Alapon

যে লেখার শিরোনাম নেই!




৬০ এর দশক পরবর্তী সময়ে বাংলা অঞ্চলে ইসলামী সাহিত্যের বিপ্লব সৃষ্টিতে 'জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ' অবদান সকলেই স্বীকার করে। বিশাল অনুবাদ শিল্পের ভান্ডার এখনো ইসলামীপন্থীদের সবচেয়ে বড় পুঁজি।

কিন্তু ২০১০ সাল পরবর্তী জামায়াতের প্রকাশন, পত্রিকা তুলনামূলক দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে জামায়াতের সবচেয়ে বড় আউটপুট হল, চিন্তার বিপ্লব।'ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা' এই বাণীটি জামায়াত রাষ্ট্র থেকে নিয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌছাতে পেরেছে।ফলশ্রুতিতে শতশত প্রকাশনা ও সম্পাদক নতুনভাবে উঠে আসে। নানা বাস্তবতায় বড় একটি অংশ ঝড়ে পড়লেও জনমননে তার প্রভাব রয়েই যায়।

এই সময়ে সৌদি সরকারের অর্থায়নে সালাফি অঙ্গনে অনুবাদ সাহিত্যের ঢেউ উঠে এবং সারাদেশব্যপী ফ্রি বিতরণ হয়। পাশাপাশি কিতালিস্ট গ্রুপগুলি নানাবিধ বই, পত্রিকা বের করতে থাকে।

তবে সাধারণত মুসলিমগন সেই আব্দুর রহীম, আব্বাস আলী খানদের মতই গুছালো লেখনী ও প্রকাশনাকে খুঁজতে থাকে।

এরইসাথে কওমি অংগনে বড়বড় প্রচুর প্রকাশনা হয়েছে। কিন্তু জামাতের চিন্তাধারার বিশাল পাঠকেরা কই যাবে? ওই যে বললাম আগের তুলনায় আজ আমরা দুর্বল!

যাইহোক, এরই মাঝে উঠে সাবেক শিবিরের কার্যক্রম থেকে তৈরি হওয়া বড় একটা শ্রেণীআলহামদুলিল্লাহ। তবে এখানে যতটা আশার দিক, ততোটুকুই হতাশার! বড় একটা মহল শুধু ব্যবসায়িক সুবিধা তথা জামায়েতের এই শ্রেণীকে পুজি করে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দাড় করায়!!

আজ একটা ছোট্ট উদাহরণ দিব, যেমন- একজন ভাই কয়েকদিন আগে তার নিজের প্রকাশনাকে নিজেরই সমার্থক বানিয়ে বলেছিলেন ;

``আমার প্রকাশনা জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করেনা।আমরা জামায়াতের মুখপাত্র নই। আমরা আমাদের পলিসি মেনেই ব্যবসা করি``

সেই একই মানুষের মুখে একই ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীকে সমার্থক ধরে নিয়ে আরেকটা কথা দেখলাম,

``জামায়াতের বর্তমান পলিসিই আমার পলিসি।জামায়াত এখন যা মনে করেন আমিও তাই মনে করি। আমার মনে হয় জামায়াতের সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানপ্রেমীরা অতি বিশুদ্ধবাদী। উনাকে এপ্রেশিয়েট করে আরেকজন বলেছেন, এদেরকে গলাধাক্কা দিয়ে দল থেকে বের করে দিতে হবে``।

ব্যবসায়ীরা যেমন সব সময়ই সরকারী দল করেন ঠিক তেমন নীতিতে তিনিও একবার নিজেকে জামায়াত থেকে দূরে রেখে আরেকবার বলছেন জামায়াত যা চিন্তা করে আমিও তাই করি।
স্পষ্ট বুঝাই যায় ঐ ভাই নিজের ভ্রান্ত ও এজেন্টশীপের ভাগ পেতে গিয়ে একদিকে যেমন জামায়াতের মৌলিক বিষয় নিয়ে মানুষকে ভ্রান্তিতে ফেলার চিন্তায় বিভোর। আবারএকইদিকে "আমি আজকের জামায়াতের পলিসি মানি" বলে জামায়াতের জনশক্তিদের থেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টায়ও বিভোর।

