Alapon

পারিবারিক বিষয়ে কিছু কথা



প্রথমত বিবাহের আগে
বিয়ে কেন্দ্রিক আমাদের ভাইদের মধ্যে একধরনের দাবি প্রচলন আছে যে, মোহরানা কমাতে হবে। মেয়েরা মোহরানা বেশি চাইছেন তাই বিবাহ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এটা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ বিবাহ দেওয়ার জন্য কন্যার অভিভাবকদের যতটা উদ্বিগ্ন থাকতে হয় পুত্রের অভিভাবকদের অতটা নয়। অতএব তারা মোহরানার জন্য বিবাহ ঠেকিয়ে দেবে এমন প্রচেষ্টা সাধারণত সঠিক নয়।

তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
২০১৭ সালে বিয়ে করার পর অল্প-বিস্তর ঘটকালির কাজে জড়িত থাকতে হয় বাধ্য হয়ে। সেখানে দেখা যায় আমরা আমাদের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি। অনেকসময় প্যারাডক্সিক্যাল সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকি। যেমন আমার পরিবারিক অবস্থান, সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক অবস্থা ততটা ভালো নয় যতটা ভালো পরিবারে বিয়ে করতে চাই। আবার আমরা খুব ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়া ও ভালো রেজাল্টধারী পাত্রী চাই কিন্তু সেই পাত্রীকে চাকুরি করতে দিতে অনীহা প্রকাশ করি।

আমাদের করণীয়
প্রথমত নিজের অবস্থান যাচাই করা। সেই অবস্থান থেকে একটু কম অবস্থানে থাকা পরিবারের মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করা। আমার বাড়ি যদি গ্রামে হয় তবে অবশ্যই শহরের মেয়েকে বিয়ের সিদ্ধান্ত না নেওয়া। কারণ শহরের গ্রামের পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে না। অনেস্টলি বলছি, আমরা যেহেতু শহরে বড় হয়েছি তাই গ্রামে আমাদের বোনদের বিয়ে দিতে চাইনি।

যদি কোনো পরিবার মোহরানা বেশি দাবি করে এবং শুধুমাত্র এই কারণে আপনাকে নাকচ করে দেয় তবে আপনার খুশি থাকা উচিত। নাহলে ভবিষ্যতে এই স্ত্রী নিয়ে বিপদে পড়বেন। এমন অনেক পরিবার অবশ্যই আছে যারা যৌক্তিক মোহরানায় আপনার কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে। সেজন্য মোহরানা কমাতে হবে এই আন্দোলনে না গিয়ে ধৈর্য ধরুন। আল্লাহর কাছে ধর্না দিন তিনি যাতে আপনার জন্য উপযুক্ত সঙ্গীর ব্যবস্থা করে দেন।

বাংলাদেশে যেসব এলাকায় মোহরানা বেশি দিতে হয়, সেরকম এলাকাতে আমার অবস্থান। আমি কখনো দেখি নি মোহরানার কারণে বিয়ে হচ্ছে না। এই ধারণা সঠিক নয়। আর আপনি মোহরানা কম দিতে চাইবেন কেন? আপনার চেষ্টা থাকবে আপনার স্ত্রীর জন্য সর্বোচ্চ সুন্দর মোহরানা নিশ্চিত করা। যেটা দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আপনি ভালো বিয়ে করার জন্য আপনার আর্থিক সক্ষমতা বাড়াবেন। আর্থিক সক্ষমতা আসতে দেরি হলে সবর করবেন, রোজা রাখবেন। নতুবা বর্তমান যোগ্যতার আলোকে বিয়ে করবেন, এটিই উত্তম।

মেয়ের পরিবার মোহরানা ইচ্ছেমত চাইবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তাদের মেয়েকে সর্বোচ্চ ভালো স্থানে বিয়ে দিতে। তারা একইসাথে দ্বীনদার ও পয়সাওয়ালা চাইবে। এই চাওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রেও আমরা তা চেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। কারো সাথে যদি না বনিবনা হয় তবে সেখানে বিয়ে হবে না। আবার ছেলেদের ক্ষেত্রেও তারা পর্দানশীন, সুন্দরী, স্মার্ট, শিক্ষিত পাত্রী চাইবে। এই চাওয়াও কেউ বাধা দিতে পারবে না। তবে হয়তো সবকিছু নাও মিলতে আবার সব মিলতেও পারে। তবে চাওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান অনুযায়ী চাওয়াটা উচিত। তাহলে পরিবারে শান্তি আসার সম্ভাবনা বেশি।

অনেকে ফাতেমী মোহরানার প্রসঙ্গ আনেন এবং এটিকে সুন্নাত মনে করেন। এটি একটি ভুয়া ধারণা। এই প্রসঙ্গে আমার একটি আর্টিকেল আছে। কমেন্টে দেব ইনশাআল্লাহ।

