Alapon

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকই খারাপ নন...



ডিসক্লেইমারঃ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক খারাপ নন, তাদের মধ্যেও আছেন মহৎ মানুষ, কিন্তু তারা সংখ্যালঘু। এই লেখা সংখ্যাগুরুদের নিয়ে। আমি কালকে জানতে পারলাম, ম্যাগনেসিয়াম ছাড়া প্রায় কোন কাইনেজ এনজাইম্যাটিক রিএকশান কমপ্লিট হয় না।

মানে, আপনার বডি যদি এক মলিকিউল গ্লুকোজও বার্ন করতে চায়, আপনার ম্যাগনেসিয়াম লাগবে। আপনার ব্লাড থেকে এক ফোটা সুগারকে যদি আপনি সেলের ভেতর নিতে চান, আপনার ম্যাগনেসিয়াম লাগবে।

আপনি যদি একটিভ ফর্মে এক মলিকিউল এনার্জিও চান, আপনার ম্যাগনেসিয়াম লাগবে।
আপনি যদি একটা ক্রেবস সাইকেল কমপ্লিট করতে চান, আপনার ম্যাগনেসিয়াম লাগবে।
ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সি চরম লেভেলে গেলে এই রিএকশন গুলার প্রতিটা রেট লিমিটিং স্টেপ রিভার্সড/ইনহিবিটেড হয়ে যায়।

এবং মডারেট ম্যাগনেসিয়াম ডেফিসিয়েন্সিতে এই স্টেপগুলা আর ইফিসিয়েন্ট থাকে না, তাই ব্লাডে খালি গ্লুকোজ ঘোরাফেরা করে, সেইখান থেকে হয় ডায়বেটিস। ডায়বেটিস সহ ৬৮টা ক্লিনিক্যাল প্রবলেম হচ্ছে ম্যাগনেসিয়াম ডিপেন্ডেন্ট বা ডেফিসিয়েন্ট। তো আমাদের বিরাট বিরাট বায়োকেমিস্ট্রি স্যাররা এক মাস দেয়ার মাস যাবত গ্লাইকোলাইটিক পাথওয়ে পড়াইতেন, তিন সপ্তাহ লাগতো ক্রেবস সাইকেল পড়াইতে। তাও উনাদের ভরতো না।
কিন্তু এতগুলা দিন পড়ায়েও তেনারা কোনদিন একটা বার বলসেন ম্যাগনেসিয়াম ছাড়া এই রিএকশনগুলা হয় না।

মলিক্যুলার লজিক অফ লাইফ-বায়োকেমিস্ট্রি-ফিজিওলজি-মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ডেফিসিয়েন্সি-নিউট্রিশনাল প্রবলেম-ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন এত্তগুলা কোর্স এবং এগুলার কয়েকটা আছে রিপিটেড কোর্স, প্রায় সবগুলাই ফুল ইউনিট কোর্স। কিন্তু সবখানে ক্যালসিয়ামের কথা দিয়া ভরা। ম্যাগনেসিয়াম নাই। কার্বন সাইকেল-অক্সিজেন সাইকেল-নাইট্রোজেন সাইকেল আছে, ইন্টারমিডিয়ারি মেটাবলিজমে এএমপি-এটিপি ইন্টারচেঞ্জ আছে কিন্তু সেখানে কোথাও কোনদিন ম্যাগনেসিয়ামটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয় নাই।
তো এই হল দেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইএনএফএসে বায়োকেমিস্ট্রি-ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের অবস্থা। এই বায়োকেমিস্ট্রি-নিউট্রিশন পড়ায়ে তারা দেশের লিডিং নিউট্রিশনিস্ট তৈরি করেন বইলা গর্ব করেন।

আমি মাঝে মাঝে একটা কথা বলি, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা এতই জঘন্য যে ঢাবির মত প্রতিষ্ঠান হয় এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আর নটর ডেম কলেজের মত কলেজ হয় এক নম্বর কলেজ। তাইলে বুঝেন বাকিগুলার কি অবস্থা! সারাজীবন পলিটিশিয়ানদের বুট লিকারি কইরা আর ছাত্রদের পিঠের উপর সালসা ড্যান্স দিয়া তারা তাদের জমিদারি টিকায়ে রাখেন। সেইদিন কার্জনে ছোটভাইদের সাথে হাটতেসিলাম। তখন বললাম, বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা হইতেসে লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ সালে যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত জারি করসিলো তারই সিলসিলা।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলা এইসব জমিদারদের চক্করে পইড়া এখন জমিদারদের বস্তি অথবা বস্তিদের জমিদারীতে পরিনত হইসে। যাদের আসলে কোন বিদ্যা নাই, আছে লবিং-লিকিংসর্বস্বতা আর অবিদ্যার অহংকার। নিজেদের অবিদ্যার অন্ধকার ঢাকতে এরা অহংকার করে আর সেই অহংকারে টান পড়লে ছাত্রদের ফেইল করায়ে নিজের জমিদারীর নিরাপত্তা সুরক্ষিত করে। একটা মানুষ কতটা আবর্জনা হইলে তার পক্ষে মাসের পর মাস গ্লাইকোলাইটিক পাথওয়ে, ক্রেবস সাইকেল পড়ায়ে ম্যাগনেসিয়াম নিয়ে না পড়ানো সম্ভব কালকে ভাবতেসিলাম। পরে মনে মনে হাসলাম।

