Alapon

।।শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় বিকশিত হোক প্রজন্ম।।

রীতি-নীতি তব খ্রিস্টান সম, হিন্দু তো তুমি সভ্যতায়,
এই কি হে সেই মুসলিম যারে ইয়াহুদিও দেখে লজ্জা পায়?
মুখে বলো তুমি মীর্জা, সাইয়্যেদ, মহা-তেজস্বী আফগান বীর পাঠান;
সব কিছু তব হওয়া সম্ভব, নহ শুধু তুমি মুসলমান! (১)

ডক্টর আল্লামা ইকবাল (রাহঃ) মনের ক্ষোভে এই কবিতা লিখে গেলেও এর প্রতিফলন আজকের সমাজের স্তরে স্তরে দেখা যাচ্ছে। তথাকথিত স্মার্টনেসের দোহাই দিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও ভারতীয় সংস্কৃতির আদলে নিজেদের গড়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে আমাদের যুবসমাজ! ইসলামী সংস্কৃতিকে ভুলে গিয়ে ইসলাম কে কেবল নিছক ধর্ম মনে করে কিছু ইবাদাত, কিছু রীতিনীতির মাঝে সীমাবদ্ধ রাখছে তারা।

“সংস্কৃতি” শব্দটি মূলত সংস্কৃত ভাষার শব্দ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো “কালচার” যার অর্থ কর্ষণ করা। আর আরবী প্রতিশব্দ হলো “আস সাকাফাহ”। সাকাফাহ শব্দের অর্থ উপলব্ধি করা, জানা ও প্রশিক্ষণ পাওয়া। পরিশীলিত, প্রশিক্ষিত, মার্জিত ও রুচিশীল ব্যক্তিকে বলা হয় ‘‘মুসাক্কাফ’’ বা সংস্কৃতিবান। আর সংস্কৃতি শব্দটি গঠিত হয়েছে “সংস্কার” শব্দ থেকে । যার অর্থ শুদ্ধি, পরিমার্জন, মেরামত, ভূল সংশোধন। সুতরাং সংস্কৃতি অর্থ হলো সংস্করণ, বিশুদ্ধকরণ, অনুশীলনলব্ধ দেহ, মন ও আত্মার উৎকর্ষ সাধন ।


ড. সালেহ হিন্দি ইসলামী সংস্কৃতির সংজ্ঞায় বলেন, এ হলো এমন এক জীবন পদ্ধতি যা মুসলমানগণ প্রতিনিয়ত প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টি ভঙ্গি ও জীবনাদর্শের আলোকে অবলম্বন করছে । চাই তা সামাজিক জীবনের বৈষয়িক ক্ষেত্রেই হোক কিংবা সভ্যতা নামে পরিচিত আত্মিক চিন্তার ক্ষেত্রে হোক। (২)


বর্তমান সমাজে এই যে এত সমস্যা বিদ্যমান, তার মাঝে অধিকাংশ সমস্যার মূলে রয়েছে নৈতিকতার অভাব, পরকালের জবাবদিহিতা সম্বন্ধে সচেতন না থাকা, আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের ব্যাপারে গাফেল হয়ে যাওয়া! সর্বোপরি, বস্তুবাদী চিন্তাধারা পোষণ করার মাধ্যমে নিজেদের এই দুনিয়ার চাকচিক্যের মাঝে হারিয়ে ফেলা। বাংলাদেশের যুবসমাজ আজ পশ্চিমা ভাবধারায় নিজেদের গঠনে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের মাঝে এ ধারণা নেই যে, পশ্চিমা সমাজ ক্রমান্বয়ে তাদের নৈতিকতার ভিত্তিধ্বস করার কাজে স্লো পয়জনিং এর মত এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। শুনতে হয়তো কিছুটা অবাস্তব মনে হতে পারে। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করে এই কথার সত্যতা পাওয়া যায়।

