Alapon

গোপন পাপ এবং কিছু কথা...



মানুষ যখন জেনেবুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে গোপনে গুনাহ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিদায় নিতে থাকে। অন্তর যখন তাকওয়াশূন্য হয়ে যায়, তখন অন্তর পাথরের মতো শক্ত হতে থাকে। তখন আর অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয় না। মুনাজাতে চোখের পানি আসে না। এক পর্যায়ে তার কোনো আমলে আর মন বসে না। ইবাদত করতে ভালো লাগে না। কুরআন তিলাওয়াত আর আগের মতো মুধর মনে হয় না। ক্রমান্বয়ে সে ধ্বংস ও অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। সে বাঁচতে চায়, কিন্তু বাঁচতে পারে না। অবস্থা তো কখনো এতটা ভয়ানক হয় যে, তার ইমান পর্যন্ত বিনষ্ট হয়ে যায় এবং ইমানহীন অবস্থায়ই তার মৃত্যু ঘটে।

আর কেউ কেউ আসেন মানুষ পাপ করতে করতে এক সময় পাপকে আর পাপই মনে করে না! তার কাছে পাপ করা তুচ্ছ ও সামান্য ব্যাপার হয়ে যায়। তখন আল্লাহর ক্রোধ আর পরকালের ভয়াবহ আযাবকে সে পরোয়া করে না। ফলে, এক পর্যায়ে আল্লাহ তার জন্য পাপের কাজকে তার প্রিয় করে দেন! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা বলেন,
أَفَمَن زُيِّنَ لَهُۥ سُوٓءُ عَمَلِهِۦ فَرَءَاهُ حَسَنًا ۖ فَإِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَآءُ وَيَهْدِى مَن يَشَآءُ ۖ فَلَا تَذْهَبْ نَفْسُكَ عَلَيْهِمْ حَسَرٰتٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌۢ بِمَا يَصْنَعُونَ
অর্থঃ যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে।
(সূরা আল-ফাতির, আয়াত: ৮)

সে পাপ কাজকে তখন ভালোবাসতে শুরু করে; ফলে তার তাওবাহ করার নসিব হয় না। আর এই অবস্থায় সে আল্লাহর ক্রোধ এবং অসন্তুষ্টি নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
বহু মানুষ এমন রয়েছে, যারা অন্যদের কাছে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত নামাজ পড়ে, দ্বিনদার, ধার্মিক, আলেম কিংবা আল্লাহওয়ালা হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। প্রকাশ্যে তাকে পাপ কাজ করতে দেখা যায় না। কিন্তু গোপনে গোপনে তিনি নানা ধরনের গোনাহের কাজে লিপ্ত। অনেকে তো প্রকাশ্যে ভালো মানুষ হলেও গোপনে কবিরা গোনাহ করে। এটি একদিকে মুনাফেকি, অন্যদিকে ধীরে ধীরে তার আমল ও ইবাদত নষ্ট করে দেয়। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা ইরশাদ করেন,

وَذَرُوا ظٰهِرَ الْإِثْمِ وَبَاطِنَهُۥٓ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَكْسِبُونَ الْإِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوا يَقْتَرِفُونَ
অর্থঃ তোমরা প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ কর। নিশ্চয় যারা গোনাহ করেছে, তারা অতিসত্বর তাদের কৃতকর্মের শাস্তি পাবে। (আল আনআমঃ আয়াত নং-১২০)

এ ধরনের গোপন পাপ কথার দ্বারাও হতে পারে, চিন্তা বা নিয়তের দ্বারাও হতে পারে, আবার কর্মের দ্বারাও হতে পারে। গোপনে গাইরুল্লাহর নাম নিয়ে পশু জবাই করা—কথার গোপন পাপ। রিয়া বা অন্যকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা—নিয়ত বা চিন্তার গোপন পাপ। আর অপ্রকাশ্য ব্যভিচার (পরকীয়া) বা গোপন জিনা (প্রেম)—কর্মগত গোপন পাপ। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা ইরশাদ করেন,
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ الْفَوٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْىَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطٰنًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
অর্থঃ আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না। [আল আরাফঃ আয়াত নং-৩৩]

