Alapon

এ যেন আবরার ফাহাদের ঘটনার পুনরাবৃত্তি...



সকাল সকাল পত্রিকা ‍খুলতেই দেখলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজে এক ইন্টার্ন শিক্ষার্থীকে তারই অনেকটা বুয়েটের আবরার ফাহাদের মত করেই নির্যাতন করা হয়েছে। মেরে তার পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মাইরের চোটে ভিক্টিম যখন বার তিনেক বমি করেছেন, তখন তাকে ছেড়ে দিয়েছে। আর বরাবরের মত নির্যাতনকারীরা হল ছাত্রলীগ। আর এবার শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করা হয়নি। বরং যিনি মার খেয়েছেন তিনি নিজেও ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী।

বুয়েটের আবরার ফাহাদের কথা মনে আছে তো? মনে নাও থাকতে পারে। কারণ, ছোট্ট একটা দেশ বাংলাদেশে ইস্যুর শেষ নেই। এই এখন যেমন সবাই আল জাজিরা ও মাফিয়া ইস্যু নিয়ে মেতে উঠেছে। তেমনি এক সময় মানুষ আবরার ফাহাদ ইস্যু নিয়েও সোচ্চার হয়েছিল। আবার কালের পরিক্রমায় ইস্যুর ভিড়ে আবরার ফাহাদের কথাও অনেকে ভুলে গেছে। কিন্তু ভুলে যায়নি, আবরার ফাহাদের পরিবার ও ছাত্রলীগ। আবরার ফাহাদের পরিবার ভুলে যায়নি, কারণ আবরার তাদের রক্ত। আর যার চলে যায় সেই বুঝে হায় বিচ্ছেদের কী যন্ত্রণা! আর ছাত্রলীগ ভুলে যায়নি, কারণ তারা এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কীভাবে বিরোধী মতকে দমন করতে হয়। তা না হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে গতকাল আবরার ফাহাদের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাবে কেন?

সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, যিনি ভিক্টিম তিনিও ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী। কিন্তু তিনি বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের যে কমিটি আছে সেই কমিটির রাজনীতি করেন না। তিনি পূর্ববর্তি ছাত্রলীগ সভাপতির রাজনীতি করতেন। আর এ কারণে বর্তমান কমিটির সভাপতি সেক্রেটারি তাকে নির্যাতন করে হল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। একইসাথে বলে দিয়েছে, সে যেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশীপ কম্লিট করতে না আসে। যদি আসে তাহলে এবার আর জীবন নিয়ে ফিরে যেতে পারবে না।

তারপর ভিক্টিমকে ঢাকা মেডিকেলে জরুরী বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। ভিক্টিম নিজে যদিও একজন ছাত্রলীগের কর্মী কিন্তু তারপরও তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেওয়াটাকে নিরাপদ মনে করলেন না। তিনি সেখান থেকে কোনো এক প্রাইভেট মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে চলে গেছেন। একজন ছাত্রলীগের কর্মী হয়েও যদি তাকে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়, তবে যারা সাধারণ মানুষ তাদের কেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটাতে হয়, একবার ভেবে দেখুন।

এই ঘটনার পর যথারীতি মেডিকেল কলেজ প্রশাসন তদন্ত কমিটি ঘটন করেছে। কিন্তু তদন্তের তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। অন্যদিকে হলের প্রভোস্ট বলছেন, এই নির্যাতনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ইতিপূর্বে আরও অনেকবার ঘটেছে। এমনকি যে রুমে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেই রুমে আগেও বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে। কে জানে, আজকের যে ভিক্টিম অতীতে হয়তো সে নিজেই নির্যাতনকারী ছিল। কারণ, সে নিজেও তো একজন ছাত্রলীগ!

অনেকেই ভেবেছিল, আবরার ফাহাদের ঘটনার পর হয়তো ছাত্রলীগের বেপরোয়া ভাব কমে যাবে। এভাবে নৃশংসভাবে আর কাউকে নির্যাতন করবে না। হ্যা, এটা সম্ভব হতো যদি আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার হতো। আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের প্রথম অবস্থায় ছাত্রত্ব বাতিল করা হলেও পরবর্তিতে তাদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তারা জেলে বসেও একাডেমিক সমস্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। তার মানে তাদের একাডেমিক ক্যারিয়ার অব্যাহত আছে। আর আবরার ফাহাদের হত্যার এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচারকাজ সম্পন্ন হয়নি। এখনো নাকি জেরাই শেষ হয়নি। এই জেরা শেষ হতে হতে একসময় এই মামলাটিকে সরকার বিশেষ বিবেচনায় মুলতবি করে দিবে না, তারই বা কী নিশ্চয়তা আছে। আবার মুলতবি না করে আসামীদের ফাঁসির রায় বা লাইভ সাজা দিতে পারে। কিন্তু সেসব রায়ের পর হয়তো শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফকে যেভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার মাধ্যমে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেভাবে তাদেরও মুক্তি দেওয়া হবে। আর এ কারণেই ছাত্রলীগ এখানো বেপরোয়াভাবে অন্যায় করে যাচ্ছে।

ছাত্রলীগ কতৃক নির্যাতনসহ যে কোনো অন্যায় নির্যাতন বন্ধ করতে হলে আগে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিচার বিভাগের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে হবে। তবেই না দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বিচার বিভাগের সুষ্ঠু বিচার ছাড়া এই দেশ থেকে কোনো রাজনৈতিক অন্যায়ের কোনো বিচার হবে না।

পঠিত : ২৮৪ বার

মন্তব্য: ০