ইসলামী ইতিহাসের স্বর্ণযুগে পশ্চিমা জাতিগুলো মুসলমানদের, ক্রমাগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সামরিক শক্তিতে হারাতে সম্ভব না হলে তারা মুসলিম জাতিকে নৈতিকতার অবক্ষয়, ঈমানের ভিত্তি দুর্বল করে দেওয়া, দুনিয়াবি ভোগবিলাসের সামগ্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ সভ্যতা হিসেবে নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও, তারা আজ তাদের পরিকল্পনায় সফলপ্রায়।

আজ মুসলমান কেবল নামধারী হয়ে সমাজে বিরাজমান!
সবকিছুতে আমরা কেবল অনুকরন করেই যাচ্ছি। বর্তমানে আমাদের যুবসমাজের পোশাক,খাদ্যাভ্যাস, বাচনভঙ্গি, পরিবারের সাথে আমাদের আচরনবিধি সহ আমাদের জীবনযাত্রার সবকিছুই বলতে গেলে মিডিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই মিডিয়াকে ইহুদি খ্রিস্টান অপশক্তি গুলো তাদের হাতিয়ার রূপে গ্রহণ করেছে।

মাঝিবিহীন নৌকার মত জীবনের লক্ষ্য হারিয়ে মাঝ দরিয়ায় খাবি খাচ্ছে যুবসমাজ। আপনাকে বেশিদূর ভাবতে হবে না, আসন্ন ঈদের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আমাদের বোনেদের মাঝে হিড়িক পড়ে যাবে জনপ্রিয় সিরিয়ালের নায়িকাদের পরিহিত পোশাক ক্রয়ের জন্য।

মিডিয়ার প্রভাবঃ

নাটক সিনেমা গুলো আমাদের মস্তিষ্কের অবচেতন অংশে কাজ করে সক্রিয়ভাবে। বাংলাদেশে আজ থেকে ১০/১১ বছর আগেও হারাম রিলেশন এতটা প্রচলিত ছিল না। উপরন্তু কেউ প্রকাশ্যে গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরে বেড়াতো না। কেউ বের হলেও মুরব্বিরা সামনে পড়লে আলাদা হয়ে যেতো কিংবা লজ্জা পেতো। অথচ আজ! নাটকে অবৈধ রিলেশনকে যেভাবে প্রমোট করা হয়, তার প্রভাবে যুবসমাজ তাদের লজ্জা হারিয়ে ফেলেছে। তাদের কাছে অবৈধ রিলেশন জ্বেনা মনে না হয়ে পবিত্র সম্পর্ক, ভালোবাসা মনে হয়। আমাদের অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারের ভাই/বোনেরা ও আজ এই ফেতনাতে জড়িয়ে পড়েছেন অজান্তেই। ক্রমাগত চোখের দৃষ্টি, কণ্ঠের স্বরের মাধ্যমে তারা জ্বেনা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত! যেখানে আল্লাহ্‌ সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করে দিয়েছেন,
“তোমরা জ্বেনার কাছেও যাবে না। কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জতার কাজ এবং খুবই খারাপ পথ” (৩)

এ কোন পথে চলছে সমাজঃ

একটা সময় ছিল, যখন আমাদের দেশের পরিবারগুলোতে ফজরের পর কোরআন তিলাওয়াতের সুললিত সুরে মুখরিত হয়ে উঠতো পবিত্র সকাল। পারিবারিক বন্ধন গুলো ছিল মধুর, নিয়মের মাঝে যাপিত হতো শিশু কিশোরদের সময়। এখনকার সময়ে সারারাত মুভি দেখে শেষরাতে ঘুমাতে যাওয়া আমাদের ভাই বোনেরা ফজর কাজা করেন অনায়াসে। আমাদের তরুন প্রজন্মের দিন কাটে আড্ডা, মাস্তি, জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরাঘুরি, আউটিং এ! পরিবারের সাথে তারা সময় কাটান কম। যার কারণে পারিবারিক বন্ধন গুলো শিথিল হয়ে যাচ্ছে।