প্রকাশ্য গোনাহের চেয়ে গোপনে করা গোনাহ বেশি ভয়াবহ। কেননা যখন কেউ গোপনে গোনাহ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় বিদায় নিয়ে নেয়। ক্রমাগত সে ধ্বংস ও অধঃপতনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা কখনো এত ভয়ানক হয় যে তার ঈমান পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায় এবং ঈমানহীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।বর্তমান সময়ে গোপন গোনাহের সরঞ্জাম অনেক বেশি, আর উপকরণগুলোও সহজলভ্য। তাই সমাজের মানুষ দিন দিন গোপন গোনাহে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া দ্বিনদার শ্রেণির মানুষ থেকে শুরু করে আলেমরাও বাদ পড়ছেন না।

পূর্বের ও বর্তমানের একাধিক ঘটনা পাওয়া যায় যে, সারাজীবন দ্বীনদার ও পরহেজগার হিসাবে পরিচিত লোকটির মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হচ্ছে না। যতই চেষ্টা করছে, মুখ থেকে কালিমা বের হচ্ছে না। অনেকে তো শেষ সময়ে এসে সরাসরি ইসলামকেই অস্বীকার করে বসছে। কেউ কুরআন সামনে নিয়ে বলছে, আমি এর সবকিছু অস্বীকার করলাম। নিজ স্বীকারোক্তি বা পরিবার ও ভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সে বাইরে সবার কাছে ভালো দ্বীনদার হিসাবে প্রকাশ করলেও গোপনে নিয়মিত কবিরা গুনাহে লিপ্ত থাকত। উপরে উপরে সবাই তাকে ভালো হিসেবে জানলেও মানুষের অগোচরে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজসমূহে লিপ্ত হতো।

বর্তমানে গোপন গুনাহের আসবাব অনেক বেশি। উপকরণগুলো অত্যন্ত সহজলভ্য। তাই আমাদের যুবসমাজ দিন দিন গোপন গুনাহে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া দ্বীনদার শ্রেণিও বাদ পড়ছে না। এর ভয়াবহ ফলাফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রচুর মানুষ এখন সংশয়ের রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। দু’চারজন এটা নিয়ে চিন্তিত ও চিকিৎসা করার ব্যাপারে উদ্যোগী হলেও অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে উদাসীনই থেকে যাচ্ছে। শেষ জমানায় যে মানুষ ব্যাপকহারে ইমানহারা হতে থাকবে, তার বাস্তবায়ন বোধহয় শুরু হয়ে গেছে। বর্তমানের ভয়ংকর এ সময়ে কতজন যে মুক্তি পাবে, তা একমাত্র মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা জানেন!

ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. বলেন :
والحذر الحذر من الذنوب، خصوصًا ذنوب الخلوات، فإن المبارزة لله تعالى تسقط العبد من عينه. وأصلح ما بينك وبينه في السر، وقد أصلح لك أحوال العلانية،‎
‘গুনাহ থেকে পরিপূর্ণরূপে বেঁচে থাকা; বিশেষত গোপন গুনাহ থেকে। কেননা, আল্লাহর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বান্দাকে তাঁর নজর থেকে ফেলে দেয়। আল্লাহ ও তোমার মাঝে গোপনীয় বিষয় সংশোধন করো; তাহলে তিনি তোমার বহিরাগত বিষয় সংশোধন করে দেবেন।’ (সাইদুল খাতির : ২০৭, প্রকাশনী : দারুল কলাম, দামেশক)

ইমাম ইবনুল আরাবি রহ. বলেন :
أخسر الخاسرين من أبدى لِلنَّاسِ صَالِح أعماله، وبارز بالقبيح من هُوَ أقرب إِلَيْهِ من حبل الوريد.‎
‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত সে-ই, যে মানুষের সামনে ভালো আমল করে, কিন্তু যে মহান সত্তা তার শাহরগ থেকেও অধিক নিকটবর্তী, তাঁর সামনে বদ আমল করে।’ (তারিখু দিমাশক : ৫/৩৫৬, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরুত)