হ্যা! ব্যবসায়ীরা সরকারী দল করার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই সো কোল্ড জামায়াতীরা। এই সো কোল্ড জামায়াতীদেরকে জীবনে জামায়াতের কোন প্রোগ্রাম শেয়ার দিতে দেখবেন না কিন্তু দেখবেন তারা অন্যদলের মিছিল-মিটিং শেয়ার দিচ্ছে আর মুসলিম উম্মাহর জয়গান গাচ্ছে। নাম দিবে কি?-ঐক্য।

ঐক্যের নাম দিয়ে তারা জামায়াতের প্রচারণা করতে পারেনা, জামায়াতের মৌলিক বইগুলো নিয়ে কাজ করতে পারেনা কিংবা ইসলামের মৌলিক চিন্তা যা জামায়াত বেশি হাইলাইট করে অর্থাৎ 'খেলাফতে নিযাম' নিয়েও তাদের কোন প্রচারণা চোখে পড়েনা।এগুলোর ব্যাপারে আপনি প্রশ্ন করুন;তখন সাথে সাথেই বল দিবে-এটা আমার ব্যবসা, এটা জামায়াতের মুখপত্র না।কিন্তু নিজের ভ্রান্ত চিন্তা জামায়াত কর্মীদের মনে ঢুকিয়ে এজেন্টশীপের বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঠিকই বলবে-বর্তমান জামায়াত পলিসিই আমার পলিসি।

এইতো গেল একদিক। এবার আরেকদিক দেখেন, জামায়াতে ইসলামীর মৌলিক কাজ হলো আনুগত্য বাইয়াত ও যারা ইসলামী হুকুমাত কায়েম করতে চায় তাদেরকে একই ব্যানারের মধ্যে নিয়ে এসে একটা সংঘবদ্ধ চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু এইসকল সো কোল্ড জামায়াতীরা কি করছে দেখেন,

কয়েকদিন আগে দেখলাম তারা নুমান আলী খানের প্রকাশিতব্য বই থেকে কোট করেছে,``দ্বীনের কাজ করতে হলে কোন ব্যানারের অধীনে করতে হবে এমন না``-অর্থাৎ ধইঞ্চা, উজবুক -মাতলা যে যার মত যেকোন জায়গায় দ্বীনের কাজ করলেই সেটা হয়ে যাবে তার কোন সংঘবদ্ধ রূপ লাগবেনা।দেখেন যেখানে জামায়াতের মূল বক্তব্যই হলো- তোমার সংঘবদ্ধ হও একই ব্যানারে-সেখানে তারা বলছে দ্বীনের কাজ করতে হলে একই ব্যানারে করা লাগবেনা।

তাইলে এইসব সো কল্ড জামায়াতীরা কিভাবে বর্তমান জামায়াতের পলিসিকে মেনে নিল? এতে কি প্রমাণ হয়না যে, ব্যবসায়ীরা আসলেই সরকারী দল করে?এবং এখানেও তা হয়েছে। কারণ আমার বইতো দিনশেষে জামায়াতের অমুক তমুকই পড়বে। তাই এদেরকেও হাতে রাখা চাই।

``তারপর আবার দেখেন আরেকদিন লিখছে যে, আনুগত্যের খাতিরে অনেক সময় নেতারা আমাদেরকে ব্যবহার করেন। দেখা গেছে আমাদের মা-বোন অসুস্থ আবার এদিকে প্রোগ্রাম আছে কিন্তু ছুটি নাই।দায়িত্বশীলরা তখন আমাদেরকে বলবেন, তোমরা তোমাদের মা-বোন স্ত্রী পরিজন থেকে বেশি বেশি সংগঠন ও ইসলামকে ভালোবাসো।বিবি অসুস্থ কিন্তু ইসলামের কথা বলে এখানে ওভার ইউজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা সুস্পষ্ট ভ্রান্তি।এরকম করলে হবেনা।আগে মা-বোন স্ত্রীর প্রাধান্য দিতে হবে।``(সামারাইজ)