আমাদের মা বাবারা আমাদের তথাকথিত স্বাধীনতা দিতে গিয়ে ইসলাম প্রদত্ত নৈতিকতার শিক্ষাদান ও তার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকছেন। দিনশেষে আদরের সন্তানের বখে যাওয়া প্রত্যক্ষ করে তারাই বুক ভাসাচ্ছেন। এভাবে চললে চলবেনা। যুগের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে এদেশের যুবসমাজ নিজেদেরকে প্রচলিত সব সমস্যা থেকে উত্তরণ দিতে পারবেন না। আপনাকে ফিরে আসতেই হবে মানবিকতার সমন্বয়ে গড়ে উঠা ইসলামী সংস্কৃতির কাছে। জীবনবিধান হিসেবে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ইসলামকেই মেনে নিতে হবে কেননা আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেন,
“যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইবে, তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন”।(৪)

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তিন প্রকারের লোক আল্লাহর কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত। হারাম শরীফের পবিত্রতা বিনষ্টকারী, ইসলামে বিজাতীয় রীতি-নীতির প্রচলনকারী এবং কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য প্রচেষ্টাকারী। (৫)

রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির তাশারূহ (সাদৃশ্য) ধারণ করলো সে তাদেরই দলভুক্ত হলো। (৬)

চাও যদি সমাধান, মানো আল্লাহর আইনঃ

পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে প্রাপ্ত ধারায় আমাদের যুবকেরা পপ গান, মিউজিক সহ গান শোনা, অবৈধ রিলেশন, অশ্লীল মুভি দেখা, মদ্যপান,বিভিন্ন নেশার প্রতি আসক্তি সহ নানান অনাচারে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছে। যার ফলশ্রুতিতে সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে নানা বিশৃঙ্খলা। এসকল বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পেতে আইনের প্রয়োগ করা হয় ঠিক ই। কিন্তু বাস্তবিকভাবে এই আইন প্রয়োগের চাইতেও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো যুবসমাজের মাঝে ইসলামী সংস্কৃতি, ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত করে তোলা। আল্লাহ্‌ প্রদত্ত আইনের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকলেই একজন মানুষের সমস্ত খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

এই কথার সত্যতা উপলব্ধি করানোর জন্য আপনাদের কাছে উপস্থাপন করবো বিশ্বের কাছে সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত দেশ আমেরিকার কথা।

তারাই আইনের সাহায্যে নৈতিকতা ও সামাজিক সংশোধনে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসরে প্রয়াস চালায়। তারা মদ্যপানকে সর্বস্তরে নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রচারণা চালায়। অনুমান করা হয়, আন্দোলনের সূচনা থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত শুধু প্রচারনার জন্য সাড়ে ছয় কোটি ডলার ব্যয়িত হয়েছে এবং এই কাজের জন্য লিখিত পুস্তকগুলোর মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল প্রায় নয়শো কোটির মতো! ১৯২০ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১৯৩৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত উক্ত আইন কার্যকর করার ব্যাপারে প্রায় দুশো লোক নিহত হয়েছে, ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার ৩৩৫ জনকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে, ১ কোটি ৬০ লক্ষ পাউণ্ড জরিমানা ধার্য করা হয়েছে এবং ৪০ কোটি ৪০ লক্ষ পাউণ্ড সমপরিমাণ মুল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যখন প্রচারণা করা হয়েছিল, মার্কিন জনগন এই উদ্যোগ কে সাদরে অভিনন্দন জানায়। কিন্তু বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে পাপাচার বিহীন একটি রাত কাটিয়ে সবচেয়ে সভ্য, শিক্ষিত, সত্যপ্রিয়, উন্নত জাতি এমন আচরণ শুরু করলো বিরহে , যেনো প্রাচীন কাব্যের প্রেমিকদের মতো এরা নিজের মাথাটাই ঠুকে দিবে।
অনুমোদিত মদ্যশালা বন্ধ করে দেওয়ার পর অলিগলিতে গোপনে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠলো মদ্যশালা, যেখানে বিক্রি করা হতো অস্বাস্থ্যকর মদ। যার প্রভাব পড়ে মানুষের স্বাস্থ্যে ! আইন ঘোষণার পূর্বে ও পড়ে অ্যালকোহলে আক্রান্ত লোকের সংখ্যার পার্থক্য ছিল প্রায় আট হাজার এবং মৃত্যুবরণকারীর সংখ্যার পার্থক্য ছিল প্রায় সাত হাজার! এবার দেখুন, একটি সভ্য জাতি যারা উন্নতির চরম শিখরে রয়েছে এবং মদের অপকারিতা সম্বন্ধে সম্যক অবগত, তাদের দ্বারা এত প্রচেষ্টার পরও আইনের কার্যকরণে ফলাফল এসেছে ধ্বংসের সমান!

