে প্রবেশ সুনিশ্চিত করতে চান, তবে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত হন, যারা প্রতিদিন অন্তত একজন মুসলিম ভাইয়ের হক আদায় করেন!
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ রোজা রেখেছে? আবু বকর(রাঃ) বলেন, আমি। রাসূল(সাঃ) বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আজ রোগী দেখতে গিয়েছে? আবু বকর(রাঃ) বলেন, আমি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে আজ জানাজায় অংশগ্রহণ করেছে? আবু বকর(রাঃ) উত্তর দিলেন, আমি। তিনি বললেন, আজ কোন মিসকিনের জন্য আহারের ব্যবস্থা করেছে কে? হযরত আবু বকর(রাঃ) বলেন, আমি!
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বললেন, যে ব্যক্তির মাঝে এ গুণগুলো একত্র হলো- সে তো জান্নাতে প্রবেশ করলো।
( সহীহ মুসলিম- হাদীসঃ ১০২৮)
আল্লাহু আকবার!
আল্লাহ আমাদের ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দিয়েছেন ! বার্মা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন সহ সমগ্র বিশ্বজুড়ে যে দেশগুলোতে আমাদের মুসলিম ভাই- বোনেরা নির্যাতিত হচ্ছেন- তাদের কোন একজনের মুখে হাসি ফোটানো কি আমাদের জন্য খুব কষ্টসাধ্য কাজ? আমার মনে পড়ে, যখন আমি অতোটা প্র‍্যাক্টিসিং মুসলিম ছিলাম না, তখন আমি বসনিয়ার এক অনাথ শিশুর লালন পালনের ভার গ্রহণ করেছিলাম। সুবহানাল্লাহ! এই কাজের মাধ্যমে আমি আমার অনেক কাজে বরকত পেয়েছি! সম্ভবত তা এ কারণে যে, আল্লাহ আমাকে এই ভালো কাজের দিকে চালনা করেছিলেন, অথবা আমার দ্বারা এই ভালো কাজ সংঘটিত হয়েছিলো বলেই।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাঁর সাহাবাদের বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে আমার প্রিয় সেই আমলের কথা বলবো না, যা আমার কাছে আমার মসজিদে ( মসজিদে নববী) এক মাসব্যাপী সমস্তদিন রোজা রেখে সারারাত প্রার্থনা করার চাইতেও বেশি পছন্দনীয়?
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, "অবশ্যই ইয়া রাসূলুল্লাহ(সাঃ)। আমাদেরকে বলুন।" রাসূল(সাঃ) উত্তর দিলেন, আমি আমার কোন মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবো এবং তাঁর কোন একটি প্রয়োজন পূরণ করবো।
সুবহানাল্লাহ! কোন মুসলিম ভাইকে খুশি করা তাঁর কাছে এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ছিলো! মসজিদে নববীতে ইবাদাত করার ফজিলত সম্বন্ধে হাদীস টি জানা থাকলে আপনারা এ বিষয়ের তাৎপর্য আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মসজিদে হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে (মসজিদে নববী) সালাত, অন্য স্থানে সালাতের চাইতে এক হাজার গুণ উত্তম, আর মসজিদে হারামে সালাত ১ লক্ষ সালাতের চাইতে উত্তম।
(ইবন মাজাহ- হাদীস নংঃ১৩৯৬)
আল্লাহু আকবার!
শায়েখ আয়াজের( মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন) সাথে আমার যখন একবার দেখা হয়েছিলো, তখন আমি তাঁর সৌভাগ্যের কথা উল্লেখ করে বলছিলাম, আল্লাহ আপনাকে কতোই না বারাকাহ দিয়েছেন! আমি যদি মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিন হতে পারতাম!
তিনি আমাকে বললেন, আপনি কি জানেন একজন মুয়াজ্জিন হবার সবচেয়ে বড়ো নিয়ামত কি? আম না-বোধক উত্তর দেয়ায় তিনি বললেন, মুয়াজ্জিন হবার সুবাদে আমি প্রতি ওয়াক্ত সালাত এখানে আদায় করতে পারি, আমি সবসময় মসজিদে প্রথম প্রবেশ করি৷ এবং সবচেয়ে বড়ো নিয়ামত, যা আমি হিসেব করে দেখলাম, তা হচ্ছে, রাসূল(সাঃ) এর এই মসজিদে আদায় করা একদিনের সালাত, অন্য সকল মসজিদে প্রায় ৩ বছর সালাত আদায়ের সমতুল্য!
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
যে ব্যক্তি আমার মসজিদে কাউকে ভালো কিছু শেখানোর উদ্দ্যেশ্যে অথবা শেখার উদ্দ্যেশ্যে আসবে, তার মর্যাদা হবে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত একজন মুজাহিদের ন্যায়।
(সহীহ আল-জামী, হাদীস নংঃ ৫৭২৩)
আমি আমার শায়খকে প্রশ্ন করলাম, একজন মুজাহিদের বিশেষ কোন মর্যাদা রয়েছে কি? তিনি বললেন, এক লক্ষ ইবাদাতের সমান! একজন মুজাহিদের আদায়কৃত এক ওয়াক্ত সালাত তাঁর সওয়াব এক লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করবে। সুবহানাল্লাহ।
অর্থাৎ, যখন কোন ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর মসজিদে গমন করবে, কেবল সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে নয়, বরং উত্তম জ্ঞান অর্জন অথবা প্রদানের লক্ষ্যে, তাঁর বিনিময় হবে প্রতি ওয়াক্তে এক লক্ষবার সালাত আদায়ের সওয়াব! পাঁচ ওয়াক্তে ৫ লক্ষবার! এবং এই সংখ্যা ভাগ দিলে ২৩০ বছর সালাত আদায় করার সাওয়াব পাওয়া যাবে! কেবল মাত্র একদিন সালাত আদায় করে!
এখন, আপনি বলুন! রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর মসজিদে এক মাস ইবাদাত করার চাইতেও উত্তম হচ্ছে আপনার কোন মুসলিম ভাইকে সাহায্য করে তাকে খুশি করা। কেবল ভেবে দেখুন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের কতোটা ভালোবাসেন! এবং তিনি চান আমরা যেনো একে অপরের সাহায্যে সর্বদা এগিয়ে আসি।
ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ কোরআনের আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে লিখেছেন,
যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তারা একত্রে একটি দলের ন্যায় থাকবে এবং আল্লাহ তাদের সবাইকে একসাথে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এতো ভালোবাসেন যে তিনি চান না আমরা জান্নাতে একা একা প্রবেশ করি। তিনি চান আমরা যেনো দলবদ্ধ হয়ে, হাতে হাত রেখে জান্নাতে প্রবেশ করি। এজন্য ই মুসলিম ভাইকে খুশী করা এতোটা জরুরী।
আমার ভাইয়েরা, কেবল আমরা নিজেরাই যেনো সুখ অনুভব না করি, অন্যের খুশি অনুভব করার কারণ ও যেনো আমরা হতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
৬নংঃ

