Alapon

মুসলিম তরুণদের মাঝে প্রতিক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন...?



সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিক্রিয়াশীল ধার্মিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল বলা হয় তাদের, যারা স্পষ্ট বিধি-বিধান চান। হয় হালাল নয়তো হারাম। তাদের দৃষ্টিতে এর মাঝামাঝি বলতে আর কিছু নেই। কিন্তু ইসলাম এতোটা কট্টর আগেও ছিল না, এখনো না। তাহলে এই প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণ কী?

হযরত উমর রা. বলেছিলেন, জ্ঞানের তিনটি স্তর। যে জ্ঞানের প্রথম স্তরে প্রবেশ করে সে অহংকারি হয়। যে জ্ঞানের দ্বিতীয় স্তরে প্রবেশ করে সে বিনয়ী হয়। আর যে জ্ঞানের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করে সে নিজের অজ্ঞতা বুঝতে পারে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিনয়ী হয়।

জ্ঞানের সংজ্ঞার মতই যে সবেমাত্র দ্বীনে প্রবেশ করে, সে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। অর্থাৎ যারা কৈশর ও তারুণ্যে পাপের সাগরে ডুবে থেকে যৌবনে এসে যখন দ্বীনের সন্ধান পায়, তারা নতুন জীবন পায়। আর এই সকল তরুণরাই হয় প্রতিক্রিয়াশীল। তারা সবেমাত্র দ্বীনে প্রবেশ করে সবকিছুকে হালাল হারামের দৃষ্টিতে দেখতে চায়। সে কুরআনের বাংলা অর্থ পড়েই দ্বীনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। একইসাথে সেসব আলেম বা স্কলারদেরই কথা শুনতে বেশি পছন্দ করে, যারা প্রতিক্রিয়াশালী; যারা তার মত সারাক্ষণ হালাল হারামের চক্করে ঘুরপাক খেতে থাকে। আর যখনই তাদের দৃষ্টিতে একটু ভিন্ন কিছু ধরা পড়ে, তখনই তারা নিজেদের প্রতিক্রিয়াশীলতা প্রকাশ করে ফেলে।

যেমন ধরুন, নারীদের পর্দার ব্যাপারে। প্রচলিত অর্থে আমরা জানি, নারীকে মুখ ঢেকে পর্দা করতে হবে। একইসাথে ইসলামে এটাও আছে, মুখ খোলাও রাখা যাবে। কিন্তু অধিকাংশ তরুণরাই দ্বিতীয় মতটা জানেন না। জানলেও মানেন না। কারণ, এই মত তাদের পছন্দ না। সেকারণে যখনই তারা কোনো বোরখা আবৃত নারীকে মুখ খোলা অবস্থায় দেখে, তখনই তারা সেই নারীকে জাহেল বলে ঘোষণা করে। কেউ কেউ আগ বাড়িতে তাদের ফেতনাকারী হিসেবেও বলে।

আমার পরিচিত একজনের কথা বলি। প্রথম জীবনে সে পাপের পাহাড়ের চূড়ায় ঘুরে বেড়াতো। এমন কোনো পাপ নেই, যা সে করেনি। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে আল্লাহর রহমত হয় এবং সে দ্বীনের পথে ফিরে আসে। তারপর সে নিয়মিত ইবাদত বন্দেগি করে এবং ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকে। কোনো এক ইসলামি বইয়ে সে জানতে পারে, ইসলামের বাহিরে যেসব পড়াশোনা আছে, যেমন একাডেমিক পড়াশোনা সব হারাম। এই পড়াশোনা করে সার্টিফিকেট অর্জন করা হয় সেটাও হারাম। এই বই পড়ে সে বাড়িতে গিয়ে নিজের একাডেমিক সমস্ত সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়।

মূলত, যারা তারুণ্যে বা যৌবনে এসে ইসলামের সন্ধান পেয়েছে তারাই অধিক প্রতিক্রিয়াশীল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতিক্রিয়াশীলতাই সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। আর এই প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণ হল, ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত না জানা। পছন্দের শায়খের বক্তব্য শুনেই সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। আর সিদ্ধান্তটা বাকিদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতার কারণেই প্রতিক্রিয়াশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর প্রতিক্রিয়াশীলতা সবসময় ধ্বংসই ডেকে আনে। যার কারণে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ জনতার একটা বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে। ফলে, মানুষ ভাবছে এটাই হয়তো ইসলামের বৈশিষ্ট!

কিন্তু ইসলামের বৈশিষ্ট এটা নয়। ইসলাম উদার ও যৌক্তিক ধর্ম; প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম নয়। প্রতিক্রিয়াশীলতার এই সমস্যা থেকে বেরুনোর পন্থা একটাই, ইসলাম সম্পর্কে বিস্তর পড়াশোনা করা। জ্ঞান যেমন মানুষকে বিনয়ী করে, ঠিক তেমনই ইসলাম সম্পর্কে জানাশোনা যতো বৃদ্ধি পাবে, প্রতিক্রিয়াশীলতা ততোটাই হ্রাস পাবে।

পঠিত : ৪২১ বার

মন্তব্য: ০