হাফিজ ইবনু রজব হাম্বলি রহ. বলেন :
أَنَّ خَاتِمَةَ السُّوءِ تَكُونُ بِسَبَبِ دَسِيسَةٍ بَاطِنَةٍ لِلْعَبْدِ لَا يَطَّلِعُ عَلَيْهَا النَّاسُ، إِمَّا مِنْ جِهَةِ عَمَلٍ سَيِّئٍ وَنَحْوِ ذَلِكَ، فَتِلْكَ الْخَصْلَةُ الْخَفِيَّةُ تُوجِبُ سُوءَ الْخَاتِمَةِ عِنْدَ الْمَوْتِ‎
‘বান্দার গোপন গুনাহ ও অবাধ্যতার কারণে মন্দ মৃত্যু হয়ে থাকে, যা মানুষ জানে না; চাই তা খারাপ কোনো আমল হোক বা অন্য কিছু। তার এ গোপন চরিত্রই তার মন্দ মৃত্যুর কারণ হয়।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১/১৭২/১৭৩, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

আল্লামা ইবনু কাইয়িম জাওজিয়া রহ. বলেন :
أجمع العارفون بالله أن ذنوب الخلوات هي أصل الانتكاسات.‎
‘সব আল্লাহওয়ালা এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, গোপন গুনাহ-ই অধঃপতন ও অবনতির প্রধান কারণ।’ (মাউকিউ দুরারিস সুন্নিয়্যা : ১/২৪৩)

গোপন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার উপায়সমূহ :
১. রোনাজারি করা ও আল্লাহর কাছে দুআ করা; যেন তিনি তাঁর নাফরমানি ও সকল গুনাহ থেকে হিফাজত করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন :
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ‎
‘আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে; বস্তুত আমি তো রয়েছি সন্নিকটেই। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করি, যখন তারা আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য, যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৮৬)

২. নফসের সাথে মুজাহাদা করা, তার কুমন্ত্রণা দূর করা এবং আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন :
وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا. فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا. قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا . وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا‎
‘শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর। অতঃপর তাকে অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। আর যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।’ (সুরা আশ-শামস : ৭-১০)

তিনি আরও বলেন :
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ‎
‘যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।’ (সুরা আল-আনকাবুত : ৬৯)

৩. কিয়ামতের দিন গোপন গুনাহকারীদের আমলসমূহ ধূলিকণার ন্যায় উড়িয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করা। বিশ্ব নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
لَأَعْلَمَنَّ أَقْوَامًا مِنْ أُمَّتِي يَأْتُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِحَسَنَاتٍ أَمْثَالِ جِبَالِ تِهَامَةَ بِيضًا، فَيَجْعَلُهَا اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ هَبَاءً مَنْثُورًا» ، قَالَ ثَوْبَانُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ صِفْهُمْ لَنَا، جَلِّهِمْ لَنَا أَنْ لَا نَكُونَ مِنْهُمْ، وَنَحْنُ لَا نَعْلَمُ، قَالَ: «أَمَا إِنَّهُمْ إِخْوَانُكُمْ، وَمِنْ جِلْدَتِكُمْ، وَيَأْخُذُونَ مِنَ اللَّيْلِ كَمَا تَأْخُذُونَ، وَلَكِنَّهُمْ أَقْوَامٌ إِذَا خَلَوْا بِمَحَارِمِ اللَّهِ انْتَهَكُوهَا‎
‘আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালা সমতুল্য নেক আমল নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হয়ে যাই। তিনি বললেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক, যারা একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত কর্মে লিপ্ত হবে।’ (সুনানু ইবনি মাজাহ : ২/১৪১৮, হা. নং ৪২৪৫ প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইল কুতুবিল আরাবিয়্যি)