অথচ, আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে, জাহিলিয়াতের যুগ থেকে উঠে আসা আরব জাতি; যারা ছিল নিরক্ষর, তাদের মাঝে যারা আল্লাহকে স্বীকার করে ইমান এনেছিলো, আল্লাহ্‌ তায়ালা কর্তৃক মদ্যপান সংক্রান্ত বিধান পাওয়ার পর তাদের প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল, জেনে আসা যাক। আল্লাহ্‌ নাজিল করেন,

“ হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি, পাশা খেলা ইত্যাদি হচ্ছে শয়তানের উদ্ভাবিত নোংরা কাজ; সুতরাং ওগুলো তোমরা বর্জন করো” । (৭)

এই নির্দেশ আসার সাথে সাথেই সুরাপ্রেমিকগণ, যারা নিজেদের জীবন পর্যন্ত মদের নামে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছিলেন, তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেলো। মদিনার অলিগলিতে মদের বন্যা প্রবাহ হয়ে গেলো। এক মজলিসে বসে দশ এগারো জন সাহাবী মদ পান করছিলেন, তাদের কানে এই বিধান আসার সাথে সাথে নেশাগ্রস্ত অবস্থায়ও তারা ঠোঁট সরিয়ে নিলেন সুরার পাত্র হতে এবং সমস্ত পাত্র চুরমার করে দিলেন। পরবর্তীতে ৮০ টি বেত্রাঘাতের বিধান করার পর আরবদেশ থেকে মদের নাম নিশানা মুছে গেলো।

এবার ভাবুন, এমনটি সম্ভব হয়েছিলো কেবলমাত্র আল্লাহর বিধানের প্রতি বিশ্বাস এবং আখিরাতের প্রতি ভয় থাকার কারণে!

আধুনিকতার নামে অশালীনতাঃ

অপসংস্কৃতির ভয়াবহতার কারণে আমাদের সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে পোশাকের নামে অশ্লিলতা! আমাদের সমাজের বোনেরা তথাকথিত স্মার্টনেসের নামে জিন্স, টি শার্ট পরিধান করছেন। তাদের মননে নারী স্বাধীনতার নামে যেই অশালীনতার বীজ বুনে দিয়েছে পশ্চিমা অপশক্তি, তার প্রভাবে আল্লাহর আইনের লঙ্ঘন তাদের কাছে কিছুই মনে হচ্ছেনা। অথচ নবী (সাঃ) কঠোর ভাষায় বলে দিয়েছেন,

“নারীর জন্য পুরুষালী পোশাক পরিধান করা এবং পুরুষের জন্য নারীসুলভ পোশাক পরিধান করা সম্পূর্ণ হারাম”
( আহমেদ, আবু দাউদ, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ) (৮)