ইবনে আব্বাস(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেনঃ
"রমজান মাসে উমরাহ, আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য"।
(বুখারী ও মুসলিম)
আয়িশা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল(সাঃ) বলেনঃ
"তোমাদের (স্ত্রীলোক) জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে মাবরুর হজ্জ"।
(আল- বুখারী)
আবু হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ
"মাবরুর হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়"।
(বুখারী ও মুসলিম)
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনাদের হজ্জ দ্রুতই সম্পন্ন করুন। কেবল একবার করেই থেমে যাবেন না। যতোবার সুযোগ হয়, হজ্জ করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার কতো বড় এক নিয়ামাত! আরাফাহ, মিনা, মুজদালিফার মতো পবিত্র স্থানে আপনার কদম রাখার সৌভাগ্য হবে! এ সৌভাগ্য হেলায় হারাবেন না।
মাবরুর হজ্জ আদায় করতে হলে আপনাকে দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কোন স্ত্রী-পুরুষ সহবাসে লিপ্ত হতে পারবে না এবং কোন রূপ ঝগড়া, তর্কে জড়ানো যাবে না।
তাই, আপনারা যতোবার সম্ভব হজ্জ করুন। আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের জন্য হজ্জ করুন। আমার একজন দ্বীনি ভাই, তার বাবা ৬০ বার হজ্জ আদায় করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ তাকে সেই দলের জান্নাতীদের কাতারে স্থান দিন, যারা মাবরুর হজ্জের প্রতিদান হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। আমীন।

