Alapon

চাটুকারিতা ও মীরজাফরী....



আজ ১৭ই জানুয়ারি! দুরারোগ্য কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে, অবহেলা আর আত্ম-যাতনায় পিষ্ট থেকে ৭৪ বছর বয়সে ১৭৬৫ সালের এই দিনে পলাশীর বিশ্বাসঘাতক দের অন্যতম মীর জাফর আলী খান ধুকে ধুকে প্রাণ ত্যাগ করেন! পলাশী পরবর্তী যতদিন তিনি বেচেছিলেন, প্রতিটি দিনই ছিল তার জন্য বড় আত্মপীড়ন আর হতাশার দিন! দুনিয়াতে তার বাড়ীটি আজো বিশ্বাস ঘাতকের বাড়ী হিসেবে পরিচিত, আখেরাতের হিসেব তো বাকীই রয়েছে। যদিও পরবর্তীতে পলাশীর প্রতিটি বিশ্বাস ঘাতকের প্রাণ গেছে বড় নিষ্ঠুর ও নির্মমতার মধ্যে দিয়ে।

আলী ওয়ার্দী খানের (আলীবর্দি) শেষ দিকের রাজ্য শাসনে অতি উদারতা ও মহত্ত্বের পরিচয় দিতে গিয়ে জানকী রাম, দুর্লভ রাম, রাম নারায়ণ, কিরাত চাঁদ, গোকুল চাঁদ, উমিচাঁদ রায় ও কৃষ্ণচন্দ্র রায়দের হাতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরণ চলে যাবার ফলে, রাষ্ট্র ভিতর থেকে এমনতর দুর্বল অবস্থানে পৌঁছে যায় যে, মীর জাফর যদি বিশ্বাসঘাতকতা নাও করত, তাহলেও সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে বেশীদিন রাজ্য রক্ষা কিংবা অভিন্ন ভূখণ্ড ধরে রাখা সম্ভব হতোনা। আবার মীর জাফরি ব্যতীত সিরাজের পতনও অত সহজে হবার কথা ছিল না। পলাশীর প্রান্তরে মোহন-লালের ছোট্ট বাহিনীর আক্রমণের শুরুতেই ব্রিটিশ বাহিনী বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন।


ইতিহাস শুধুমাত্র মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতাকেই বেশী মাত্রায় উচ্চারণ করেছে! কেননা সে সিরাজউদৌলার আত্মীয় ছিলেন এবং সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিতে চাটুকারিতায় মগ্ন রেখে, সিরাজউদৌলাকে সঠিক তথ্য প্রদানে বাধা দিয়েছে। কিন্তু নিজ ধর্ম ও গোত্রের মানুষ না হয়েও জগত শেঠ, রায় দুর্লভ, রাজবল্লভদের রাষ্ট্রের যে পর্যায়ে উন্নীত রেখেছিলেন, তাদের উপর আস্তা ও বিশ্বাস রেখেছিলেন, তারাও সমান মাত্রার শঠতাই করেছে! তবুও বিশ্বাসঘাতকতার কালিমা তাদের গায়ে তেমনটি লাগেনি যতটুক লেগেছে মীর জাফরের পোষাকে। মূলত "চাটুকারের কোন জাত নেই, প্রত্যেক চাটুকারই একজন মীর জাফর"। আর "যে জেনে বুঝে চাটুকার পোষে, সে সভ্যতার সংহারক"। লর্ড ক্লাইভ ছিলেন তারই প্রতিচ্ছবি।

বিশ্বাস ঘাতক জাফর আলী খান আজ নেই কিন্তু জাফর আলীর অগণিত নাতি-নাতনীরা এখনও আমাদের মাঝে বিদ্যমান। রাষ্ট্র শক্তি থেকে সুবিধার আশায় ঘুরঘুর করা চাটুকার সকল নেতা-কর্মকর্তাই মীরজাফরের জীবন্ত প্রেতাত্মা। মীর জাফর চেনার এটাই সহজ ও সরল পন্থা। এদের কাছে দেশপ্রেমের কোন বালাই নেই। জাতির প্রতি দায়িত্ব নেই। ব্যথিত মানুষের প্রতি ওরা দয়ার্দ্র নয়! মীর জাফর তরবারি কোষমুক্ত করেনি কিন্তু বর্তমানের ওরা তরবারি হাতেই আপনজনের সম্পদ কুক্ষিগত করে। ওরা কোন দল-গোষ্ঠীরই বন্ধু নয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডে বিভক্ত হয়ে এরা প্রতিটি দলের ভিতরেই লুকিয়ে থাকে। "বাহিরে বড় গলায় কথা বলবে, ভিতরে ধারালো তারে তলা কাটবে"। সর্বদাই এরা জাতি ও রাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে সচল ছিল। আগে ছিল এনালগ মীর-জাফরি, পরিবর্তিত সময়ে এখন হয়েছে ডিজিটাল মীর-জাফরী।

- টিপু

পঠিত : ৪৭১ বার

মন্তব্য: ০