ক্লাসগুলা বাঙ্ক দেয়া, লো এটেন্ড্যান্স, লো সিজিপিএ এগুলা নিয়া আমার মনে কোন আফসোস নাই। মনে পড়ে, ঐসব ক্লাসের বেশিরভাগই পোলাপান বালছাল বলতো, ইভেন মোস্ট রেগুলার পোলাপানও। আমার সাথে তাদের ডিফারেন্স ছিল, আমি বালছাল ক্লাস করতে পারতাম না, তারা পারতো। ফলে আমি ক্লাসে ঘুমাইতাম অথবা ক্লাস বাঙ্ক দিতাম অথবা আমাকে ক্লাস থেকে বাইর করে দেয়া হইতো। এইটা একটা কমন ঘটনা, আমাকে ক্লাসে ঘুমানোর অপরাধে ক্লাস থেকে বাইর করে দেয়া হইসে এবং আমি ক্যান্টিনে গিয়া চিকেন চপ, আলুর চপ আর ডিমচপ খাইতেসি।

এখন আমি প্রতিদিন আরো বেশি কনফিডেন্ট হয়ে উঠতেসি, যে মানের ক্লাস আমাদের করানো হয়, ওসব না করলে কারো কোন কিছু ছেড়া যায় না। ইউনিভার্সিটি যাদের কনফিডেন্স-মেরিট-কম্পিটিটিভনেসের সর্বনাশ করে দিসে, কয়েকটা বছর খাটলেই তারা আবার নিজের জায়গায় ফিরতে পারে। আমি জানি অনেকেই ভয়ে এই পোস্টে লাইক কমেন্ট করা থেকে বিরত থাকবে, আবার কোন জমিদারের চোখে পড়ে সেই কারনে।
বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রচণ্ড এন্টি পিপল এবং সেখানে ধারাবাহিকভাবে গণশত্রু উৎপাদন করা হয়, যারা পাবলিক সেক্টরকে পলিটিক্যাল-করপোরেট দস্যুতারই একটা অংশে পরিনত করতে কাজ করবে।

জাস্ট এই ঘটনাই এখন হেলথ সেক্টরে ঘটতেসে। ঘরে ঘরে তাই রোগী। হেলথ সেক্টর এখন হেলথ সেক্টর নাই, ডিজিজ সেক্টর হয়ে গেসে। এমন একটা জেনারেশন অফ নিউট্রিশনিস্ট এবং ডাক্তার উৎপাদন করা হচ্ছে যারা যে জিনিসটা জানা দরকার তা জানতেসে না।
ফলে মানুষ ভুগতেসে এবং মরতেসে। ডাক্তাররা দিনরাত খেটেও গণশত্রু হিসেবে গন্য হইতেসে এবং নিউট্রিশনিস্টরা ঠুটো জগন্নাথ হয়ে লেবু পানি খাওয়া আর সকালবেলা পাতলা ২টা রুটির ডায়েটের এডভোকেসির বাইরে কিছু করতে পারতেসে না। অথচ এই অবস্থার জন্য তারা দায়ী না। দায়ী সেই আমড়া কাঠের ঢেকিগুলা, যারা জীবনে আর কিছু করতে না পাইরা একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হইসে।

এই শিক্ষাকে বাইপাস করা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায় যারা তাদের জন্য ফরজ। প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের জন্য নিজস্ব কারিকুলাম তৈরি কইরা ঐ বিষয়ে রিয়েল অর্গানিক এক্সপার্ট তৈরির কাজ হাতে নিতে হবে। এবং চেহারা দেখানো উদ্যোগের বাইরে রিয়েল ইমপ্যাক্ট তৈরির কাজ হাতে নিতে হবে। যাই হোক, ম্যাগনেসিয়ামে ছিলাম। ম্যাগনেসিয়াম সাইকেলটা নিয়ে আজকে লেখার চিন্তা আছে, আল্লাহ যদি কবুল করেন। এগুলা প্রত্যেকটা মানুষের জন্য বোঝা দরকার, প্রত্যেকের হক্ব আছে কেন সে অসুস্থ হইতেসে তা জানার।

- মুহাম্মদ সজল

পঠিত : ৫২৫ বার

মন্তব্য: ০