Alapon

কীভাবে আমরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করবো?

কীভাবে আমরা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করবো?



আল্লাহ বলেন - وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ - আর যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে, আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।(২০:৮২)

আর আমি অবিরত ক্ষমা করতে থাকবো...কাকে? যে আমার কাছে অনুতপ্ত হয়, যে আমার প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং যে ভালো কাজ করে...।

তাহলে কীভাবে আমরা আল্লাহর ক্ষমা পাব? আমরা মুখে বলবো - আস্তাগফিরুল্লাহ। আমরা বলবো - আল্লাহুম্মাগফিরলিই (হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন)। আমরা বলবো - রাব্বি আজনাবতু জানবান ফাগফিরলিই (ও আমার প্রভু! আমি গুনাহ করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিন)। আমরা বলবো - রাব্বানা জলামনা আনফুসানা ফাগফিরলানা...(হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি, আমাদের ক্ষমা করে দিন)। সুতরাং আমরা আল্লাহর কাছে এভাবে ক্ষমা ভিক্ষা চাইবো।

আমাদের রাসূল (স) বলেন - "আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক একশো বারের বেশি ক্ষমা চাই।" যদি রাসূলুল্লাহ (স) এতবার ক্ষমা চেয়ে থাকেন তাহলে আমাদের কতবার চাওয়া উচিত? তাই, সবসময় বলতে থাকুন আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ। আনাস ইবনে মালিক (রা) বলেন - "কখনো কখনো আমি গণনা করে দেখতাম রাসূলুল্লাহ (স) এর জিহ্বা ৭০ বার নড়ত এক মজলিসে, বলছেন - আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।"

তাই, আমাদেরও উচিত এই অভ্যাস রপ্ত করা। যেখানেই থাকি না কেন - গাড়ি চালাচ্ছি, কোন কিছুর জন্য অপেক্ষারত আছি, বাসায় বসে আছি, আমাদের জিহ্বা সর্বদা নড়া উচিত আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ বলে।

দ্বিতীয়ত, আমরা অন্যদেরকে ক্ষমা করে দিবো। আমরা অন্য মানুষদের ক্ষমা করতে শিখব যারা আমাদের প্রতি অন্যায় করেছে। অন্যদের ক্ষমা করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। বড় একটি ঘটনা আছে, পুরো ঘটনা বলার সময় নেই এখন, আমি আমার সিরাতের আলোচনায় এটি বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। হযরত আয়েশা (রা) এর প্রতি অপবাদের ঘটনা। খুবই কষ্টদায়ক একটি ঘটনা। খুবই যন্ত্রণাদায়ক এক ঘটনা। কিছু মানুষ আমাদের মা সম্পর্কে এমন সব কথা বলে যা তাদের বলা উচিত হয়নি। অপবাদ রটনাকারীদের মাঝে একজন ছিলেন হযরত আবু বকরের খালাতো ভাই। মানে হযরত আয়েশার দূরসম্পর্কের চাচা। (আয়েশা ছিলেন আবু বকরের মেয়ে।) তাহলে আয়েশা (রা) এর দূরসম্পর্কের এক চাচাও তাঁর সম্পর্কে অপবাদমূলক মিথ্যা ছড়াচ্ছিল।

আবু বকর (রা) তাঁর ঐ খালাতো ভাইকে আর্থিক সাহায্য করতেন, কারণ তিনি গরিব ছিলেন। তাই, যখন তিনি ‘ইফক’ এর ঘটনার সাথে তাঁর এই আত্মীয়ের জড়িত থাকার কথা জানতে পারলেন, তিনি আল্লাহর শপথ করে বলেন - "আল্লাহর শপথ! আমি এই লোকটিকে আর একটি পয়সাও দান করব না।" খুবই ন্যায্য। কেন তিনি এমন কাউকে টাকা-পয়সা দিবেন যে তাঁর নিজ কন্যা সম্পর্কে এমন অপবাদ ছড়ায়? কিন্তু এরপর কী হল? আবু বকর (রা) এর মান আমার আপনার মত নয়। আবু বকরের মান অনেক উঁচুতে। তাই, আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা আয়াত নাজিল করলেন যা আমরা আজো তিলাওয়াত করি। ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী...' আবু বকর ছিলেন প্রাচুর্যের অধিকারী।

"তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন, অভাবগ্রস্থকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা গৃহ ত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দেবে না। তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে এবং তাদের দোষ ত্রুটি উপেক্ষা করে।" লক্ষ্য করুন, এরপর আয়াত কী বলছে? أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَكُمْ - "তোমরা কি চাওনা যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন?" (২৪ঃ ২২)

হ্যাঁ, সে একটি অন্যায় কাজ করেছে। কিন্তু তুমি কি চাওনা যে আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিক? আমি আপনাদেরকে ব্যাপারটা নিয়ে একটু চিন্তা করতে আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহর শপথ! আমি আপনাদের এটা নিয়ে একটু চিন্তা করতে বলছি। এই ব্যক্তি তার নিজের মেয়ের প্রতি অপবাদ দিয়েছে। আর আবু বকর তাকে আর্থিক সাহায্য করতেন। কিন্তু, আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা বলছেন না, না, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ফেলো। তার অপরাধকে উপেক্ষা করো। তাকে সাদাকা দিতে থাকো। কেন? কারণ, তুমি কি চাওনা যে আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিক?

সুতরাং, তাকে ক্ষমা করে দিলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
-- শায়েখ ইয়াসির কাদি।

পঠিত : ৮৪২ বার

মন্তব্য: ০