৫ নং শ্রেণীঃ

এই শ্রেণীর কাজটি শুধুই আমার বোনেদের জন্য। আমি জানি এটা করা অনেক কঠিন। বেশ অনেক কষ্টসাধ্য। তবু, যদি বোনেরা জান্নাত কামনা করেন, ইনশাআল্লাহ তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সেটা কী? আপনার স্বামীর প্রতি অনুগত হন। প্রাকৃতিক ভাবে, ডিএনএ অনুযায়ী ই, বোনেরা এই স্বভাবের বিপরীত!
আনুগত্য মানে, স্বামীর আদেশ অনুযায়ী কেবল সে কাজগুলো সম্পাদন করা নয়, যা আপনি পছন্দ করেন। বরং সেই কাজগুলো ও করা, যা আপনার অপছন্দ! আপনার স্বামী আপনাকে বললো, এই টাকাগুলো নাও আর শপিং করে আসো। আপনি সেই কথা শুনলেন। এটা মানেই আনুগত্য নয়।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
"যদি মহিলারা এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত থাকতো, যে একজন স্বামীর তার স্ত্রীর কাছে কি হক রয়েছে- তবে তারা তাঁকে খাবার দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো কখন খাবার খাওয়া শেষ হবে!"
(তাবারানী)
আল্লাহ আমাদের বোনেদের উত্তম স্ত্রী হবার এবং আমাদের ভাইদের যোগ্য স্বামী হবার তাওফিক দান করুন। কেননা যখন আপনি একজন রাজপুত্র হবেন, তখন ই আপনি একজন রাজকন্যা পাবার আশা করতে পারেন। সেরূপ ভাবেই, যদি আপনি বাজে চরিত্রের হন, আপনি আপনার জন্য সেরকম সংগী ই পাবেন।
তাই, আমার বোনেরা, আপনারা যদি জান্নাতে সুনিশ্চিত ভাবে যেতে চান, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর এই হাদীস টি অবশ্য ই স্মরণ রাখবেন।
আবু হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) ইরশাদ করেনঃ
"যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে পড়বে, রমজানের রোজা ঠিকভাবে রাখবে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করবে, এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, সে নারীকে বলা হবে; যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করো"।
( মুসনাদে আহমদ)
প্রিয় বোন, আপনি যদি স্বামী অসন্তুষ্ট থাকা অবস্থায় মারা যান; জাহান্নাম হবে আপনার ঠিকানা। আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। আপনার প্রতি, পরিবারের চাইতেও আপনার স্বামীর হক বেশী।
সহীহ মুসলিমে উল্লিখিত আছে, রাসূল(সাঃ) বলেনঃ
"যদি কোন স্বামীর হাতের কোন আঘাত থেকে তার স্ত্রী রক্ত চুষে পান করে, তবুও সে তার প্রতি তার স্বামীর হক এতোটুকুও আদায় করতে পারবে না"।
রাসূল(সাঃ) এরশাদ করেন,
"যদি কোন মানুষের অন্য মানুষের সামনে সিজদা করার হুকুম দেয়া হতো, তবে স্বামীকে সিজদা করার জন্য স্ত্রীকে আদেশ করা হতো"।
(সহীহ বুখারী)
আল্লাহ আপনাকে এভাবেই স্বামীর প্রতি অনুগত রূপে দেখতে চান।
অতএব, আমার বোনেরা, স্বামীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করুন। বিয়ের পূর্বে আপনার জান্নাত ছিলো আপনার মায়ের পদতলে; কিন্তু বিবাহ পরবর্তী সময়ে আপনার জান্নাত আপনার স্বামীর সন্তুষ্টির মাঝেই নিহিত।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

৪ নং শ্রেণীঃ
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেন,
"যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ(জিহবা) এবং উভয় রানের মধ্যভাগ ( লজ্জাস্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে, আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি"।
[ বুখারী, হাদীস নংঃ ৬৪৭৪]

আমার প্রিয় ভাইয়েরা,
বর্তমান বিশ্বে প্রসার হওয়া সবরকমের ফেতনার উৎস হচ্ছে এ দু'টো বিষয়। মিথ্যা কথা বলা, গুজব রটানো, হলুদ সাংবাদিকতা, পণ্যের ভুয়া প্রচারণা- এসব ই মানুষের জিহ্বা দ্বারা করা হয়ে থাকে। যদি জিহ্বা সংযত রাখা যায়, তবে এসকল ফেতনা থেকে বেঁচে থাকা যাবে।
অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি? তা হচ্ছে যৌনতা এবং নারী- পুরুষের একে অপরের প্রতি আকর্ষণ। যা আমাদের পোশাকের উপর, নৈতিকতার অভাব, পারস্পরিক আচরণের উপর চরম প্রভাব ফেলছে। বলা হয়ে থাকে যে, ছেলেদের ক্লাসরুমে যদি সহপাঠী হিসেবে মেয়েরা থাকে; তাহলে তাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এবং এ কারণেই তারা ব্যতিক্রম আচরণ করে। এটা আসলেই সত্য। এ কারণেই গার্লস স্কুল বা বয়েজ স্কুলগুলো তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এটা আমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। তাই আমাদের সবসময় স্বীয় জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করা জরুরী। কেননা এই দু'টো বিষয়ের দ্বারা ঘটিত পাপের কারণেই মানুষ সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) কে যখন একবার জিজ্ঞেস করা হলো,
"ইয়া রাসূলুল্লাহ(সাঃ)! কোন বিষয় মানুষকে সবচেয়ে বেশি জাহান্নামে প্রবেশ করাবে"? তিনি উত্তর দিলেনঃ যা তোমার দুই ঠোঁট (জিহ্বা) ও দুই রানের (লজ্জাস্থান) মাঝে রয়েছে।
( সহীহ বুখারী)