এখন দেখেন- সংগঠন তার জনশক্তিদেরকে আয়াত হাদীসের দারস দেয়।ব্যক্তি যেন আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলকে তার আহলের চেয়েও বেশি ভালোবাসে সেই সংক্রান্ত আয়াত-হাদীস সংগঠন শেখায়।এবং একজন মুসলমান ততক্ষণ মুমিন না, যতক্ষণ না তিনি আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলকে নিজ পরিবার,বাবা,মা,ভাই,বোন ও আত্মীয়স্বজন থেকে অধিক ভালো না বাসেন।সেখানে এই সো কল্ড জামায়াতীরা কি শেখাচ্ছে দেখেন।

হে, শরীয়তে রুখসত আছে সেই অনুযায়ী আমরা ছুটিও পাই কিন্তু এখানে এরা শেখাচ্ছে কি? শেখাচ্ছে ছুটি কি আবার!নেতারা আমাদেরকে নাকি কব্জা করে ফেলেছেন।আমাদেরকে নাকী ইসলামের দোহাই দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।যখন স্ত্রী-মা- বোন অসুস্থ থাকবেন তখন আগে এদের পেছনে ছুটতে হবে, পরে বাকীসব।এরপরেও এরা হলো জামায়াতী আর বাকীসব হলো অসভ্য, বর্বর পাকিস্তানপ্রেমী।

আবার দেখেন এরা নিজের এজেন্টশীপ বাস্তবায়নের জন্য কি লিখছে-লিখছে যদি কেউ সংগঠন থেকে বের হয়ে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তার করণীয় কি হবে। আর যে সংগঠন থেকে সে বের হবে সে সংগঠনের তার ব্যাপারে করণীয় কি হবে। এখন দেখেন কিভাবে সব স্পষ্ট হয়, প্রথমে বাইয়াত নিয়ে আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুললো,পরে বললো একই ব্যানারের অধীনে বা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে হবেনা, তারপর এখন সংগঠন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরের করণীয় সম্মন্ধে আইডিয়া দিচ্ছে।

এখানে মূলকথা হল,
এরা সত্যিকারের চেতনা ব্যবসায়ী (একটা পবিত্র চেতনাকে পুজি করে প্রতিষ্ঠান চালানো এবং নিজে সেলিব্রেটি হওয়া), অন্যথায় এই বিপ্লবী আন্দোলকে দরদদিয়ে ভালবাসলে কখনই চিহ্নিত শত্রুদের বই ও বয়ানকে সামনে আনতোনা! রাজনৈতিক ইসলামের কঠিন বিরোধীতাকারী সেক্যুলার শক্তিকে হাইলাইট করতোনা!মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে জামায়াতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ভাঙ্গনের সুর তুলতোনা।ইসলামী আন্দোলনের রূহ নষ্টকারী কিউট সালাফিজমকে প্রমোট করতোনা!
কিন্তু সাংগঠনিক নেতা ও সাধারণ জনশক্তিরা ব্যাপকহারে এসব কাজকে আধুনিক প্রকাশনীর বিকল্প হিসেবে নিচ্ছে! যা আমাদের জন্য অশানি সংকেত!

আমাদের জনশক্তিকে বুঝতে হবে যে, ইসলামী আন্দোলনের নিজস্বতা নষ্ট করছে এরা!! তাই আমাদের উচিৎ 'খেলাফতের কনসেপ্ট' নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে, আত্মবিশ্বাসের বয়ান সংগ্রহ করে তারপর অন্যদের পড়া। অন্যথায় এজাতীয় চেতনা ব্যবসায়ীদের দ্বারা আমরা ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হতেই থাকব!!


~সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ তোফায়েল

পঠিত : ৭৮২ বার

মন্তব্য: ০