Alapon

আলেমদের মধ্যে প্রকাশ্যে ঝগড়া- ক্ষতিগ্রস্থ হয় পরের প্রজন্ম...



কারো সাথে মতভেদ হলে, কারো সাথে কোনো সমস্যা হলে, আমাদের ধর্মে - এটা খুবই মৌলিক একটা শিক্ষা - কি করবেন? সবার সামনে তাদেরকে অপমান করবেন, বলবেন যে, “এই যে, এটা আমার ভিন্নমত, আর এ কারণে আপনি ভুল!” আপনি তাদের কাছে ব্যক্তিগতভাবে যাবেন। তাদের সাথে কথা বলবেন তাদের প্রতি মায়া-ভক্তি রেখেই। কেননা তারা আপনার ঈমানী ভাই অথবা ঈমানী বোন।

তাই তাদের সাথে কথা বলবেন ব্যক্তিগতভাবে। আপনি বুঝিয়ে বলবেন কোন জিনিসটা আপনার কাছে সমস্যা লাগছে। আমাদের আগের জমানার লোকেরা কি করতো? তারা তাদের জন্য দোয়া করতেন, যাদের সাথে মতভেদ হয়েছে, নিজের ভিন্নমত প্রকাশের আগে। এরপর মন থেকে দোয়া করতেন তাদের জন্য ভিন্নমত প্রকাশের পর। আর এরপর নিজেদের মতভেদের কথা অনলাইনে প্রকাশ করতেন না।

বলতে পারেন, “হ্যাঁ, তার জন্য তো দোয়া করেছি।” কারো জন্য পাবলিকলি দোয়া করতে হলে আসলে কারো জন্যই দোয়া করা হয় না। এটা যেন অন্যকে বলা, “ওহহো, আপনার এত সমস্যা! আল্লাহ যেন আপনাকে ঠিক করে দেন।” “মনে হয় আসমানী হস্তক্ষেপ ছাড়া আপনি পুরো ধ্বংস!” এভাবে তো সংশোধন করে না।

আর আপনি জানেন তাফাররুক কি করে? “হ্যাঁ এ গ্রুপটাকে আমি চিনি। আমি জানি তারা কি করতে চাচ্ছে।” ওহ তাই? এ গ্রুপের প্রত্যেক সদস্যকে আপনি চেনেন? আপনি জানেন তারা সবাই একভাবে চিন্তা করছে? আর তাদের একজনের ব্যাপারে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আর বাকি সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক? বলুন তো, সবাই কি একভাবে চিন্তা করে নাকি আলাদাভাবে চিন্তা করে? প্রত্যেকটা মানুষ কি ভিন্ন না?

কিন্তু আপনি জানেন তাফাররুক কি করে? আপনাকে পুরো গ্রুপের তড়িৎগতিতে বিচার করতে বলে কেবল একটা কথা দিয়ে। “আমি জানি তারা কি করতে চায়।” মানুষ এসব গ্রুপকে বিভিন্ন নামে ডাকে। অথচ অনেক সময়ে তাদের যে নামে ডাকছেন, তারা হয়তো সে নামে নিজের পরিচয়ও দেয় না। তাদের অবস্থা হলো, “ভাই, আপনিই তো আমাকে এ গ্রুপের সদস্য বানাচ্ছেন। আমি তো এ গ্রুপ চিনিই না! আপনি নিজ থেকেই আমার নাম লেখালেন?”

আল্লাহ বলছেন, “বাগইয়াম বাইনাহুম”। আল্লাহ এ কাজকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করেন। কারণ আমরা এখানে এসেছি আল্লাহর বিধান মান্য করতে। আমাদের কোনো গ্রুপ মান্য করতে না। আর এ জন্য আল্লাহ বলেন, “ওয়া লাও লা কালিমাতুন সাবাকাত মির রাব্বিকা ইলা আজালিম মুসাম্মা লা কুদিয়া বাইনাহুম।” “যদি না আল্লাহ ঘোষণা করতেন একটা নির্দিষ্ট সময় আছে, যে সময়ে তাদের কাজের শাস্তি দেয়া হবে, তাদের ব্যাপারে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো।” অর্থাৎ তাদেরকে শাস্তি দেয়া হতো, এবং চিরকালের জন্য তাদেরকে জাহান্নামে নেয়া হতো তৎক্ষণাৎ।