দিবসের বেহায়াপনাঃ

পহেলা বৈশাখ আমাদের দেশে বেশ আড়ম্বর সহকারে পালিত হয়। নতুন বর্ষ বরণের আড়ালে চলে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতির আরাধনা! আর অশ্লীলতার ছড়াছড়ি নিয়ে কথা না-ই বা বললাম! ভ্যালেনটাইন দিবস (বেহায়া দিবস নামে সমধিক খ্যাত), আজকের বাংলাদেশে এই দিবসের প্রচলন এত ব্যাপকতা ধারণ করেছে যে, এটাকে আমরা নিজস্ব সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলেছি। প্রকৃতপক্ষে, এই দিবস অশ্লীলতার নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইসলামে অবৈধ সম্পর্কের কোন জায়গাই যেখানে নেই, সেখানে এই দিবসকে মুসলিম প্রধান আমাদের এই দেশে এভাবে উদযাপন করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এসব অশ্লীলতা সমাজে ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ্‌র ক্রোধ থেকে আমি, আপনি বাঁচতে পারবো না। অতএব, আমাদের উচিত, এসব অপসংস্কৃতিকে সমাজ থেকে দূর করার জন্য সচেতন হওয়া!

অন্তঃসারশূন্য এক সংস্কৃতির লালনঃ

আমরা যারা পশ্চিমা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ ভেবে অনুসরণ করি কিংবা তাদের কাজগুলো কে আদর্শ মনে করি, আমাদের জানা উচিত, এই সংস্কৃতির মূলে রয়েছে বস্তুবাদী মনোভাব। নৈতিক মূল্যবোধবিহীন এই সংস্কৃতিতে যা কিছু আনন্দ দেয়, তাকেই বৈধ বিবেচনা করা হয়। যার কারণে, পর্ণোগ্রাফির মতো ভয়াবহ, অনৈতিকতার প্রসার ঘটানো উপাদানকে তারা প্রমোট করে চলে অবলীলায়!

আমাদের ইসলাম ধর্মে অভিবাদন হিসেবে সালামের প্রচলন রয়েছে। সালামের মাধ্যমে একে অপরের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও রহমত এর দোয়া করা হয়। অথচ, এত সুন্দর, সম্মানিত হওয়ার মতো অভিবাদন বাদ দিয়ে আমরা পশ্চিমা কায়দায় একে অপরকে হাই/হ্যালো বলে থাকি!ইসলাম আমাদের নারীদের জন্য সম্মানিত পরিচ্ছদ হিসেবে হিজাবের ব্যবহারে অভ্যস্ত করেছে। অথচ আমরা নিজেদের প্রদর্শন করে নিজেদের সম্মানহানি করে চলেছি!

কি দুর্ভাগ্য আমাদের! এই মানসিক গোলামী থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে শীঘ্রই।

তবে উপায় কি ?

সমাজে বিরাজমান অপসংস্কৃতির প্রভাব থেকে আমাদের মুক্ত হতে হলে পারিবারিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই যথাযথ কিছু নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত।

~ পরিবারের সঞ্চালক রূপে, শিশুদের গঠনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারেন একজন মা। একটি শিশু যখন বেড়ে ওঠে তখন কান্না করার পর তার হাতে কার্টুন দেখতে কিংবা মিউজিক্যাল ড্যান্স দেখতে আমরা মোবাইল এগিয়ে না দিয়ে তাকে কোরআন এর সুললিত সুরে অভ্যস্ত করে তুলি। একজন শিশু যদি ছোটবেলা থেকে ইসলামী ছায়ায় বেড়ে উঠে, তার মানসিক ভিত্তি গঠনের সময় আপনি যদি তাকে ইসলামের বিধানের প্রতি অনুরক্ত করে তুলতে পারেন, তার অপসংস্কৃতির কবলে পড়ার সম্ভাবনা কম।