৪. আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পর্যবেক্ষণের কথা চিন্তা করা যে, তিনি আমাকে সর্বদাই দেখছেন এবং এ ব্যাপারে তাঁকে ভয় করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন :
يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وٰحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَآءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِى تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
অর্থঃ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (আন নিসাঃ আয়াত নং-১)

৫. গুনাহ করার সময় এ চিন্তা করা যে, আমার শ্রদ্ধেয় বড় কেউ দেখলে কি আমি এমন গুনাহ করতে পারতাম? এভাবে নিজের লজ্জাবোধ জাগ্রত করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : وَاسْتَحِ اللَّهَ اسْتِحْيَاءَ رَجُلٍ ذِي هَيْبَةٍ مِنْ أَهْلِكِ‎
‘তুমি তোমার পরিবারের কোনো প্রভাবশালী সদস্যকে যেমন লজ্জা পাও, আল্লাহকে (কমপক্ষে) তেমন লজ্জা করো।’ (মুসনাদুল বাজ্জার : ৭/৮৯, হা. নং ২৬৪২, প্রকাশনী : মাকতাবাতুল উলুম ওয়াল হিকাম, মদিনা)

৬. এ চিন্তা করা যে, গুনাহরত অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যায় তাহলে কিভাবে আমি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করব। বিশ্ব নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَاتَ عَلَيْهِ‎
‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে (কিয়ামতের দিন) ওই অবস্থায় উঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।’ (সহিহু মুসলিম : ৪/২২০৬, হা, নং ২৮৭৮, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

৭. আল্লাহর নিয়ামত ও জান্নাতের সুখ-শান্তির কথা স্মরণ করা এবং জাহান্নামের আজাব ও ভয়ানক শাস্তি কল্পনা করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي آيَاتِنَا لَا يَخْفَوْنَ عَلَيْنَا أَفَمَن يُلْقَى فِي النَّارِ خَيْرٌ أَم مَّن يَأْتِي آمِنًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ‎ ‘নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে বক্রতা অবলম্বন করে, তারা আমার কাছে গোপন নয়। যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ, না যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে আসবে, সে? তোমরা যা ইচ্ছা করো। নিশ্চয় তিনি দেখেন, যা তোমরা করো।’ (সুরা ফুসসিলাত : ৪০)

৮. অবসরে জিকির ও ফিকিরে থাকার চেষ্টা করা। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা ইরশাদ করেন, إِنَّ فِى خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلٰفِ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَءَايٰتٍ لِّأُولِى الْأَلْبٰبِ
অর্থঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। (আল ইমরানঃ আয়াত নং ১৯০)
তিনি আরও বলেন, الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيٰمًا وَقُعُودًا وَعَلٰى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِى خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بٰطِلًا سُبْحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
অর্থঃ যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
(আল ইমরানঃ আয়াত নং-১৯১)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার কাছে আমরা ইমানের জন্য নিয়মিত দুআ করতে থাকি। গোপন গুনাহ থেকে সর্বাত্মকভাবে বেঁচে থাকি। মোবাইল ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে দূরে থাকি। দ্বীনদার আলিমদের সোহবত বেশি বেশি ইখতিয়ার করি এবং কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার ও ইসলামি বই অধিকহারে অধ্যয়ন করতে শুরু করি।

সুতরাং, পাপ হয়ে গেলে দ্রুতই ফিরে আসতে হবে এবং তাওবাহ করতে হবে। পাপের মধ্য অটল থাকা যাবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা আমাদের হিফাজত করুন। শিরকমুক্ত ইমান ও বিদআতমুক্ত আমল দান করুন। ইমানের হালতে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার তাওফীক দান করুন। ওমা তাওফীকি ইল্লা বিল্লাহ, আল্লাহুম্মা আমিন।

- সংগৃহিত

পঠিত : ৪৪৫২ বার

মন্তব্য: ০