কিন্তু আল্লাহ বলছেন, “না, তাদেরকে কিছুকালের জন্য ছাড় দিয়ে রাখছি।” শাস্তি হবে আখিরাতে। দুনিয়ার জীবনে ভয়াবহ কিছু ঘটে। “ইন্নাল্লাযিনা উরিসুল কিতাবা মিম বা’দিহিম লাফি শাককিম মিনহু মুরিব।” এজন্যেই বিষয়টা ছিলো আমাদের প্রজন্ম এবং আগের প্রজন্মকে নিয়ে। আল্লাহ বলছেন, যখন প্রথম প্রজন্ম, পূর্বের প্রজন্ম এ ধরণের মতদ্বন্দ্বের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলো, এ ধরণের বিতর্কের মধ্যে ডুবে ছিলো, এ কাজটাই তারা করে। আর জানেন পরের প্রজন্মের ক্ষেত্রে কি ঘটে?

তারা এসে বলতে থাকে, “দেখলে, আমার গুরুজনেরা, মসজিদের মুরুব্বিরা, তারা খালি বিতর্ক করে, খালি ঘৃণা আর ঘৃণা!” “তারা খালি এক আরেকজনের সাথে মারপিট করে।” “খালি বলে এ লোক জাহান্নামে যাবে, সে লোক জাহান্নামে যাবে, অমুক জাহান্নামে যাবে।” আমি আর জানি না কে সঠিক। কি করবো? কার কথা শুনবো? কারণ একজন বলে আরেকজন ভুল, আরেকজন বলে সে-ই ভুল। তো, আসলে ধর্ম জিনিসটা খুব কনফিউজিং। মনে হয় না আর ধর্মকর্ম করবো। কারণ যারা ধর্ম শিখেছে, তারাই তো একমত হতে পারছে না। আমি তো এতকিছু জানি না, মনে হয় না ইসলাম জিনিসটা আমার জন্য। আপনারা আপনাদের মারপিট চালিয়ে যান, আমি এসবে নেই। আমি চলে যাচ্ছি।

পরের প্রজন্ম বিষয়গুলো দেখে, আর আসলেই ধর্ম থেকে দূরে সরে যায়। চিন্তা করে, ধর্ম যদি এতই ঐক্যের বাঁধনে মিলিয়ে দিতো সবাইকে, আসলে যদি সত্য হতো যে সবাই তারা ছায়া আশ্রয় নিয়ে পারে, তাহলে কিভাবে ধর্ম সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি মারপিট করে? কিভাবে তারাই সবচেয়ে বেশি বিভাজন তৈরি করে? সম্ভবত ধর্মটাতেই কোনো সমস্যা আছে।

আর এজন্য আয়াতটা বলছে, যারা তাদের পর কিতাবের অধিকারী হয়েছে, তাদের নিজেদেরই এ নিয়ে সংশয় আছে। পরের প্রজন্ম দীন নিয়েই সংশয়ে ভুগতে থাকে। এটা আল্লাহর শাস্তি তাদের জন্য, যারা এ ধরণের দলবাজি বা মতদ্বন্দ্ব করে। আর, যদি ‘শাক’ শব্দটাই যথেষ্ট হতো, ‘লাফি শাক্কিম মিনহু’, ‘ইনতাহাল কালাম’, তারা এ ব্যাপারে সংশয়ে আছে। কিন্তু আল্লাহ বলছেন, ‘লাফি শাক্কিম মিনহু মুরিব’। মুরিব হলো মুতাআদ্দি (কর্মকারক দরকার)। মানে, পরের প্রজন্ম কেবল সংশয়েই থাকে না, তারা সংশয়গুলো শেয়ারও করতে থাকে। সংশয়ের কথা বলতে থাকে। নিজেদের সংশয়বাদিতা নিয়ে কথা বলতে থাকে।

“কেন আমি নামায পড়ি না?” “কেন ইসলাম মানি না?” “কেন এখন আর মুসলিম নেই আমি?” এসব কথা বলতে থাকে। তাদের সংশয় অন্যদের মাঝে ছড়াতে থাকে।
মুরিব মানে সংশয়, যা অন্যদেরকে সংশয়ে ফেলে দেয়। অর্থাৎ আপনি একটা সমস্যা তৈরি করেছেন, সেটা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। লাফি শাক্কিম মিনহু মুরিব। সুবহানাল্লাহ। মতদ্বন্দ্বে নিমজ্জিত হয়ে থাকার কি ভয়াবহ ফলাফল!

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ৩৯০ বার

মন্তব্য: ০