আলহামদুলিল্লাহ। আমার অনেকটা প্রায় বেকার অবস্থায় বিয়ে হয়েছে। এরকম আমার মতো অনেক মানুষের বিয়ে এমন অবস্থায় হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাদের সবার পরিবারে বরকত দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ এনেছি এজন্য যে, বেকার ছেলের কাছে বিয়ে দেবার মতো কলিজাওয়ালা পরিবারও এই সমাজে আছে। নইলে অন্তত আমি ধরা খেয়ে যেতাম।

আবার বিপরীত চিত্রও আছে। যেমন অনেক পাত্রীর ঝকঝকে বায়োডাটা দেখে আমি বিনয়ের সাথে এড়িয়ে গেছি। কারণ আমার মনে হয়েছে তাদের যোগ্য পাত্র আমি নই। অনেকে আগেই শর্ত দিয়েছেন আলাদা পরিবার নিয়ে থাকার ব্যাপারে। আমি বিনয়ের সাথে এড়িয়ে গেছি। তাদের চাওয়ার কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে পারে। আমার সাথে মিলে নাই তাই এড়িয়ে গেছি। এগুলো বাদ-প্রতিবাদের বিষয় না। যেমন একটি পাত্রী পাওয়া গেছে তার বৃদ্ধ পিতাসহ থাকে। তার পক্ষে স্বামীর বাড়ি যাওয়া কঠিন। অতএব তিনি তার বাড়িতেই থাকবেন। এরকম অনেকে অনেক ব্যাপার আছে।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে বিবাহ পরবর্তী জীবন।
এখানে মূল বিষয় হলো সম্মান ও স্বীকৃতির। পরিবারের অভিভাবক হিসেবে স্বামীর ভূমিকা বেশি। তিনি তার স্ত্রীকে ভালোবাসবেন, তার কাজের স্বীকৃতি দেবেন। স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারের জন্য সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলবেন। কোনো অবস্থাতেই হেয় করে কথা বলবেন না। আর স্ত্রীর দায়িত্ব হবে তার স্বামীর খুশি-অখুশির বিষয়ে নজর রাখবেন। তার পরিবারের সাথে মানিয়ে চলবেন।

স্বামীর আরেকটি বাড়তি দায়িত্ব হলো তার বাড়িতে আসা মানুষটি তার পরিবারের অন্য সদস্যের দ্বারা মিসবিহেভের শিকার হচ্ছে কিনা সেটা খেয়াল রাখবেন, সান্তনা দিবেন। তার পাশে থাকবেন। একইসাথে স্ত্রী যদি পরিবারের অন্য কারো সাথে মিসবিহেভ করে সেটাও তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। স্বামী তার স্ত্রীর জন্যে নিরাপত্তা ও পর্দার ব্যবস্থা করে দিবেন। স্ত্রী তার শ্বশুর শাশুড়িদের খেদমতে স্বামীকে সহায়তা করবেন।

শুধু শ্বশুর শাশুড়ি নন পরিবারের সব ব্যাপারে তিনি তার স্বামীকে সহায়তা করবেন। মূলকথা একে অপরকে সম্মান ও সহায়তা করতে হবে। একইসাথে টুকটাক বিষয়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে। তবে স্বামীকেই পরিবার সুন্দরের দায়িত্ব নিতে হবে। স্ত্রী রাগান্বিত হলেও স্বামী ধৈর্যধারণ করে তা ম্যানেজ করে নিবেন। রাসূল সা. ও সিনিয়র সাহাবাদের মধ্যে আমরা এই গুণ দেখতে পাই। উমার রা.-এর মতো রাগী ব্যক্তিও স্ত্রীর সাথে কোমল আচরণ করতেন। ওনার স্ত্রী ওনাকে বকা দিলে উনি চুপচাপ ধৈর্য ধারণ করতেন। আমাদের সালাফদের এই গুণ আমাদের অর্জন করতে হবে।

আর জেনে রাখুন, মেয়ে মানুষের শরীরে বিপুল দয়া। আমরা একটু ধৈর্য ধরতে পারলেই তারা আমাদের জীবন ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে। এভাবে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ একটি সুন্দর পরিবার দান করবেন।

এরপরেও যে সমস্যা হবে না, তা না। সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। পারিবারিক ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দোয়া করতে হবে। এক্ষেত্রে সূরা কাহফের ১ম দশ আয়াত মুখস্ত ও নিয়মিত পড়লেও ফিতনা থেকে বাঁচার সম্ভাবনা আছে।

পঠিত : ২৮১ বার

মন্তব্য: ০