Alapon

হাদিস কি নবিজির মৃত্যুর তিনশ বছর পর লেখা হয়েছে?



অনেকে মনে করেন, নবি মুহাম্মাদ সা.-এর মৃত্যুর ২-৩'শ বছর পর হাদিস লেখা হয়। বুখারি-মুসলিমরা এসে হাদিস লেখা শুরু করেছেন। এর আগে হাদিস বোধহয় কেবল মুখে মুখে ছড়িয়েছে। তাদের এমন ধারণা মোটেই ঠিক না। এমন ধারণা হাদিসের পরিভাষা সম্পর্কে গভীর অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। যদিও হাদিস সংকলনে মুখস্থ করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তা সত্ত্বেও হাদিস মুখস্থের পাশাপাশি লিপিবদ্ধও করা হয়েছে। হাদিস মূলত নবিজি সা.-এর জীবনকাল থেকেই লেখা শুরু হয়। তবে সেটা সীমিত পরিসরে, ব্যক্তিগতভাবে। অনেক সাহাবি হাদিস লিখেছেন। তারপর তাবিয়িদের যুগে সেই লেখালেখির মাত্রা আরো বেড়ে যায়। মুস্তাফা আল-আযামির মতে, নবিজি সা.-এর মৃত্যুর পর সাহাবিদের সময়েই অধিকাংশ হাদিস লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।[১]

এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে সে-সময় লিখিত হাদিসের বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি কেন? এর কারণ, পরবর্তী হাদিসবিদেরা তাঁদের গ্রন্থে পূর্ববর্তী গ্রন্থ থেকেই হাদিস নিয়েছেন। তবে তাঁরা সরাসরি বইয়ের উদ্ধৃতি দিতেন না, বরং যে শিক্ষকের অধীনে সেই হাদিসের বই পড়েছেন তার রেফারেন্স দিতেন। শিক্ষক তাঁর নিজের শিক্ষকের। এভাবে নবিজি পর্যন্ত রেফারেন্স দেওয়া হতো। যেহেতু হাদিসগুলো পরবর্তীদের বইয়ে আছেই, তাই পূর্ববর্তীদের বইগুলো আলাদাভাবে সংরক্ষণ করার দরকার ছিল না। এসব কারণে পূর্ববর্তী বইগুলো সংরক্ষণ করা হয়নি।

তা সত্ত্বেও আমাদের কাছে সেসময়ের কিছু বই এসেছে। ড. মুহাম্মাদ হামিদুল্লাহ প্রখ্যাত তাবিয়ি হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (মৃ. ১০১ হি.) সংকলিত হাদিসগ্রন্থ 'সহিফা'র সন্ধান পেয়েছেন। তিনি ছিলেন আবু হুরায়রা (মৃ. ৬১ হি.)-র ছাত্র। হাম্মামের বইয়ে সেসব হাদিস আছে, তার সবগুলো হাদিসই ইমাম আহমাদের 'মুসনাদ' গ্রন্থেও আছে। অর্থাৎ পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিসরা পূর্ববর্তীদের সংকলিত এসব বইয়ের মাধ্যমেই হাদিস পেয়েছেন। তবে তখন শুধু বইয়ের রেফারেন্স দেওয়ার নিয়ম ছিল না। বরং নিজের শিক্ষকের রেফারেন্স দিতেন।

[১] Studies in Hadith Methodology and Literature - M. mustafa al-Azami, p. 25

~সংগ্রহ করা হয়েছে মিম্বার গ্রুপ থেকে!

পঠিত : ৫৯০ বার

মন্তব্য: ০