জিহ্বা বেশ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কীভাবে? আপনি সেসব লোকেদের সাহচর্যে থাকবেন না, যারা অনেক বেশি কথা বলে। ঐসব মজলিস এড়িয়ে চলুন, যেখানে কেবল গালগল্প ই হয়! বন্ধু নির্বাচন করার সময় খেয়াল রাখুন যেনো আপনার সাথীরা অতিমাত্রায় কথা বলতে অভ্যস্ত না হয়! তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করুন, যারা কেবল দুনিয়াবী কথাবার্তায় মশগুল থাকে। বরং যারা সর্বদা আপনাকে আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে, এমন সাথীদের সাহচর্য গ্রহণ করুন।
একজন হাদীস বিশারদ বলেছেন,
আল্লাহর স্মরণ হলো নিরাময়স্বরূপ। এবং মানুষের স্মরণ রোগস্বরূপ।
আমাদের কি হলো যে আমরা নিরাময়ের পরিবর্তে রোগকে ই বেছে নিয়েছি? আমরা নিজেদের আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রেখে লোকেদের সাথে হাসি ঠাট্টায় মশগুল থাকছি!

জানা যায় যে, একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার, ইবন ইদরীস- যখন তিনি জনমানুষের মাঝে অবস্থান করতেন, নিজের ঠোঁট অনবরত নাড়াতেন। তার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হতো না। জিকিরে লিপ্ত থাকতেন তিনি। লোকেরা তাকে বলতো, আপনি কি পাগল হয়ে গিয়েছেন?! উত্তরে তিনি বলতেন, আমি নই। বরং তোমরা ই তো পাগল! কেননা আমি আখিরাতের পাথেয় সংগ্রহে ব্যস্ত আছি। আর তোমরা দুনিয়া নিয়ে পড়ে রয়েছো।

আজকের প্রতিযোগিতাপূর্ণ এ দুনিয়ায় একটি বাড়ি ক্রয় করা বেশ ব্যয়বহুল! কিন্তু কতো সহজেই আপনি জান্নাতে নিজের একটি বাড়ী বানিয়ে নিতে পারছেন।
জাবির(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেনঃ
"যে ব্যক্তি "সুবহানাল্লাহিল 'আযিম ওয়াবি'হামদিহী" পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি গাছ রোপণ করা হবে"।
( তিরমিজি)
অন্যত্র রাসূল(সাঃ) বলেন,
"যে ব্যক্তি প্রতিদিন "সুবহানাল্লাহি ওয়া বি'হামদিহী" ১০০ বার পাঠ করবে, সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ সগিরা গুনাহ থাকলেও তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে"।
(সহীহ বোখারীঃ ৭/১৬৮)

জিহবা হেফাজত করার উপায়সমূহ আলোচনা হলো। এখন লজ্জাস্থানের হেফাজত কীভাবে করা সম্ভব? দ্রুত বিয়ে করে ফেলুন। বিয়ের বয়স হলেই বিয়ে করে ফেলুন এবং এমন কাউকে বিয়ে করুন, যার প্রতি আপনি আকর্ষণ বোধ করছেন। এটাই উপায়। কাউকে দেখে যদি আপনি আকর্ষণ বোধ করেন, তবে নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে যত দ্রুত সম্ভব তাকে বিয়ে করুন। আমার ভাইয়েরা, সময় হয়ে গেলেই আপনাদের ছোটদের বিবাহের ব্যবস্থা করুন। তাদের রক্ষা করুন সমাজে প্রচলিত সকল অনৈতিকতা থেকে।

বোনেরা, নিজ স্বামীর জন্য সুসজ্জিত করুন। অন্য পুরুষের দৃষ্টি কাড়বার জন্য নয়। তাতে কোন বারাকাহ নেই, বরং গুনাহের পাল্লা ভারী হবে। অন্যদিকে, আপনি নিজের স্বামীর কাছে নিজেকে যতো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন; জান্নাতে ততো মর্যাদা লাভ করবেন। কেননা, সেই নারীই উত্তম, যার দিকে দৃষ্টি পড়লে তাঁর স্বামী সন্তুষ্ট হয়ে যায়।

আমার ভাইয়েরা, উত্তম নারীদের বিবাহ করুন। বোনেরা, নেককার পুরুষদের নিজের জীবনসঙ্গী করে নিন। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।

(চলবে)

জান্নাতে যেতে চাও যদি...
মূলঃ শায়খ তাওফিক চৌধুরী।
ভাবানুবাদঃ সাবিহা সাবা।



পঠিত : ৩৯৪ বার

মন্তব্য: ০