Alapon

ভাষা আগ্রাসন....




ভাষা আগ্রাসন আমাদের মননের জগতকে কী পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের বাবু সংস্কৃতির অনুগামী করে তুলেছে তার একটি উদাহরণ দিই। আমরা এখন অনেকেই 'জয় বাংলা' স্লোগানটি উচ্চারণ করে আত্মতৃপ্তি বোধ করি। কিন্তু আমরা জানি না 'জয় বাংলা' শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিজয় লাভ হলেও মূলত এটি একটি ধর্মীয় পরিভাষা।

আর্যরা মহাভারতের নাম দিয়েছিল- জয়। কারণ তারা বিশ্বাস করতো মহাভারত পাঠ করলে অবিদ্যাজনিত সকল সংস্কার জয় করা যায়। সুতরাং মহাভারতের অপর নাম হচ্ছে জয়। জয় শব্দটির আরেকটি অর্থ হচ্ছে মা দুর্গা। জয় শব্দটি ধর্মীয় পরিভাষা হওয়ায় আর্যরা তাদের ঠাকুর, দেবতা, দেশ, স্থান বা সম্মানিত ব্যক্তির নামের পূর্বে 'জয়' শব্দটি ব্যবহার করে মহিমান্বিত করতো। আর্যদের উত্তরসূরীরা আজো প্রেরণা লাভ করে 'জয় মা কালি', 'জয় রামজি', 'জয় হিন্দ', 'ভারত মাতা কি জয়', 'শিবাজী কি জয়', 'মহাত্মাজী কি জয়', 'মোদিজী কি জয়' ইত্যাদি স্লোগান উচ্চারণ করে।

বিশেষ ধর্মীয় পরিভাষার কারণে এ দেশের মুসলমান ও বৌদ্ধগণ এ শব্দটি পরিহার করতো।

১৯০৫ সালের পর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতারা জয় শব্দটির সাথে বাংলাকে যুক্ত করে 'জয় বাংলা' স্লোগান দেয়া শুরু করেন। ১৯৭০ -এর দশকে এসে কোনো অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে সেই শব্দটি আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ব্যবহার শুরু করেন।
..
ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী তখন বাণিজ্য মন্ত্রী ছিলেন। নিউ নেশনের এক সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,

“৭১-এ তোমরা বাঙালি হতে চেয়েছিলে, তাই আমরা তোমাদের সমর্থন করেছি। এখন দেখছি তোমরা মুসলমান হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছ। যদি মুসলমানই থাকতে চাও তাহলে পাকিস্তান ছাড়লে কেন? সে সময় মোরারিজি দেশাই হুঁশিয়ারি করে বলেছিলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ মানে আরেকটা পাকিস্তান’। এখন দেখছি মিস্টার দেশাইয়ের কথাই ঠিক।”

সত্যিই তো, ভারত আমাদের শুধু বাঙালি হিসেবে দেখতে চায়। শুধু বাঙালি হলে হয়তো ভারতের খুবই সুবিধা হয়। তাহলে আমাদের সংস্কৃতি আর পশ্চিমবাংলা সংস্কৃতিতে কোনো ফারাক থাকে না। আসলে দিল্লি মনে করে বাঙালি সংস্কৃতি মানে কলকাতার হিন্দুদের সংস্কৃতি।

'সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও বাংলাদেশ' বই থেকে বাংলাদেশের ধর্মীয় আগ্রাসনের মূলে হলো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। কিভাবে একটা দেশের সংস্কৃতির জায়গায় আরেক সংস্কৃতির স্লো-পয়জনিং চলছে, বইটি পড়ে মোটামুটি একটা ধারণা পাবেন।

পঠিত : ৯৪৫ বার

মন্তব্য: ০