~ যখন তার কিছুটা বুঝতে পারার বয়স হয়, তাকে ইসলামের স্বর্ণালী যুগের ইতিহাস জানান। তাকে তারিক বিন যিয়াদ, মুসা বিন নুসায়ের, মুহাম্মদ বিন কাসিমের জীবনের কথা বলুন। তার মনে ইসলামের জন্য ভালবাসা জাগিয়ে তুলুন। আল্লাহর বিধান কায়েমে যুগে যুগে শ্রেষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন যারা, তাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস তার সাথে গল্পের ছলে বলুন। এভাবে সে ইসলামী সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবে। পরিবার থেকে তার মাঝে ইসলামের বীজ বুনে দেন, যাতে পরবর্তীতে পাশ্চাত্য ভাবধারায় সে নিজেকে যুগের হাওয়ায় হারিয়ে না ফেলে।

~ ইসলামী গান, নাশিদ (মিউজিক বিহীন অবশ্যই) , কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামী ইতিহাস সংক্রান্ত বই এসবের প্রতি তাকে ঝোঁক তৈরি করে দিন ছোটবেলা থেকেই । ছোট শিশুরা নরম একতাল কাদার মতো, তাকে যেভাবে তৈরি করবেন, সেই আকৃতি ধারণ করবে । অতএব শিশুকাল ই হচ্ছে সেই সময়, যখন একজন সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাকারী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব!

~ সামাজিক ভাবে ও প্রচেষ্টা করতে হবে অপসংস্কৃতি রোধ করার জন্য। ইসলামকে যারা ভালোবাসেন, তারা সবার মাঝে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা ছড়িয়ে দিবেন। রেডিও, টেলিভিশন কোন অপকারী বস্তু নয়। অপকারী হচ্ছে অপশক্তি এই প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে যেসকল খারাপ কনটেন্ট প্রচার করে তা। তাই এসকল প্রযুক্তিকে ইসলামী সংস্কৃতির প্রসারে কাজে লাগাতে হবে।

মুসলমানদের চিন্তা, মননে গোলামীর জিঞ্জির পড়িয়ে অনৈতিকতার প্রসার ঘটানোর মাধ্যমে যেই কৌশল বাস্তবায়ন করতে চাইছে তথাকথিত অপশক্তি, তার বিপরীতে রুখে দাঁড়ানো জরুরি। সর্বস্তরে মুসলমানদের জেগে উঠতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে, জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চায় নিজেদের সমৃদ্ধ করতে হবে। আমাদের অনুপ্রেরনা হবে বিগত হয়ে যাওয়া দিনের আমাদের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বীরেরা।

আদর্শ হোক মা আয়েশা(রাঃ) , হোক উমর(রাঃ) । আদর্শ না হোক, চে গুয়েভারা কিংবা সুশান্ত !

আল্লাহ্‌ আমাদের ইসলামী সংস্কৃতির আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন । আমীন ।

রেফারেন্সঃ
(১) নন্দিত জাতি নিন্দিত গন্তব্যে-আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (পৃষ্ঠা-৯৯)
(২) https://islamibarta.com/article/Islamic-Literature-and-Culture/628/ইসলামী-সংস্কৃতি-ও-আধুনিক-সংস্কৃতি-একটি-পর্যালোচনা
(৩) সূরা বনী ইসরাইলঃ ৩২
(৪) সূরা আল ইমরানঃ ৮৫
(৫) সহীহ বুখারি
(৬) সুনান আবী দাউদ ও মাসনাদে আহমাদ
(৭) সূরা মায়িদা-৯০
(৮) ইসলামে হালাল হারামের বিধান- (আল্লামা ইউসুফ আল-কারজাভী)
(৯) মদ্যপানের আইন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কথাগুলো সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদি (রহঃ) এর “ইসলাম ও পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্দ্ব” বই থেকে নেওয়া।


।। শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চায় বিকশিত হোক প্রজন্ম।।


পঠিত : ৪৭৩ বার

মন্তব্য: ০